মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার ও লেকচারার, আহমেদাবাদ:

অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের প্রায় ৯০কিমি উত্তরে পূর্বঘাট পর্বতমালার মাঝে অনন্তগিরি পর্বতের ভিতর বোরা কেভস, আর নীচে বয়ে চলেছে গোষ্ঠানী নদী। স্থানীয় লোকেদের কথায় পাহারের গায়ে গরু চরাচ্ছিল আদিবাসীরা, একটা বড় গর্তের (উড়িয়াতে বোরা হল গর্ত) মধ্যে কি করে যেন একটা গরু পড়ে যায়, আর নদীতে ভেসে যায়-- তখন স্থানীয় লোকে খুঁজে পায় এই বিশাল ভারতবর্ষের গভীরতম গুহা বোরা কেভকে। বোর্ডে যদিও লেখা ১৫০ লক্ষ বছর পুরনো এই গুহা আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ জিওলজিস্ট উইলিয়াম কিং,--সময় ১৮০৭ সাল। গুহার ওপর দিয়ে চলেছে ডি বি কে মানে দন্ডকারণ্য –বোলানগিরি - কিবুর ট্রেন ট্র্যাক, আর গুহার গহ্বরে বয়ে চলেছে ঝিরঝির করে গোষ্ঠাণী নদী। চারিদিকে সবুজে ভরা পার্বত্যরাজি চোখ মন জুড়িয়ে দেয়। হবে নাই বা কেন সারা বছর জল থাকে যে গোষ্ঠাণীতে, তাছাড়া ছোট ছোট নদীরা পাহাড়ের গা বেয়ে এসে মিশেছে গোষ্ঠাণীর সাথে।

নদীর জলের হিউমিক অ্যাসিড পাহাড়ের লাইমস্টোনের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে তৈরী করেছে স্ট্যালাগমাইট, যা মাটি থেকে ঢিবির মত ওপর দিকে উঠছে আর বর্শার ফলার মত গুহার ছাদ থেকে নেমে আসছে স্ট্যালাসাইট। ক্যালসিয়াম কার্বোনেট আর বাই কার্বোনেটের  নিরন্তর এই রূপান্তরের ফলেই সৃষ্টি স্ট্যালাগমাইট আর স্ট্যালাগসাইট। তাই দিয়ে বিভিন্ন আকৃতির মুর্তি, কখনও মা ও শিশু, কখনও হর পার্বতী, কখনও কুমীর বাঘ সিংহের মুখ আবার কখনও বা তা দেখতে হুবহু  মানব ব্রেণ।গুহাতে ক্যালসিয়াম আয়রন বক্সাইট, মাইকা ছাড়াও  নানান আকরিক ছড়িয়ে আছে--- এই গুহা ট্রেক করা মানে প্রায় ৩৫০ মিটার অতিক্রম করা, তবে একদম শেষে আছে স্বয়ংভু শিব লিঙ্গ আর হলুদ জলধারা।

এই গুহায় প্রত্নতাত্তিক খনন কার্যের সময় প্যালিওলিথিক যুগের আনুমাণিক ৩০০০০ থেকে ৫০০০০ বছর আগের মানব বসতি, পাথরের যন্ত্রপাতির সন্ধান মিলেছে। এককালে এই পাহাড়ী অঞ্চল ছিল জটাপু, পূর্জা কান্দাডোরা, নুকাডোরা,  বাল্মিকী ইত্যাদি উপজাতি অধ্যুষিত। এখন  ছোটনাগপুর ছত্তিশগড়ের বস্তারে বেশিরভাগ আদিবাসীরা ছড়িয়ে গেলেও প্রতি বছর শিবরাত্রিতে প্রচুর আদিবাসী জড়ো হন বোরা কেভে তাদের পরমপুজ্য দেবতা দেবাদিদেবের পুজো করতে। ওই হলুদ জলের ধারা তাদের মতে সীতা মাইয়ার পা ধোয়াজল, দন্ডকারণ্য পর্বতে থাকার সময় এই গুহায় থাকতেন সীতা মাইয়া, গুহার শেষপ্রান্তে  ছিল তার শোবার ঘর। 

গুহার সামনেই বিক্রি হচ্ছে ব্যাম্বু চিকেন, বাঁশের খোলে চিকেন পুরে কাঠ কয়লার ঢিমে আঁচে হতে থাকে। গুহায় ঢোকার আগে অর্ডার দিলে ফেরার সময় তৈরী। চারিদিকে আজও বানরসেনা প্রচুর, ভালবেসে দিলে কখনও ডাবের শাঁস খাচ্ছে আবার কখনও কখনও ছিনিয়ে নেবার চেষ্টাও আছে। সব শেষে বলতে পারি  ভাইজ্যাগ গেলে বোরা কেভস না দেখলে কিন্তু আক্ষেপ থাকবে।ভালভাবে দেখতে গেলে হাতে দুঘন্টা সময় রাখলে ভাল।

(ছবি সৌজন্যে প্রতিবেদক স্বয়ং)

(www.theoffnews.com - Borra Caves travel)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours