দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
বাবা সমিরুদ্দিন সেখ ও মা হাসিবা বিবি। বাড়ি নলহাটির বারা মির পাড়া। তাদের তিন মেয়ের মধ্যে দুই যমজ মেয়ে মূক বধির। মঙ্গলবার পরীক্ষার শেষে মুক্তির আনন্দ। ভাগ করে নেবে তিন বোন মিলে। সেটা কি করে সম্ভব। অবাক হওয়ার মত ঘটনা হলেও, বড় বোন তাজমিরা খাতুন এবং দুই ছোট যমজ বোন সুমি ও রুমি খাতুন যখন এক সঙ্গে সময় কাটায় বোঝার কোনও উপায় থাকে না, কে মূক কে বধির!
শুধু পড়াশোনা নয়, খেলাধুলা নাচ সব কিছুতেই রুমি ও সুমি স্কুলের সেরা। রাজ্য সরকারের পুরস্কারও পেয়েছে তারা। রুমি সুমি লোহাপুর বারা চারুবালা গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী। তাদের পরীক্ষার সিট পড়ে নলহাটির এম আর এম হাইস্কুলে। এই স্কুলের সহকারী শিক্ষক গোপাল দাস এবং চারুবালা গার্লস স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুমিত্রা খান খুবই প্রশংসা করেন এই দুই পরীক্ষার্থীকে নিয়েই। প্রধান শিক্ষিকা সুমিত্রা খান বলেন, যেদিন থেকে রুমি ও সুমি আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়, ওরা আমাদের খুব প্রিয়। সাধারণ ছাত্রীদের সাথে ওদের পঠন পাঠন চলত ঠিকই। তবে ওদের জন্য নির্ধারিত বিশেষ শিক্ষিকার কাছ থেকে কৌশল শিখে নিয়ে বাকি শিক্ষিকারা ওদের পড়াতেন। পড়াশোনা ছাড়াও খেলাধুলো দৌড়, নাচ এবং অঙ্কন প্রতিযোগিতায় ওরা সেরা। মা হাসিবা বিবি বলেন, ওদের চিকিৎসার জন্য অনেক ডাক্তার দেখিয়েও কিছু হয়নি। কিন্তু ওরা যখন খেলাধুলা, নাচ, শশী পাঁজার কাছ থেকে কন্যাশ্রী পুরস্কার নিয়ে আমার হাতে তুলে দেয়, আনন্দে আমার চোখে পানি চলে আসে। পাড়ার বিয়ে থেকে ইদের সাজগোজে মেহেন্দি পরানো, মাথার চুল বাঁধা সব কিছুর জন্য সবাই ওদের কাছে আসে। ওরা বাড়ির সব কাজ পারে। রান্না, কাপড় কাচা সব। সব সময় ওরা বোঝাতে চেষ্টা করে ওরা আর পাঁচজনের মতই স্বাভাবিক।
একটু থেমে হাসিবা বিবি বলেন, জানেন! ওদের কথা বলার খুবই চেষ্টা। কথা বলতে পারার অধিকার অর্জন করতে চায় ওরা। তাই এতদিনে দুই অক্ষরের শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। একটু থেমে থেমে খুব কষ্ট করে বলতে পারে- "মা! আব্বা! ভাত খাব।" শুনে আমাদের চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে। ওদের স্বপ্ন ওরা অনেক বড় মানুষ হবে।
(www.theoffnews.com - twin sisters examination Birbhum)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours