তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, পাইকপাড়া, কলকাতা:
উপরওয়ালা বলে কিছু আছে কি? বেশির ভাগ মানুষ বলবেন যে আছে, মানে একজন কেউ আছেন যিনি ওপরে থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করেন।
আপনার জীবন বা প্রাণ নির্ভর করে গাছ ও গাছালির ওপর যার শিকড় মাটির নিচে আছে। কেউ কি বলতে পারেন আকাশের কোনটা উঁচু আর কোনটা নিচু? তবে কেন উপরওয়ালা বলছেন? আমরা নিচে মানে মাটিতে আছি বলে উপরওয়ালা বলি। আসলে নিচওয়ালা কথাটা যুক্তি যুক্ত, বাস্তবিক ও জীবন্ত।
ঈশ্বর বা ভগবান যে নামেই ডাকুন সেইটা আছে এই মাটির পৃথিবীতে, মানুষই ঈশ্বর আবার মানুষই শয়তান হতে পারে। এদেশে সনাতন ভারতীয় বা হিন্দুদের কাছে ঈশ্বর কোনো অতিপ্রাকৃত ঘটনা নয়, মানুষ শেষ কথা। যা কিছু আপনার জীবনে ঘটছে সবই আপনার কর্ম ফলের প্রতিফলন, কোনো বাহ্যিক শক্তি নয়।
অনেকে বিস্বাস করেন সৃষ্টি কর্তা একজন আছেন, যিনি বাইরে থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করেন। যদি কেউ সত্যি থাকেন তাকেই বা সৃষ্ঠি করেছেন কে? এর কোনো উত্তর কোন ধার্মিক মহাপুরুষ দিতে পারেননি বা না আছে এর ব্যাখ্যা কোনো গ্রন্থে।
আসলে আমাদের নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই তাই বাহ্যিক শক্তির দ্বারস্থ হই। তাই সনাতন ভারতবর্ষে মুনি ঋষিদের একটাই প্রশ্ন ছিল, আমি কে? নিজেকে জানা। আপনার নিয়ন্ত্রণ আছে আপনার হাতেই কিন্তু আপনি জানেন না বা অসচেতন। তাই আমরা দেব দেবীর কৃপার ওপর নির্ভর করি বা শরণাগত হই। বিজ্ঞানীদের মতে জগৎ বা ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয়েছে প্রকৃতির নিয়মে কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই, আবার কেউ বলেন এই সৃষ্ঠি একটি দুর্ঘটনা বা একসিডেন্ট কিন্তু কোনো তৃতীয় শক্তি নেই। যাই হোক বুদ্ধ, চৈতন্য, রামকৃষ্ণ, রবীন্দ্রনাথ সবাই মানুষকে শ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়েছেন। বিভিন্ন ভাষায় ও রূপে একই কথা উনারা প্রকাশ করেছেন।
তাই জাত পাত ধৰ্ম নয়, মনুষ্যত্ব মূল ব্যাপার, আর যার মনুষ্যত্ব চেতনার উচ্চ স্তরে পৌঁছেছে সেই ঈশ্বর, যে প্রকৃতির মতো নিরপেক্ষ ও স্থির। হিন্দুধর্ম দর্শন অনুসারে ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্যকে ভগ বলে। ভগ যাঁর মধ্যে পূর্ণরূপে আছে তিনিই ভগবান।
(www.theoffnews.com - supreme he)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours