অরিন্দম সাহা, ফিচার রাইটার ও শিল্পোদ্যোগী, মুম্বাই:

রাষ্ট্রসম্মান মাথা পেতে নিতে জানতে হয়। অহেতুক বাগ-বিতন্ডা, সস্তা রাজনীতির দূর্বিপাক একটা জাতিকে কিভাবে হাস্যকর পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারে, তা আজকের বাঙালিদের না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

একটা পুরষ্কার যেটা করে (অনেক কিছুর মধ্যে) তা হলো কিছু অতিরিক্ত পরিচিতি বয়ে আনে। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কি পরিচিতির সংকট হয়েছে? বলবো, আরো হলে মন্দ কি? আজকের প্রজন্ম তো বাংলা ধ্রূপদী গান শোনেই না। ওনার নামও অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা শুনেছে বলে বিশ্বাস করি না, এক ছত্র গানের কলি তো দূরাশা। বা, বুদ্ধবাবুর ক্ষেত্রে, ….ওনার শিল্পায়ন নিয়ে সদর্থক ভূমিকাই বা কজন জানে? পুরষ্কারটা পেলে আরো কিছু লোক না হয় জানতো। ওনারা যখন সাফল্যের মধ্যগগনে, তখন সোশাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্ত ছিল না। 

আরো একটা জিনিস হতো। গত ৭৫ বছরে দেশ হাজারো শিল্পী - শতাধিক উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পেয়েছে। তাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন রাষ্ট্রীয় পুরষ্কারে সম্মানিত হয়। বিষয়টা ১৩০ কোটি লোকের মধ্যে থেকে কতিপয় গুনী মানুষকে বেঁচে নেওয়ার মতো একটা জটিল কাজ। ভবিষ্যত প্রজন্মের কিছু ইতিহাস সচেতন মানুষ নিশ্চয় সে তালিকা খুঁটিয়ে দেখত। জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত হতাম। আপনারা সে সুযোগটা দিলেন না কেন?

কোথাও যেন কেউ বলে দিয়েছে বাঙালী মানেই বিদ্রোহী হতে হবে, তর্ক করতে হবে। আখেরে লাভ না হলেও, ‘মানছি না, মানব না’, আমাদের মজ্জাগত। প্রধানত, দুটো বক্তব্য, ‘এতদিন মনে পরেনি কেন?’, এ প্রশ্নের উত্তর তো আগের কেন্দ্র/ রাজ্য সরকারকে দিতে হবে। তবে ৮০ বছরে বঙ্গবিভূষণ নেবার সময় কিভাবে যেন বয়স গৌন হয়ে যায়। অন্য বক্তব্যটা হলো, ‘ওপরের স্তরের পুরষ্কার নয় কেন?’। বিনয়ের সঙ্গেই বলছি, লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে আপনার তফাৎটা থাকা সঙ্গত - যদিও দুজনেই লিজেন্ড। আর বুদ্ধবাবুর ক্ষেত্রে ভামপন্থা মার্কা কিছু কেঁজো যুক্তি শুনছি বটে। যা ভাবার অযোগ্য। 

আর, শুনছি পুরস্কারের খবর ‘বলার’ ধরণে গলদ ছিল। হয়তো সরকারি আমলার গাফিলতি। আপনিও কি সব জায়গায় সমানভাবে নিজেকে উজার করে দিয়েছিলেন? না কি করা সম্ভব? শুধু এটা বলবো, স্টেজে আপনাদের কোনো একটা পুরষ্কার ধরিয়ে, ভুলভাল ইতিহাস, ঝড়ঝড়ে মিথ্যা ভাষণ বা অনুপ্রেরণার বানী যখন ধেয়ে আসে, তখন আমাদের ভীষণ খারাপ লাগে। পদ্ম সম্মানের ক্ষেত্রে এসব হয় বলে আমার জানা নেই। তবে এটা বুঝি (অনেকের ক্ষেত্রে), হাসপাতালের বিলের বোঝা বড্ড ভারী, আর সংগীত মেলাগুলোয় পাওয়া সম্মাননা মাসকাবারীর মুসকিল আসান। তাই কিছু নিতে হয়, আর কিছু রিফিউজ করতে হয়। 

পুরষ্কার আসলে প্রাপকের সিদ্ধান্তে হয় না। যা আগে বহুল হতো বলে আমার বিশ্বাস। এক গুনী শিল্পীকে দেখেছি, ২০০৯ কি ২০১০ সাল নাগাদ তৎকালীন কং সরকারে নিজের জন্য সুপারিশ করতে। ইনি পরে আবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন! বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার চেষ্টা করছে যথার্থ লোককে সম্মান দেওয়ার। এনারা একটু অন্যভাবে ভাবলে, সেই প্রচেষ্টার পালে আর একটু হাওয়া লাগতো। কিন্তু ওই যে, শিল্পের জমি দেওয়া থেকে, পুরষ্কার পাওয়া সবেতেই ভ্রকুটি। আফশোষ, বাঙালি সদর্থক ভাবতে ভুলে গেছে বোধহয়। আসলে আপনারা হাওয়া মোরগের সাথে গা ভাসালেন। সুখবরটা হলো, আপনার থাকছেন, গান স্যালুট বরাদ্দ রইল। 

(www.theoffnews.com Sandhya Mukhopadhyay Buddhadeb Bhattacharjee Padma Bhushan Padma Shri rejected)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours