রুকসানা হক, লেখিকা ও কবি, বাংলাদেশ:

একটি শিশুর বেড়ে ওঠা, সুশিক্ষা লাভ, সভ্য এবং মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন হওয়ার প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গন তার পরিবার তথা মা-বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য। আমাদের দেশে একটি শিশুর প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত যে কোন মন্দ কাজে প্রথম বাধাটি আসে তার পরিবার এবং সমাজের অভিভাবক শ্রেণী থেকে। তাদের শাসন-বারণ শিশুটিকে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পন্ন সুপথে চলতে সহায়তা করে। এটাই আমাদের পরিবার ও সমাজের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। 

সময়ের সাথে সাথে জীবনযাপনের ধরণ বদলে যাওয়ায় শিশুর বেড়ে ওঠার মৌলিক এই প্রক্রিয়া অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়। তাতে পারিবারিক ও সামজিক শাসনের বিষয়টিও শিথিল হয়ে পড়ে। শিশুর মনোবিকাশের দোহাই দিয়ে অনেকক্ষেত্রে তাকে একগুঁয়ে স্বভাবের ও মনোবৈকল্যগ্রস্ত করে ফেলা হয়। ফলে তার মাঝে লোভ হিংসা বিদ্বেষ একটা স্থায়ী আসন গড়ে নেয়। 

আমাদের সমাজে এখন এমনসব লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে চলছে যা কল্পনাকেও হার মানায়। পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে অনিয়ন্ত্রিত জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ। সন্তানের বেপরোয়া চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ আজ অভিভাবকগণ। তার পরিণতি যে কতোটা করুণ হয়ে দেখা দিচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

কেন এই অস্থিরতা, কেন এতো লোভ, এতো উচ্চাকাঙ্খা, কেনই বা এতো ভোগবাদী মানসিকতা তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। সময় এসেছে নিজের সন্তানদের প্রতি অনেক বেশি যত্নবান হওয়ার। সন্তানের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, উশৃংখল চলাফেরার জন্য প্রাথমিকভাবে তার অভিভাবকগণ যে দায়ী তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

অত্যধিক স্নেহের প্রশ্রয়ে সে যেন মানুষ হবার বদলে অমানুষ না হয়ে ওঠে তা কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখা উচিত। নিজের সন্তান কথা শুনে না এধরণের আহ্লাদিপনা অনুভব পিতামাতার জন্য কোন গৌরবের বিষয় নয় বরং এটা অপমানজনক। 

সামাজিক অপরাধগুলো জন্ম নেয় উশৃংখল আচরণ থেকেই। অভিভাবকের গোচরে কিংবা অগোচরে হুটহাট ঘর থেকে বেরিয়ে পড়া, যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো, সন্তানকে অমঙ্গলের পথেই হাতছানি দেয়। বাড়তে থাকে খুন রাহাজানি কিংবা ধর্ষণের মতো লোমহর্ষক ঘটনাগুলো। খুনী পিশাচেরা তাদের রক্তাক্ত হাত হ্যান্ডওয়াস ছাড়াই ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে পারে।

এ সমাজ এখনো তাই নারীবান্ধব হয়ে ওঠেনি। আমাদের নির্লজ্জ ইতিহাস বলে এসমস্ত মৃত্যুর সীমানা গোরস্থান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কিছুদিন বিচার চেয়ে মিডিয়াগুলো কিংবা জনগণ তৎপর থাকবে, কবিতা গল্প ছবির প্লট খুঁজে নেবে শিল্পসাহিত্য, অতঃপর সব নীরব। 

এবার আসি কেন এই দুরাচারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে পুরো সমাজ কাঠামো। আমাদের এ বুর্জোয়া অর্থনীতির চাকা যারা সহস্র বছরের জন্য লিজ নিয়ে বসে আছে তাদের কাছে এমন দু'চারটা অপরাধ কোন আতঙ্কের বিষয় নয়। তাদের বেড়ে ওঠা ন্যায়নীতি ও মূল্যবোধের পিঠে লাথি দিয়েই। প্রতিনিয়ত তাদের পায়ের তলায় পিষ্ট হয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির মেরুদন্ড। 

তারা পারিবারিক বা ধর্মীয় শিক্ষার তোয়াক্কা করে না। তাদের কাছ থেকে সুশীল আচরণ আশা করা বৃথা। যতদিন এই বৈষম্যের সমাজ থেকে আমরা বের হতে পারবো না ততদিন এসব ঘটনা ঘটতেই থাকবে আর আমাদেরকে শুনতে হবে এসব কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা। 

এর দায় কখনোই সমাজ নেয়নি এবং নেবেও না। অতএব নিপীড়িতদের আর একটু বেশি সচেতনতার অবকাশ থেকেই যায়। নিজেদের লোভ লালসা নিয়ন্ত্রণে রেখে নিজেদের সুরক্ষার চেষ্টা নিজেদেরকেই করতে হবে। আমাদের মেয়ে সন্তানদের জন্য আমরা একটি নিরাপদ গ্রহ চাই যেখানে তারা নিজেদের মূল্যবোধ ধারণ করে স্বচ্ছন্দে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। 

জানিনা কবে সে সুদিন আসবে। হয়তো আসবে কিংবা কোনদিনই আসবে না। আজন্ম বৈষম্য আর সহিংসতার শিকার নারী সমাজের মুক্তি এখন হয়তো রূপকথার গল্পের মতো কাল্পনিক চিত্র।

নারীখেকো হায়েনার থাবা থেকে আদৌ মুক্ত হবে কিনা নারীর আকাশ কেউ জানে না। 

(www.theoffnews.com - Bangladesh women)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours