সুমিত তালুকদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, নৈহাটি, উত্তর ২৪পরগনা:

বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা অনায়াসে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়ারা নানাভাবে এর সুফল ভোগ করছে যা এক দশক আগেও কল্পনা করা যেত না। সরকার যেন প্রতিটা পরিবারের সর্বময় কর্তা অভিভাবক হিসেবে পরিবারের সদস্যদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি যাতে অন্য কোনও সমস্যা (বিশেষ করে আর্থিক) না হয়, স্কুলছুটের সংখ্যা বৃদ্ধি না পায় সেদিকে কড়া নজরদারি চালিয়ে সময়োচিত দায়িত্ব পালন করে চলেছে। আর তাই স্কুলে একবার নাম নথিভুক্ত করতে পারলে, ভর্তি হতে পারলে আর ফিরে দেখার সমস্যা নেই। সব দায়িত্ব তখন সরকারের কাঁধে। শিক্ষা মন্ত্রক থেকে শিক্ষা দপ্তর নানাবিধ সুযোগ সুবিধা, প্রকল্পের আকর্ষণীয় ডালা সাজিয়ে পড়ুয়াদের বৈতরণী পার করানোর দায়িত্বে অবিচল। ছাত্রীদের পড়াশোনার টাকা নেই, বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যাশিক্ষা চালিয়ে যেতে চায় আছে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা। ছাত্রদের জন্য যুবশ্রী। দূরদূরান্ত থেকে স্কুলে আসতে সমস্যা, আছে দ্বিচক্র যানের সুবিধাযুক্ত সবুজসাথী। সংখ্যালঘুদের জন্যও আছে বিশেষ সুবিধাযুক্ত ঐক্যশ্রী। অনলাইনে ক্লাস করার জন্য স্মার্টফোন নেই? দরাজ সেখানেও সরকার, ট্যাব কেনার জন্য ১০,০০০ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডেরও ব্যবস্থা আছে। এছাড়া পুষ্টিকর আহারের জন্য রয়েছে মিড ডে মিলের ঢালাও বন্দোবস্ত। চাল, আলু, চিনি, ডাল, ছোলার পাশপাশি প্রোটিন সমৃদ্ধ সয়াবিন। করোনা সংক্রমণ রোধ করার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মাস্ক বিলি তো আছেই। এই ভয়ঙ্কর করোনা অতিমারীর সময়েও তা অব্যাহত থেকেছে এবং শিক্ষক শিক্ষিকারা ঝুঁকি নিয়েও সরকারি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।

বাস্তবিকই এ প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরা সত্যি ভাগ্যবান। সবকিছুই ফ্রিতে পাচ্ছে। পড়াশোনার বিপুল ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে যখন বহু পরিবারের ছেলে মেয়েরা সামান্য সাক্ষরতা থেকে বঞ্চিত, স্কুলছুট হয়ে পড়া, বাধ্য হয়ে পরিবারের বাড়তি আয়ের জন্য অন্য পেশায় নিযুক্ত হওয়া তখন এই সব সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা লাভ করে তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। তাই স্কুলে একবার ভর্তি হতে পারলে আর কোনও আর্থিক সমস্যা, বিদ্যাশিক্ষা লাভ থেকে বঞ্চিত বা নিরাশ হওয়ার কারণ নেই। বিদ্যালয়ের দুয়ারে আছে সরকার।

এ পর্যন্ত ভাবলে সব ঠিকঠাক আছে বলেই মনে হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে সরকারি প্রকল্পের এতসব আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করার পর, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কি? শিক্ষিত বেকার হয়ে বসে থাকলে তো পেট চলবে না, আয়ের উৎসের অভিমুখ তখন বদলে যাবে। বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে তা সমাজের কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। সুতরাং চাকরি চাই, চাই যোগ্য কর্ম সংস্থান। সেই স্বপ্নপূরণ হবে কি করে, তার প্রকৃত সমাধান কোথায়? কোটি কোটি টাকা খরচ করে এইসব অপ্রত্যাশিত সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, প্রকল্প রূপায়ণের পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে কি? এইসব সরকারি সুযোগ সুবিধা যখন আগে ছিল না তখন কি ছাত্রছাত্রীরা দলে দলে স্কুলছুট হয়েছে, আর্থিক অনটনে আক্রান্ত হয়ে মাঝপথে পড়াশোনা হঠাৎ থামিয়ে দিয়েছে নাকি পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হয়নি, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারেনি? এভাবে বিচার করলে অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ও অসংগতি চোখে পড়তে পারে। যাহোক তবু কিছু তো হচ্ছে, এই প্রত্যাশা নিয়ে, এই সুযোগ সুবিধার সদ্ব্যবহার করে এগিয়ে চলুক বর্তমান প্রজন্মের ভাগ্যবান পড়ুয়ারা।

(www.theoffnews.com - education)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours