মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার ও লেকচারার, আহমেদাবাদ:
ইউথেনশিয়া বা স্বেচ্ছা মৃত্যু আজও আইনত স্বীকৃতি পায়নি ভারতবর্ষে। কিন্তু আইন কি সত্যিই আত্মহত্যা আটকাতে পারে? তাই যদি পারত তবে তো কাগজ খুললেই চোখে পড়ত না—“অভাবের তাড়নায় আত্মঘাতী চার সন্তানের পিতা!“/ ”আশানুরূপ ফল না হওয়ার ভয়ে ঘর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার!”
ভয়, লজ্জা অভাব, দুঃখ, হতাশা, বঞ্চনা এসবই মানুষকে বাধ্য করে নিজের জীবনটাকে শেষ করে দিতে। তাদের ধারণা এ জীবনে হেরে গেলাম, পরের জন্মে এর চেয়ে নিশ্চয়ই ভাল কিছু অপেক্ষা করছে।
অনেকে অবশ্য মূহুর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েও আত্মহত্যা করেন, আবার কেউ কেউ থাকেন মানসিক ভাবে আত্মহত্যাপ্রবণ। কিন্তু চমকে উঠি--- যখন দেখি অশীতিপর উচ্চ শিক্ষিত দম্পতি যাদের জীবনে কোন অপ্রাপ্তি নেই তাঁরাও এই পথ বেছে নেন। গুজরাট ইউনিভার্সিটির রিটায়ার্ড প্রফেসর যোগেন্দ্র ব্যাস এবং তাঁর স্ত্রী অঞ্জনা ব্যাস শারিরীক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে গতকাল এই সহজ পথটি বেছে নিয়েছেন। ভাষাবিদ যোগেন্দ্রবাবু ছিলেন ভীল ভাষার ওপর ডক্টরেট ডিগ্রীধারী, সারা জীবন শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কত ছাত্র ছাত্রী, কত আর্টিকেল লিখেছেন, সারা জীবন কত পুরষ্কার পেয়েছেন। কিছুদিন আগে উনার কিডনির সার্জারি হয়েছে আর স্ত্রী ক্যান্সার পেশেন্ট, তাই হয়ত শারিরীক লড়াই লড়তে লড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। উনার ৫০ বছর বয়সী ছেলে শহরের নামকরা গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজিস্ট, একই বাড়িতে সবাই থাকতেন, অভাব অযত্ন কিছুই ছিল না। শুধু ছিল ভয়---না জানি কি ভয়ঙ্কর হবে শেষের সেদিন!
বারবার মনে হচ্ছে শিক্ষক হয়ে এ কোন পথ বেছে নিলেন? সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা কি মৃত্যুর পরও থেকে যায় না একজন প্রকৃত শিক্ষকের? আবার ভাবছি প্রাচীন যুগে বাণপ্রস্থ গমণ যদি সঠিক হয় তবে নিজের জীবন সম্পূর্ণ ভাবে উপভোগ করার পরে সেইজীবন থেকে স্বেচ্ছায় মুক্তি নেওয়ার অধিকারও তো সকলের থাকা উচিত।
যখন যোগেন্দ্রবাবুর মৃত্যু মনকে নাড়া দিল ঠিক সে সময়ই আরেকটি খবর এসে ধাক্কা দিল।কলকাতারই এক উচ্চবিত্ত পরিবারে ডাক্তারবাবুকে ডাকা হয়েছে যাতে কয়েক ঘন্টা পরে বাড়ির বয়োবৃদ্ধ মানুষটির ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দেন।আশির ওপর বয়স, অক্সিজেন চলছে, প্রচুর সম্পত্তির মালিক মানুষটি কখন মারা যাবেন তারই প্রতীক্ষা করছেন আত্মীয় পরিজনরা!
ভীষণ দোলাচলে ভুগছি কে ঠিক, যোগীন্দ্রবাবু না কলকাতার ওই বৃদ্ধ মানুষটি?
(www.theoffnews.com - suicide)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours