মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:

চৈত্র শেষের হাওয়া গায়ে মেখে বাবা ভোলানাথ জাত পাতের বিভেদ ভুলিয়ে গাজনের নৃত‍্য গীতে মেতে ওঠেন। চড়কের আগুন ভাঙা, বাণফোঁড়া ইত‍্যাদি নানান লোকাচারের দ্বারা ভোলেনাথকে তুষ্ট ক‍রার অসীম প্রচেষ্টা চলে অথচ তিনি কেবল ভক্তিতেই তুষ্ট। আসলে আত্মপীড়নের মাধ‍্যমে  গাজন সন্ন‍্যাসীরা নিজেদের বৈরাগ‍্যের পরীক্ষা নেন। এদিকে তার আগে বাংলার মায়েরা নীল ষষ্ঠীর বাতি জ্বেলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ঊণকোটি চৌষট্টি কাজের মধ্যে দিয়ে সংসারের মঙ্গল কামনায়। এভাবেই দুই বাংলায় মন্দিরের ঘন্টার সাথেই মিশে যায় পবিত্র রমজান মাসের প্রার্থনার ধ্বনি। একটি বছর শেষ হয়ে এইভাবে। নতুন দিনের শুরু হয় নতুন বছরের শুভ সূচনার মধ্যে দিয়ে। চৈত্র সংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখ বা পয়লা বৈশাখ আপামর বাঙালির জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সংক্রান্তির পুজো শেষে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটিতে বাঙালি নতুন পোশাকে সাজে। গ্ৰামবাংলার মানুষজন এই দিন  পান্তাভাত, নানাকরম মিষ্টি, নোনতা খাবার ও মরশুমী ফলে রসনা তৃপ্তি করে। এছাড়াও পয়লা বৈশাখের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল 'হালখাতা' যা আমাদের কাছে বেশ উদ্দীপনার বিষয় ছিল ছোটবেলায়। দোকানে দোকানে ওই দিন ব্যবসায়ীরা তাদের সারাবছরের দেনা পাওনার হিসেব করে নতুন খাতা খোলেন। যারা ঋণ নিয়েছিলেন তারা তাদের পরিবারের ছোটদের নিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরে দেনা শোধ করে মিষ্টি মুখ করে বাড়ি ফেরেন। সাথে থাকে নতুন বাংলা ক্যালেন্ডার। আজকাল যদিও ইংরেজি ক্যালেন্ডারের দাপটে বাংলা ক্যালেন্ডারের একটু কোণঠাসা অবস্থা তবুও পয়লা বৈশাখের দিন বাঙালির বাংলা ক্যালেন্ডার চাই-ই চাই। আর চাই নতুন পাঁজি বা পঞ্জিকা।

তাই পয়লা বৈশাখ নববর্ষের শুরুর এক আনন্দ উৎসবের দিন। কিন্তু সেই আনন্দ বর্তমানে রাজনৈতিক গুন্ডারাজের দৌলতে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। সোনার বাংলায় যেখানে চাষীর ঘরের লক্ষী মেয়ে বৌরা সরল হাসি নিয়ে সমাজের শ্রীবৃদ্ধিতে রত ছিল আজ সেখানে শুধুই ভয়। যে কোন মুহুর্তে ধর্ষিত হয়ে যাওয়ার ভয়। আজ বাংলা রক্তাক্ত। আট থেকে আশি সব মেয়েরাই এখন ভোগ‍্যপন‍্য। দলের দন্ডমুন্ডের কর্তা কর্তৃদের অঙ্গুলিহেলনে ধর্ষক ছাড়া পেয়ে আঁচলের আশ্রয় নেয় আর ধর্ষিতার পরিবার হয় একঘরে।

প্রতিবাদ করলে তাকে দমন করার চেষ্টা চলে। এ কোন  বাংলা? এ কোন নববর্ষ? নারীদের দমনপীড়ন লাঞ্ছনার মধ্যে দিয়ে কি করে আসবে 'শুভ নববর্ষ'? 

প্রশ্নগুলো বড় ভাবায়। বাংলা নববর্ষের সূচনায় আজ দেশের তথা বাংলার মেয়েরা অসুরক্ষিত ঘরে ও বাইরে। বড় অন্ধকার চারিদিকে। একটা প্রদীপে সে অন্ধকার ঘুচবে না। চাই দেশের সব মহিলাদের ঐক‍্যবদ্ধ ভাবে এক হাতে অস্ত্র অপর হাতে জ্বলন্ত মশাল নিয়ে প্রতিবাদ। অত‍্যাচারীর রক্তে ধুয়ে যাক পুরনো গ্লাণি।  

ঘুচে যাক সব কালো। আলোয় ভরুক আমাদের দেশ, আমাদের বাংলা। সেই সুদিনের আশায় সবইকে জানাই শুভ নববর্ষ। শুভমস্তু।

(www.theoffnews.com - Suva nababarsha)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours