তানজিন তিপিয়া, লেখক ও রন্ধন বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ:

চিন্তা জীবনের জন্য অপরিহার্য। মন চিন্তার ইঞ্জিন বাড়ি। যুগ যুগ ধরেই সকল কালেই স্রষ্টা তার বার্তাবাহকদের দ্বারা আমাদের পবিত্র গ্রন্থের মাধ্যমে মন বিষয়ক বেশ তথ্য দিয়েছেন। বিজ্ঞান যে খুব আলাদা ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হয়েছে তা কিন্তু মোটেও নয়। মনো বিজ্ঞানীরাও মৃদু কণ্ঠে ভিন্ন ধাঁচে ধর্মের স্বরূপ ব্যাখ্যাই দেন। সেই সাথে তারা এটিও স্বীকার করেন যে- “যাদের স্রষ্টার প্রতি আস্থার ঘাটতি আছে তারা মনোরোগে বেশি ভোগেন”। মনোবিজ্ঞান বিজ্ঞানের একটি নতুন অধ্যায় যার অগ্রগতি মাত্র ১৫০ বছর আগে থেকে। 

মন ও চেতনা এক নয়। যদিও চেতনা হল মনের অভিন্ন লক্ষণ। আরও একটু ভাবলে মনে হবে, চেতনা আসলে রুহ/ আত্মা নামের পবিত্র সত্ত্বা থেকে আসে। যা নিয়ে ভাববার সময় আমাদের নেই বললেই চলে। 

আমেরিকার দ্যা অনিওন একটি ব্যঙ্গাত্মক শিরোমানে রিপোর্ট করেছিলেন যে মনোবিজ্ঞান থমকে গেছে কারণ’ ক্লান্ত গবেষকরা বলছেন যে- “মন সম্ভবত নিজেকে অধ্যায়ন করতে পারে না।” 

গবেষকদের এই রূপ মন্তব্য খুব স্বাভাবিক কারণ মন নামের এই অদৃশ্য সত্ত্বাকে কেউই দেখেনি অনুভব করছে কেবল। বিজ্ঞান তো বস্তুবাদে আচ্ছন্ন সে অদৃশ্যে কি করেই বা বিশ্বাস করবে?  

জৈবিক চাহিদাগুলো পূরণ করেই মানবিক বৈশিষ্ট্যের দিকে অগ্রসর হওয়া এটি মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। ধর্ম চর্চা, সংস্কৃতি চর্চা, বৈজ্ঞানিক চর্চা, দার্শনিক চর্চা, সাহিত্য চর্চা, গল্প করা, বিলাস করা, ভ্রমণ করা প্রভৃতি মানবিক সিদ্ধান্তজনিত আচরণ। এ সব কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রেমপ্রীতি, স্নেহ, ভালোবাসা, মমতা ও প্রশান্তি, প্রভৃতি ধনাত্মক বিষয়গুলো বিকশিত হয় এবং রাগ, হিংসা, অহংকার প্রভৃতি ঋণাত্মক বিষয়গুলো দূরীভূত হয়। কিন্তু কখনও কখনও ঋণাত্মক বিষয়াবস্তুর প্রভাব বেড়ে গেলে কিন্তু হিসেব পাল্টে যায়। তখন সুস্থ দেহটি মুমূর্ষু অনুভব করে কারণ অতিমাত্রার নেতিবাচকতা মন সহজে নিতে পারলেও আমাদের আত্মা, রুহ নামের অদৃশ্য শক্তিটি নিতে পারে না। 

এই কারণেই তো ধর্ম যুগে যুগে বার্তা দিয়েছে এভাবে- 'তাদের জন্য মন শত্রুর মতো আচরণ করে যারা এটিকে নিয়ন্ত্রণ করে না।' - ভগবত গীতা।

'মন রাগ, ঘৃণা এবং হিংসা রাখার ডাস্টবিন নয়, কিন্তু এটি সম্পদের সিন্দুক ভালোবাসা, সুখ এবং সুন্দর স্মৃতি রাখার।'– গৌতম বুদ্ধ।

'ঈশ্বরের নিকটে আসুন এবং তিনি আপনার নিকটে আসবেন। পাপীরা, তোমরা হাত পরিষ্কার করো; তোমরা অন্তরকে পবিত্র করো!' - বাইবেল জন ৪:৮ 

'এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মতো অন্তর রয়েছে। অথবা সে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে।' কোরআন অধ্যায় ৫০ সুরাহ কাফ আয়াত ৩৭। 

আমরা মনুষ্য ধর্মে সন্দেহ করি- মানে ধর্ম তো অনেক পুরনো বিষয়, কে না কে লিখেছে? ভুলও থাকতে পারে। কিন্তু মানুষ লোক কথা শুনে শুনেই এই ধারণা পুষে গেছে অথচ কতো দামী দামী বই মানুষ পড়ে গেছে, পড়ে যাচ্ছে, পড়ে যাবে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে। অর্থাৎ যত দোষ ধর্ম গ্রন্থেই। মানুষ কি বললো তা না শুনে একটু নিজে পড়ে দেখতে দ্বিধাটা কোথায়? সেই ভালো চিন্তা অন্তরে কারও আসবে না। তাই তো বলি মানুষ দারুণ অনুকরণ প্রিয়। এই কারণেই তো কিছু একটার চল এলে আমরা সকলেই মনোনিবেশ করি তা ধারণ করার। সবাই করছে আমিও করবো। না করলে তো মানুষ আমায় আধুনিক ভাববে না। এই আধুনিক থাকার ধ্যান ধারণাটিই যেন আমাদের দিন দিন আস্থা থেকে দূরে কোনও সাগরে ফেলে দিয়েছে। এমন এক সাগর যেখানে শুধুই অন্ধকার, এতো গভীর যে সাঁতরে ওঠার ও সুযোগ নেই। 

প্রবাদ আছে, বানরকে সুযোগ দিলে মাথায় উঠে নাচে। মন সেই বানর। উনার নেতিবাচক কথাগুলো নিয়ে বিভর হয়ে গেলে কিন্তু জীবন রুখে যাবার আশঙ্কা শতভাগ। তাই এই বানরের গলায় সর্বদা দড়ি থাকা ভীষণ জরুরী। সেই দড়িটির নাম হলো “আস্থা”। সেই দড়িটির উত্তম প্রয়োগ করবো তো?

(ছবি সৌজন্যে প্রতিবেদক স্বয়ং)

(www.theoffnews.com - Bangladesh mind)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours