বিভা ভট্টাচার্য, লেখিকা ও অধ্যাপিকা, কলকাতা:

আনুমানিক ৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে গ্রিসের উপকূলীয় অঞ্চল ক্রীটে মতান্তরে সিসিলিতে থিওডোরা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অ্যাকাসিয়াম কনস্টান্টিনোপলের একটি সার্কাস দলের ভাল্লুক প্রশিক্ষক ছিলেন। থিওডোরা সেই সার্কাস দলে প্রথমে নর্তকী হিসেবে যোগদান করেছিলেন, পরে অভিনেত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। সেই সময় বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে অভিনেত্রী বা নর্তকীর পেশা খুব একটা সন্মানজনক ছিল না। ষোল বছর বয়সে তিনি একটি দলের সাথে নর্তকী হয়ে উত্তর আফ্রিকা যান, পরবর্তী চার বছর তিনি সেখানেই ছিলেন। আফ্রিকা থেকে কনস্টান্টিনোপল ফেরার পথে তিনি কিছুদিন মিশরের রাজধানী আলেকজান্দ্রিয়ায় অবস্থান করেছিলেন। আলেকজান্দ্রিয়ায় থাকাকালীন খ্রিস্টধর্মের একটি শাখা মনোফিজিটিজম এর প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। এই শাখাটি প্রকৃতির ওপর বেশি গুরুত্ব দিত, এদের কাছে যীশুখ্রিস্ট কোন মানুষ নয়, স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন। এই ধর্ম গ্রহণের পর থিওডোরা অভিনেত্রীর পেশা ত্যাগ করে রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে উল বয়নকারী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। 

কনস্টান্টিনোপলে থাকাকালীন জাস্টিনিয়ানের সাথে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁর সৌন্দর্যে ও বুদ্ধিমত্তায় আকৃষ্ট হয়ে জাস্টিনিয়ান তাঁকে ভালোবেসে বিবাহ করতে চান। তিনি ছিলেন তৎকালীন রোমান সম্রাট জাস্টিনের ভাতুষ্পুত্র। রোমান আইন অনুসারে একজন সেনেটর একজন অভিনেত্রীকে বিবাহ করতে পারতেন না। কিন্তু সম্রাট জাস্টিন এই সময় আইনের সংশোধন করেন এবং জাস্টিনিয়ানের সাথে থিওডোরার বিবাহ সম্পন্ন হয় ৫২৫ খ্রিস্টাব্দে। বিবাহের পর তিনি অগাস্টা উপাধি গ্রহণ করেন।

থিওডোরা ছিলেন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ। ৫৩২ খ্রিস্টাব্দে কনস্টান্টিনোপলে একটি ভয়াবহ দাঙ্গা হয়। জাস্টিনিয়ানের পরামর্শদাতারা সম্রাটকে রাজধানী ত্যাগ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু থিওডোরা তাঁর উদ্দীপনামূলক বক্তৃতার মাধ্যমে সম্রাট এবং সেনাবাহিনীর মনোবল ফিরিয়ে আনেন। সম্রাট এরপর কঠোর হাতে এই বিদ্রোহ দমন করেছিলেন। এরপর থেকে জাস্টিনিয়ান রাজদরবারে থিওডোরাকে সাথে নিয়ে রাজসভা পরিচালনা করতেন। তাঁর পরামর্শ ছাড়া জাস্টিনিয়ান কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন না। থিওডোরা প্রকৃতপক্ষে একজন সাম্রাজ্ঞী হয়ে উঠেছিলেন।

দাঙ্গা বিধ্বস্ত কনস্টান্টিনোপলকে নতুন করে গড়ে তোলা এবং বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুন্দর শহরে পরিণত করার কৃতিত্ব সম্রাট জাস্টিনিয়ানের সাথে থিওডোরারও প্রাপ্য। নারী যাতে সম্পত্তির মালিক হতে পারে, সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারে সে বিষয়ে থিওডোরার উদ্যোগে আইন পাস করা হয়েছিল। নারী বিবাহবিচ্ছেদের স্বীকৃতি পেয়েছিল, ধর্ষকদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। খ্রিস্টিয় পঞ্চম শতাব্দীতে আইন পাস করে নারীর মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল থিওডোরার আগ্রহ ও উৎসাহে।বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের নারীদের অধিকার ইওরোপের যেকোন অঞ্চলের নারীর অধিকার থেকে অনেক বেশি ছিল। 

৫৪৮ খ্রিস্টাব্দে কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পরে আরও কুড়ি বছর সম্রাট জাস্টিনিয়ান শাসন করেছিলেন থিওডোরার আদর্শকে সামনে রেখে। থিওডোরা প্রকৃতপক্ষে একজন সাম্রাজ্ঞী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে জাস্টিনিয়ানের ন্যায় তিনিও খ্রিস্টান চার্চ কর্তৃক সেইন্ট উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।

(www.theoffnews.com - Thiodora)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours