সুস্মিতা পাল, লেখিকা ও শিক্ষিকা, কলকাতা:
মানুষের স্বভাবে নানা বৈপরীত্য একইসঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলে। দিনের পর দিন চলে যায়, রোজ কাজের জায়গায় যাই, পরিবারের সবার দেখাশোনা করি, অবসরে বেড়াতে যাই, নেমন্তন্ন রক্ষা করি, আরও কত শত সাত সতেরোর গেরোয় বাঁধা রাখি নিজেকে। তারপর একটাই আক্ষেপ- সময় নেই, সময় নেই। সবকিছুতে সময় দিয়েও সময় না থাকার গ্লানি বয়ে বেড়াই বুকে।
তাই হালকা হতে ছুটে যাই তার কাছে, যে নিজে অনাদি অতীত থেকে স্থির হয়ে আছে। ছুঁতে পারি না, দূর থেকে দেখার পুলকটুকু বয়ে আনি হৃদমাঝারে। হিমালয়ের কোলে সকালের আলতো রোদের সোহাগ- মাখা নৈনিতাল তার ঘরে ডাক দেয়। সযতনে নিজেকে সাজিয়ে রাখে এই রূপসী, আদবকায়দার কেতায় , সাহেবীআনায় তার জুড়ি মেলা ভার। শুধু ভোরের আবছা আলোয় আর মরে আসা বিকেলের অস্পষ্ট আঁধারিতে গভীর হ্রদ শোনায় তার আপন মনের গহন গোপন বাণী। আর আকাশের নীল রঙকে নিজের বুকে জড়িয়ে একাত্ম হয়ে থাকে সারা দিনমান।গোলাপের সাজানো বাগানে বেশীক্ষণ মন বসে না, অযত্নে বিনা আয়াসে ফুটে ওঠে যে কুর্চিফুল- ডাক পাঠায় সে। কিন্তু গাড়িতে চড়া মানুষ জানতে পারে না সে সবচেয়ে বেশী পরাধীন। যতক্ষণ না পথে হাঁটছি ততক্ষণ সেই জায়গার প্রাণস্পন্দন অনুভব করা যায় না। ঝরা পাতায় পা ফেলে নৈঃশব্দকে ভেঙ্গে ফেলা, ঘন বুনোট গাছবন্ধুদের কানাকানি শুনতে আসা মৃদু হাওয়ার শিরশিরানি, ঝুমকোলতার আলতো ছুঁয়ে যাওয়া অধরাই থেকে যায়। অরণ্যে যারা লড়াই করে টিঁকে থাকে তারাই জীবনে বাঁচার মতো বাঁচে, আমরা কেবল জীবনে সময় কাটিয়ে যাই। জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কের মেঠো পথে ধুলো উড়িয়ে ফিরে আসি নিরাপদ ঘেরাটোপে। ছায়ার চাদর বিছিয়ে নিজেকে আড়াল করে অরণ্যসুন্দরী। ফিরতি পথে ছায়ারা দীর্ঘ হয়, সার বেঁধে হরিণের দল জলের ধারে খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসে আসন্ন রাত্রির অন্ধকারে শিকার হতে চায় না বলে। জঙ্গলের রাজা আড়াল থেকে অবহেলার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় তার সাম্রাজ্যে অনধিকার প্রবেশ করা অবাঞ্ছিত এই অতিথিদের থেকে। নির্জনতা আরো একটু গভীর হয়, আরো বেশী নগ্নও। মানুষ সইতে পারে না সে সৌন্দর্য, ভয় পায়। (ক্রমশঃ)
(ছবি সৌজন্যে প্রতিবেদক স্বয়ং)
(http://www.theoffnews.com travel)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours