দি ব্যুরো (বাংলাদেশ), দ্য অফনিউজ, কলকাতা:
আজ ৩০ মে, স্বাধীনতার মহান ঘোষক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি) 'বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম এর ৪১ তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালে আজকের এই দিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে তিনি নিহত হন। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অতুলনীয় ভূমিকার কারণে ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে আছেন জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধকালে জিয়াউর রহমানকে অধিনায়ক করে গঠন করা হয় 'জেড ফোর্স'। 'জেড ফোর্স'র অন্যতম প্রধান কাজ ছিল দেশের উত্তরাঞ্চলের স্বাধীন এলাকাগুলো নিরাপদ রাখা। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা এবং নেতৃত্বের কারনে জিয়াউর রহমানকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা বীরপুরুষ জিয়াউর রহমান। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে 'শহীদ জিয়া' হিসেবেই তিনি পরিচিত। তার পিতার নাম মনসুর রহমান এবং মা জাহানারা খাতুন। জিয়াউর রহমানের বাবা তৎকালীন সময়ে কলকাতার একটি সরকারি দফতরে কেমিস্ট ছিলেন। ভারত ভাগ হওয়ার পর তিনি করাচি বদলি হয়ে গেলে পুত্র জিয়াউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে যান। এর আগ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান কলকাতার ঐতিহ্যবাহী হেয়ার স্কুলে লেখাপড়া করতেন। জিয়াউর রহমানের ডাক নাম ছিল কমল। বগুড়া ও কলকাতায় শৈশব কৈশোর অতিবাহিত করা জিয়া শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৩ সালে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন তিনি। একজন সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও জিয়াউর রহমানের জীবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি দেশের সঙ্কটময় মূহুর্তে ত্রাণকর্তা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন বারবার এবং সঙ্কট থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন। জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে অস্ত্র হাতে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ শেষে হলে আবার সেনাবাহিনীতে ফিরে গেছেন সৈনিক জীবনে।
বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক জিয়াউর রহমান সময়ের প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তার হাতে গড়া সেই রাজনৈতিক দল আজ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ বিনির্মাণে অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসম সাহসিকতা, সততা নিষ্ঠা ও সহজ সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক জিয়াউর রহমানের অবদান অসামান্য। জিয়াউর রহমান ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন। আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ও ফোর্সেস কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বিশ্ব- মানচিত্রে তিনি বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে পরিচিত করিয়েছেন তার স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য দিয়ে। এছাড়া তিনি জাতির মর্যাদাকেও বিশ্বব্যাপী সমুন্নত করেছেন তার শাসনামলে। জিয়াউর রহমান ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার হিসেবে এবং একই বছরের অক্টোবরে মেজর জেনারেল (সেনাবাহিনী প্রধান) হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জিয়াউর রহমানের সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম প্রতিটি মানুষ আজও গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবেও তার পরিচিতি সর্বজন বিদিত। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও দিক নির্দেশনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং নানা ঘটনা প্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে সিপাহি- জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান ঘটে। দেশের সেই চরম ক্রান্তিকালে সিপাহি- জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান হাল ধরেন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বাক- ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। জিয়াউর রহমান এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন, যে দেশটি নিজের পায়ে দাড়াবে। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়েছেন। রাষ্ট্রক্ষমতার অল্প সময়ে একটি সত্যিকার গণতন্ত্রের শক্ত ভিতের ওপর জাতিকে দাড় করাতে চেয়েছিলেন তিনি। জাতির মধ্যে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে তাদের জাগিয়ে তুলতে সফল হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান তার নানাবিধ অমর কীর্তিতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে। শহীদ জিয়াউর রহমান যে কতখানি জনপ্রিয় ছিলেন তা বোঝা গিয়েছিল তার নামাজে জানাজায় মানুষের ঢল দেখে। পরদিন পত্রিকায় শিরোনাম ছিলো 'একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ'।
(www.theoffnews.com - Bangladesh Ziaur Rahman)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours