ইরানী বিশ্বাস, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও পরিচালক, বাংলাদেশ:
সাহিত্যের একটি বিশেষ ধরণ হচ্ছে নাটক। নাটকের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Drama । গ্রিক Dracin থেকে Drama শব্দটি এসেছে। যার অর্থ to do বা কোনও কিছু করা। নাটক শব্দটির মধ্যেই নাটক কী তার ইঙ্গিত রয়েছে। নাটক, নাট্য, নট, নটী এই শব্দগুলোর মূল শব্দ হলো নট। নট মানে হলো নাড়াচাড়া বা অঙ্গচালনা করা। নাটকের মাধ্যমেও আমরা মূলত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নড়াচড়া, কর্থাবার্তা ইত্যাদির মাধ্যমে জীবনের বিশেষ কোন দিক বা ঘটনার উপস্থাপণ দেখতে পাই।
সাধারণত একটি পান্ডুলিপি অনুসরণ করে অভিনয়ের মাধ্যমে নাটক পরিবেশিত হয়ে থাকে। নাটকে স্থান, সময় ও পরিবেশের বর্ণনা ছাড়াও সংলাপ লেখা থাকে। সংলাপের মাধ্যমেই একজন অভিনেতা নাটকের বিভিন্ন বিষয়ে কথপোকথন করে থাকেন। সব সময়ই যে সংলাপের মাধ্যমে নাটক পরিবেশিত হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়; সংলাপ বিহীন অভিনয়ও নাটকের বিশেষ একটি অংশ। নাটকের নানারকম বিষয়বস্তু অনুসারে নাটককে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো:
১। ভাব সংবেদনা রীতি অনুসারে (ট্রাজেডি, কমেডি, ট্রাজি-কমেডি, মেলোড্রামা, ফার্স)
২। বিষয়বস্তুর উৎসরীতি অনুসারে (পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, ঐতিহাসিককল্প চরিত্রমূলক, সামাজিক, পারিবারিক, উপতথাশ্রয়ী, কাল্পনিক)
৩। বিষয়বস্তুর প্রকৃতি অনুসারে (ধর্মমূলক, নীতিমুলক, আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রেমমুলক, দেশপ্রেমমূলক, সামাজিক রীতিমূলক, ষড়যন্ত্রমূলক, রোমাঞ্চকর দুঃসাহসমূলক, অপরাধ আবিস্কারমূলক)
৪। উপাদান যোজনা বৈশিষ্ট্য অুসারে (গীতিনাট্য বা অপেরা, যাত্রা, নৃত্যনাট্য, নাটক বা ড্রামা)
৫। আয়তন বা অঙ্কসংখ্যা অনুসারে (মহানাটক, নাটক, নাটিকা, একাঙ্কিতা)
৬। গঠন রীতি অনুসারে (ক্লাসিক্যাল, রোমান্টিক, দৃশ্যাবলী)
৭। রচনারীতি অনুসারে (পদ্যনাটক, গদ্যনাটক, গদ্য-পদ্যময় নাটক)
৮। উপস্থাপনারীতি অনুসারে (বাস্তবিক নাটক, ভাবতান্ত্রিক নাটক, রূপক নাটক, সাংকেতিক নাটক, এক্সপ্রেশানিস্টিক নাটক)
৯। উদ্দেশ্য অনুসারে (ঘটনামুখ্য বা মেলোড্রামা, চরিত্রমুখ্য বা চরিত্রনাট্য, রসমুখ্য বা রসনাট্য, তত্ত্বমুখ্য বা তত্ত্বনাটক )
বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদে নাটক অভিনীত হওয়ার উল্লেখ রয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায়ও দেখা গেছে, চর্যাপদ নৃত্য ও অভিনয়সহ বৌদ্ধ মন্দিরে পরিবেশিত হতো। এ থেকে বলা যায় যে বাংলা নাটকের ইতিহাস হাজার বছরের। ভারতবর্ষে বাংলা নাটকের আগমন ঘটে ইউরোপ থেকে। ১৭৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর ইংরেজি নাটক ‘দ্য ডিজগাইজ’ প্রথম বাংলায় রূপান্তর করে নাম দেওয়া হয় ‘কাল্পনিক সংবদল’। এর অনেক বছর পর ১৭৫২ সালে বাঙালীরে নিজস্ব রচিত নাটক তারাচাঁদ শিকদারের ‘ভদ্রাজ্জুর্ন’ মঞ্চায়িত হয়। মহাকবি মাইকেল মধুসূধন রচিত সর্বপ্রথম বাংলাদেশের নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ রচিত ও মঞ্চায়িত হয়।
১৯৪৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত মূলত কলকাতা ছিল বাংলা নাট্যচর্চার প্রাণকেন্দ্র। ভারত বিভাগের পর তৎকালীন পূর্ববঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রিক নাট্যচর্চা গড়ে ওঠে। পূর্ববঙ্গের নাট্যচর্চা স্বাভাবিকভাবেই এ অঞ্চলের সমাজবাস্তবতা-সমাজচিত্র বিশেষত বাঙালী মুসলিম সমাজের প্রেক্ষাপট চিত্রায়িত হতে থাকে। বাংলাদেশের আধুনিক ধারার নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে মুনীর চৌধুরী ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লহ ছিলেন অগ্রজ নাট্যকার। (ক্রমশঃ)
(www.theoffnews.com - Bangladesh Bangla drama)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours