সুস্মিতা পাল, লেখিকা ও শিক্ষিকা, কলকাতা:

যেখানেই বেড়াতে যাই, দু একটা মন্দির তো মাস্ট ভিজিটের লিস্টে থাকেই। উত্তরাখন্ড তো কিন্নরভূমি, তাই মন্দিরেরও কমতি নেই। ঈশ্বরভক্তি থেকে নয়, অনেক নাম শুনেছিলাম বলেই ঘোড়াখাল মন্দিরের উদ্দেশে রওনা দেওয়া। ভাওলি জংশনের হৈচৈ, ভিড়ভাট্টা কাটিয়ে পৌঁছে গেলাম পাহাড় চূড়ার মন্দিরে। এ হলো High Court Of Gods. সে এক অদ্ভুত পরিবেশ, লক্ষ লক্ষ মানুষের মনোকামনা ঘন্টা বেঁধে জড়ো হয়েছে মন্দিরে, সংলগ্ন প্রাঙ্গনে।চত্বরের আশপাশ ঢেকে গেছে গ্রন্থিবদ্ধ বিভিন্ন মাপের ঘন্টায়। হিমালয়ের কনকনে হাওয়ার দোলা লেগে বেজে ওঠে তারা, অস্ফুট মৃদুধ্বনিতে এক অপার্থিব বিস্ময়ে জেগে ওঠে মন। অনুভব করতে পারি- জীবন মানে শুধু আয়ুরেখার দৈর্ঘ্য নয়, আরও বড় কিছু।

আভি মুঝমে কহি

বাকি থোড়ি সি হ্যায় জিন্দগী

জাগি ধড়কন নয়ী

জানা জিন্দা হু ম্যায় তো অভি।

কুছ এয়সী লগন ইস লমহে মে হ্যায়

ইয়ে লমহা কাহা থা মেরা!

আব হ্যায় সামনে

ইসে ছু লু জরা

মর যায়ু ইয়া জি লু জরা। 

এরপর দেখলাম শিবের ১৮টি প্রধান মন্দিরের অন্যতম মুক্তেশ্বর মন্দির। প্রায় আড়াই হাজার মিটার উচ্চতায় মন্দির চত্বর থেকে পাহাড় আর আকাশের লুকোচুরির দৃশ্য এক অন্যতর জগতে নিয়ে যায়।

আবার ছুটে যাওয়া লোকালয় থেকে আড়ালে, নরম আলোর সাজে সুন্দরী বিনসারের কাছে। আধুনিক পৃথিবী থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা বিনসারে পা রাখি--- দুমাস আগের ভয়ঙ্কর বৃষ্টিতে তোলপাড় হওয়ার ছাপ লেগে থাকা পাহাড়ের পথ বেয়ে। পার হই দ্বেষ-লোভ-শঠতার পথ। উজ্জ্বল দুপুরে পাহাড় চূড়ায় দীর্ঘ গাছেদের পাতায় রোদ্দুর আর ছায়ার রং মিলান্তি খেলা চলছে তখন।

নীরবতার সঙ্গীত যদি শোনার ইচ্ছা হয়, দুবার না ভেবে চলে যেও বিনসার। আমাদের প্রত্যেকের মনের মধ্যে যে মুক্তির ঈপ্সা অনবরত ডানা ঝাপটায়, হিমালয়ের হাত-ছোঁয়া দূরত্বে দাঁড়িয়ে তার সত্যিকারের অনুভূতি মনকে নাড়া দিয়ে যাবেই। শহুরে মানুষ আমরা-- প্রত্যেকেই বাঁচি হিমশৈলের মতো - যেটুকু সবাই দেখতে পায় সেটুকুই সত্য নয়, চোখের ও মনের গভীরে আড়াল রয়ে যায় অনেকটাই। অন্তরমগ্ন সেই গোপনটুকুর উদ্ভাস ধরা দিল বিনসার-এ। উপরি পাওনা- জঙ্গলে হাজারো পাখির সুরেলা ডাক আর নাম না জানা বুনো ফুলের হাসি। (ক্রমশঃ)

(ছবি সৌজন্যে প্রতিবেদক স্বয়ং)

(http://www.theoffnews.com travel)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours