সুজাতা দাস, লেখিকা ও সমাজকর্মী, কলকাতা:

একটা জীবন, খুবই কম সময় বোধহয় মানুষের জন্য। এই সময়টা একটু ভালো ভাবে কাটাতে আমরা মানুষেরা কত কিছুই না করে থাকি। তবু আমরা না ধরতে পারি শান্তিকে না ধরতে পারি সুখকে। বড়ই পিচ্ছিল এরা, ধরেও ধরা যায় না, যেন মরীচিকা, তাই ধরে রাখতে পারি না কিছুতেই শুধুই হারিয়ে যায়। নিরন্তর এই খেলায় আমরা হারছি প্রতিনিয়ত, তবু ছুটছি জেতার জন্য অবিরাম অনিশ্চয়তাকে সাথে নিয়ে।

আমি পুনর্জন্মে বিশ্বাসী নই আর জন্মান্তরেরও সাধ নেই, আর যদি থেকেও থাকে তাতে আমার কিছুই আসে যায় না কারণ আমি এই জন্মেই আমার সবকিছু ভোগ করতে চাই--- সেটা যেমন শাস্তি তেমন ভালো কিছুও।

এই ছোট্ট জীবনে ভালো কিছু করার অনেক বাসনা মনে রেখেছি তবে সাধ থাকলেও সাধ্য কম--- আর সহায়তা ছাড়া একা করা সম্ভবও নয়, তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাবো, হয়তো একদিন মিলে যাবে সাধ আর সাধ্য কথাটা।

জীবনের তৃতীয় ধাপে এসে সবার সাথে নিজেকেও খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে নিজেকে একবার ফিরে দেখবার, যদি কখনও সম্ভব হয় তবে সেই বাড়িটা খুঁজবো, যেখানে মুখরিত হতো অনেক মানুষের গুঞ্জন খুঁজবো সেই রুগ্ন ডানপিটে মেয়েটাকে যে হারিয়ে গিয়ে একা রাস্তা খুঁজে চলেছে আজও- বাড়িটা আজ ফাঁকা পড়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে মানুষ গুলোকে হারিয়ে, তবে জড়িয়ে আছে স্মৃতিগুলোকে আগলে মুখ থুবড়ে পড়ার অপেক্ষায়। এই ভাবনাগুলো পুরোটাই অবাস্তব আর কল্পনাপ্রসূত তাই পূরণ হবার নয়।

তবে বেঁচে থাকতে চাই মানুষের অন্তরে প্রতীক হয়ে, যদি ভুল করেও ভালো কাজ করে থাকি তবে আশা রাখি হবে হয়তো আশা পূরণ মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার। যা আমাকে নিয়ে যাবে অনেক দুর যা চাই আমি সদাসর্বদা মনেপ্রাণে।

জীবনের একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছানোর পর পিছনে তাকিয়ে দেখার আর প্রয়োজন পড়ে না- তখন নিজের একা চলতে শেখাটা খুব জরুরী। আসলে জীবন একটা সময় এমন জায়গায় এনে দাঁড় করিয়ে দেয়, সেখান থেকে পিছনের সব কিছুই আবছা মনে হয়। 

একদিন হঠাৎই দেখা যায় নিজের আশা আকাঙ্খা দিয়ে তৈরি ইমারত পুরোপুরি বালির তৈরি, সামান্য আঘাতে অথবা ঝোড়ো হাওয়াতে সমস্ত কিছুর পরিসমাপ্তি ঘটে--- অনেক চেষ্টা করেও সেই বালির ঢিপি থেকে আর ইমারত তৈরী সম্ভব হয় না কখনও।

তারপর নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে চলতে শিখতে যে পরিশ্রম প্রয়োজন তা দেবার মতো ক্ষমতা আর থাকে না- শুধু ধ্বংস স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে পিছনের আবছা অবয়বকে দেখা ছাড়া। ভাবনারা এক অবাস্তব ও হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরী করে যা নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না- এটাই বোধহয় জীবন, যা ভাবনায় পর্যবসিত হয়ে রঙিন আলো দেখায় অজান্তেই।

(www.theoffnews.com - human life reality unreality)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours