দেবিকা ভট্টাচার্য, লেখিকা ও লেকচারার, চন্দননগর, হুগলি:

অতিমারীতে সকলেই প্রায় গৃহবন্দী। দল বেঁধে কিংবা একা একা বিনা কাজে যত্র তত্র নৈব নৈব চ। কিন্তু "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে"। তাই বন্ধু বান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে আমার এ মানস ভ্রমণ। সঙ্গে থাক না হয় কিছু কিছু গল্প-গাথা।

"ভাগীরথীর পশ্চিম কূল বারাণসীর সমতুল"—আমার জন্মস্থান—ভাগীরথী নদীর তীরে বারাণসীতুল্য 'অম্বিকা কালনা' পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্তর্গত। হাওড়া থেকে ৮২ কিলোমিটার। নদীর এ পারে কালনা, ওপারে নৃসিংহপুর, একটু এগিয়ে শান্তিপুর।  

অম্বিকা কালনার নাম নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

১) অনেকের অনুমান, অম্বরীশ ঋষির আশ্রম স্থল হিসাবে স্থানটি প্রসিদ্ধিলাভ করেছিল ''অম্বিকা" নামে।

২)অনেকের মতে, অম্বিকা কালনার 'অম্বিকা'দেবী (মা সিদ্ধেশ্বরী) জৈনদেবী ছিলেন। তাঁর নামানুসারে অম্বিকা কালনার নামকরণ। আসলে আজকের গাথা—কালকে তা গল্প।

Umakant Premanand Shah রচিত, ‘Iconography of the Jain Goddess Ambika’ নামক একটি প্রবন্ধ অবলম্বনে (Journal of the University of Bombay, 1940 সালে প্রকাশিত) শ্রদ্ধেয় বিনয় ঘোষের মন্তব্য —“অম্বিকা-কালনার অম্বিকা জৈনদেবী ছিলেন। পরে তিনি হিন্দু শক্তি পূজায় স্বাতন্ত্র্য বিসর্জন দিয়েছেন। বৌদ্ধতন্ত্রের প্রভাবের যুগেই বাংলাদেশে অম্বিকা পূজার প্রচলন ছিল মনে হয়। অম্বিকা-কালনার ইতিহাস পালযুগ পর্যন্ত বিস্তৃত না হলে ‘অম্বিকা’ কথার ব্যাখ্যা করা যায় না।”

খানসাহেব মৌলবি ওয়ালীর মতে কালনা একটি প্রসিদ্ধ স্থান ছিল হিন্দু ও মুসলমান যুগে। সরকার সাতগাঁও-এর অন্তর্ভুক্ত ‘অম্বোয়া’ নামে একটি পরগণার কথা উল্লেখ আছে আইন-ই-আকবরিতে। ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে ভন ডেন ব্রুকের মানচিত্রে প্রদর্শিত একালের অম্বিকা-কালনা হল ‘Ambowa’, বৃন্দাবন দাস তাঁর চৈতন্য ভাগবতে অম্বিকা কালনাকে উল্লেখ করেছেন –

"এই মতে সপ্তগ্রামে অম্বয়া মুলুকে।

বিহরেন নিত্যানন্দ পরম কৌতুকে।"

সংগৃহীত তথ্য থেকে এটুকু দেওয়া গেল। অম্বিকা কালনা, মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের পদধূলি ধন্যা।

কালনা স্টেশন থেকে ২.৫ কিমি পূর্বে শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিতের শ্রীপাট। স্থূল জগতে যেমন 'heredity' প্রধান সত্য, সূক্ষ্ম জগতে জন্মান্তরবাদ। গৌরীদাস পণ্ডিত, গৌরলীলায় দ্বাদশগোপালের অন্যতম, পূর্বলীলায় সুবল সখা। শালিগ্রাম থেকে অম্বিকা কালনায় এসে গৌরীদাস এবং সূর্যদাস সরখেল নির্জনে বসতি স্থাপন করেন। আর চৈতন্যদেব শান্তিপুর থেকে হরিনদী গ্রামে এসে নৌকাযোগে গঙ্গা পার হয়ে তেঁতুল গাছের নীচে 'অমলীতলা'য় বিশ্রাম নিতে বসলেন। সে সময় গঙ্গার গতিপথ এখনকার থেকে একটু আলাদা ছিল, গঙ্গার ধারে ছিল তেঁতুল গাছটি। এখন গঙ্গা অনেকটা দূরে সরে গেছে। চৈতন্যদেবের সঙ্গে নিশ্চয় নিত্যানন্দও ছিলেন। পাশেই গৌরীদাসের কুটির। সেখানে তাঁরা আশ্রয় নিলেন। কিন্তু সেখান থেকে তো বিদায় নিতে হবে! পণ্ডিত ছাড়বেন না কিছুতেই।

"ঠাকুর পণ্ডিতের বাড়ি, গোরা নাচে ফিরি ফিরি, নিত্যানন্দ বলে হরি হরি।

কাঁদি গৌরীদাস বলে, পড়ি প্রভুর পদতলে, কভু না ছাড়িবে মোর বাড়ী।"

তাহলে কী ভাবে যেতে পারলেন মহাপ্রভু! পরের দিন আসছি সে কথায়। (ক্রমশঃ)

(www.theoffnews.com - Ambika Kalna)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours