সুজাতা দাস, লেখিকা ও সমাজকর্মী, কলকাতা:

পেয়ে হারানো আর হারিয়ে পাওয়ার মধ্যে একটা অন্তর বা ব্যবধান থাকে। যা অনুভূত হয়, মন মানে, মস্তিষ্কের নিউরোনে হরমোন প্রবাহের ফলে।

মানব শরীরের প্রয়োজনে যে যে হরমোন নির্গত হয় শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখতে, তার কোনও একটি কাজ বন্ধ করলেই শরীরে হেলদোল লেগে যায় তখন বাইরে থেকে মেডিসিন নিতে হয় ব্যালেন্স করতে।

আমরা ভালোবাসা প্রকাশ করি মন বা হৃদয় থেকে, এটাই বলি যে "তোমাকে মন থেকে ভালোবাসি", কিন্তু হৃদয় বা হার্টের কাজ ভালোবাসা নয়, তার কাজ হলো রক্তকে পিউরিফাই করা অর্থাৎ ফুসফুস যে অক্সিজেন প্রশ্বাসের মাধ্যমে রক্তে নিয়ে আসে সেটা শরীরের সমস্ত অংশে ঠিক মতো সরবরাহ করা এবং শরীরের কার্বন ডাই অক্সাইডকে নিঃশ্বাস এর মাধ্যমে বাইরে পাঠানো।

তাহলে কাউকে ভালোবাসলে বা কারও জন্য হঠাৎই মন কেমন করে উঠলো অথবা কাউকে পাওয়ার আকাঙ্খা তৈরির কারিগর কে?

"Oxytocin Hormone" যা Love or Bond Hormone নামে পরিচিত, যে আমাদের অজান্তেই ভালবাসা ছড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে। এটি মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে তৈরি হয় এবং পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসরন হয়।মনোবিজ্ঞানীদের মতে একজন মানুষ কারও প্রতি আকৃষ্ট হতে চার মিনিট নব্বই সেকেন্ড সময় নেন, সেই সময় ব্যক্তিটির মস্তিষ্ক পঞ্চান্ন শতাংশ বিপরীত জনের রূপ, আটত্রিশ শতাংশ কন্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গি আর মাত্র সাত শতাংশ তার বক্তব্য শোনে। এরকমই যখন কোনও মানুষ অন্যের প্রতি আকর্ষিত হন, তখন তার শরীরে ডোপোমিন হরমোনের মাত্রা বাড়ে। ফলে হৃদস্পন্দন বাড়ে। আর সেরোটোনিন হরমোন ভালোলাগার অনুভূতির সৃষ্টি করে যখন সম্পর্কে জড়ায়। অক্সিটোনিনের নিঃসরন হয় ভালোবাসার স্পর্শে এবং বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে।

আসলে যখন মানুষ প্রেমে পড়ে তখন আগের তুলনায় অনেক শান্ত হয়ে যান। মানে সেই সময় মানুষটির মধ্যে প্যারাসিম্ফেথিটিক অ্যাক্টিভিটিস বাড়ে ফলে বিপরীত মানুষটির সাথে ভালো ব্যবহার ও সদাচরণ বাড়ায়। এক কথায় প্রেমে পড়লে বা মনে প্রাণে ভালোবাসলে ব্রেনে পিরোটরিন ও অ্যান্ডোরফিনস নিঃসরণ করে, ফলে মন ভালো  হয়ে যায়।

গুনগুন করে গান গাওয়া, নিজেকে নিজের মধ্যে নিমজ্জিত করা পারিবারিক ও সামাজিক সামঞ্জস্যতা ফিরিয়ে আনা ভালো ব্যবহার এসবে সাহায্য করে।

ভালোবাসা জরুরি একজন মানুষের জন্য তার থেকেও জরুরি তাকে পরিচর্যার দ্বার টিকিয়ে রাখা যার নাম বিশ্বস্ততা। ভালোবাসা বা প্রেমে জড়ানোটা বড় কথা নয়। বড় কথা তাকে টিকিয়ে রাখা আগলে রাখা ও বিশ্বস্ততার সাথে সেই সম্পর্ককে পালন করা।

মানব জীবনের হরমোনের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এর সঠিক কার্যে মানুষ যেমন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করে তেমনি এর কম বেশি নিঃসরণে অস্বাভাবিকতা বেড়ে যায়। 

যাই হোক ভালোবাসা থাকুক সবার মধ্য সাথে থাকুক সন্মান ও সহমর্মিতা।

(www.theoffnews.com - love hormone bond hormone oxytocin hormone)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours