সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ, কলকাতা:

কবিতার মতোই কবির জীবন।

নাম তাঁর কবি ঘোষ। আসলে কবিবাবুর আটপৌড়ে জীবন উপন্যাস কখন যে সামাজিক বিবর্তণের কবিতায় পরিণত হয়েছে তা জনান্তিকই জানেন।

একদা যে যুবকটি তাঁর অপরিণত বয়সে স্বপ্ন দেখতেন রক্তদান আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেবেন সার্বিক জনমানসে, আজকে সেই প্রৌঢ় পরিণত প্রজ্ঞায় রাজ্য রক্তদান আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে আসীন সর্বজন শ্রদ্ধায়। এই সামাজিক সরণী বিচরণে নীরবে রয়ে গেছে দীর্ঘ দুই দশকের জীবন-কবিতার ছত্রে ছত্রে গাঁথা অক্লান্ত পরিশ্রম, নিরন্তর জনসংযোগ ও অনিঃশেষ লক্ষ্যের অর্জুনের পাখির চোখ। আর থেকেছে একরাশ ছন্দময় সততা ও মাধুর্যময় ব্যবহার। তাই নিঃসংকোচে উচ্চকন্ঠে প্রকাশ্যে বলা যেতেই পারে, এই রাজ্যের বর্তমান রক্তদান আন্দোলনের এক অনন্য ব্যক্তি-ব্রান্ডের নাম 'কবি ঘোষ'।

দুর্গাপুর মহকুমা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম সম্প্রতি একটি রাজ্য সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে। সেই উদ্যোগের নেতৃত্বের একেবারে সামনের সারিতে কে? সেই কবি ঘোষ। হ্যাঁ এই কবি ঘোষ জীবনের সিংহভাগ সময়টাই থেকেছেন শিল্পশহর দুর্গাপুরে। তবে কলেজ জীবনে কলকাতায় ছিলেন বছর কয়েক। ছাত্র রাজনীতিটা ছিল তাঁর রন্ধ্রে। তখন থেকেই তিনি রক্তদান জীবনদান প্রচারের শরিক ছিলেন ওতোপ্রোতভাবে। আর তাঁর যুব রাজনীতির সময় এই প্রচারের ধার ও ভাড়ের ব্যপ্তি ঘটে রাজ্যের নানা প্রান্তে।

এভাবেই এসে যায় ২০০১ সাল। দুর্গাপুরের বুকে ঘটে এক মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনাগ্রস্থ বহু মানুষের রক্তের প্রয়োজনে দিশেহারা সংশ্লিষ্ট মহল। এই ভয়াবহতার কথা ভেবেই দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের ব্ল্যাডব্যাঙ্কের সেদিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মিহির নন্দী ও কবি ঘোষ সহ কিছু সহৃদয় ব্যক্তি তদানীন্তন সময়ে গড়ে তোলেন দুর্গাপুর মহকুমা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম। রক্তদান আন্দোলনকে সামনে রেখে সংগঠিত ভাবে কবি ঘোষের নিয়মিত কর্মকাণ্ড সেই শুরু। এই মুহূর্তে তিনি ৫৯ বছরের এক জীবনমুখী প্রানবন্ত যুবক। আজ তাঁর অভিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা হল এক বছরের মধ্যে তিনশোটা রক্তদান শিবির করতেই হবে। সঙ্গে সাড়ে আট হাজার রক্তদাতাকেও এই শিবিরগুলিতে যুক্ত করতে হবে। শুধু পরিকল্পনা করেই ক্ষান্ত নন তিনি। পরিকল্পনার বাস্তব রূপায়নে ফেডারেশন অফ ব্ল্যাড ডোনার্স অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক কবিবাবু তাই নিয়মিত দৌড়ে বেড়ান রাজ্যের নানা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। প্রায় প্রতিদিনই এক বা একাধিক রক্তদান শিবির আয়োজিত হয় তাঁরই তত্ত্বাবধানে।

শুধুই কি রক্তদান আন্দোলনে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন নিজেকে, এটা ভাবলে তাঁকে অর্ধেক পর্যালোচনা করা হবে। করোনাকালে আর পাঁচজনের মতো তাঁরও ব্যক্তি আয়-সংস্থানে ভাঁটা পড়েছিল যথেষ্টই। তবু ব্যক্তি যন্ত্রণাকে শিকেয় তুলে ঝাঁপিয়ে পড়েন করোনা রোগীদের সেবায়। অধিকাংশ দুর্গাপুরবাসী করোনা রোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে অকাতরে ওষুধ বিতরণ করেন ৮৬জন সমাজসেবীর সহায়তায়। মাসখানেক ধরে ২৮৪টি করোনা সংক্রমণগ্রস্থ পরিবারকে বিনামূল্যে দুই বেলা খাবারও পরিবেশন করা হয়েছে কবিবাবু ও ওই সমাজসেবীদের অনলস প্রচেষ্টায়।

দুর্গাপুরের প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী আয়ুব আনসারী ও বিশিষ্ট সমাজসেবক রাজেশ পালিত বলেন, "রাজ্যের রক্তদান আন্দোলনের সাম্প্রতিক অগ্রদূত হলেন কবি ঘোষ। তাঁর সামাজিক নেতৃত্ব আমাদের কাছে একটা দৃষ্টান্তহীন উদাহরণ।" আর কবি ঘোষ নিজে কি মন্তব্য করেন? তাঁর বক্তব্য, "সেই ছাত্র যুব রাজনীতির সময় থেকে রক্তদান কর্মসূচি নিয়ে ভাবতাম। আজকে আমার রাজনৈতিক সংযোগ অনেক পিছনে পড়ে গেছে। তবে আমার শহর দুর্গাপুর সহ সারা রাজ্যে রক্তদান আন্দোলনকে একটা সার্বিক সমবেত রূপ দিতে চেষ্টা করছি মাত্র। এখনও সচেতনার কাজ করার অনেক বাকি। তবে পরিবারের ও কিছু শুভানুধ্যায়ী মানুষের সহযোগিতা না পেলে আমি এক কদম এগোতে পারতাম না। যেটুকু কাজ করি তা মিলিত ভাবে সম্পন্ন করি।"

তাই তো সবাই কহে, কবিবাবু মিলাবে মিলিবে যাবে না ফিরে আমৃত্যু রক্তদান আন্দোলন থেকে।

(www.theoffnews.com - blood donation)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours