পলাশ মুখোপাধ্যায়, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:

অমিলের চেয়ে মিলই বেশি দুজনের মধ্যে। দুজনই দারিদ্রের নানা স্তর পেরিয়ে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক স্তরে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছেন। একজন চা বিক্রি করেছেন তো অন্য জন দুধ। নিজের বিজ্ঞাপন দিতে দুজনেই একে অপরের উদাহরণ। দুজনেই মনে করেন তাদের কথাই চূড়ান্ত। বিরোধীতা বা সমালোচনা দুজনেরই না পসন্দ। সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার জন্য যে কোনও পদক্ষেপ করতেই পিছপা হন না দুজনের কেউই। দুজনের বয়সও খুব কাছাকাছি একজন সত্তর, অন্যজন ছেষট্টি।

এ পর্যন্ত ঠিকঠাকই ছিল, গোল বেঁধেছে একজনের পদটা একটু ভারি হওয়াতে। একজন মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রীত্বে পৌঁছে গিয়েছেন। অন্যজন সেই পদের প্রত্যাশী। এটুকুই যা অমিল বা পার্থক্য এই দুজনের। তবে দ্বিতীয় জন কিন্তু থেমে নেই। তিনি প্রধানমন্ত্রীত্বে পৌঁছতে ইতিমধ্যেই কঠোর হোমওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছেন। স্বভাবে যেহেতু মিল আছে সেহেতু অনুশীলনেও অগ্রজের ছাপ স্পষ্ট। 

ঘরের মাঠে খেলায় কিন্তু দ্বিতীয় জন প্রথম জনকে গুনে গুনে গোল দিয়ে হারিয়েছেন। কিন্তু খেলা এবার জাতীয় স্তরে হবে। তাই অনুশীলনটাও আরও একটু জোরদার এবং শানদার হতে চলেছে। আর একটা মিলের কথা তো বলাই হয়নি। ভারতবর্ষে ভ্রমণ পিপাসুদের তালিকায় প্রথম যে দুটি নাম থাকে তা হল গুজরাটি এবং বাঙালি। এই ট্র্যাডিশনকেই সম্মান জানিয়ে দুজনেই বেড়াতে খুউউউউউব ভালবাসেন। আমরা যেমন অফিসের বসকে ফাঁকি দিয়ে, আত্মীয় পরিজনদের ভুল বুঝিয়ে অনেক সময় কাজের অজুহাতে কোথাও একটু দু’চার দিন বেড়িয়ে আসি। ঠিক তেমনই শিল্প আনার নাম করে ওরা দুজনেও মাঝে মধ্যেই একটু আধটু বেড়িয়ে আসেন। 

তা এই দেশ বিদেশে বেড়াতে গিয়েই প্রথম জনের মনে হয়েছিল, এই বিমানটা তো অনেক দিনের, অনেকেই ব্যবহার করেছেন। কেমন যেন পুরনো পুরনো। এটা এবার পাল্টানো উচিৎ। যেমন ভাবা তেমন কাজ, এসে গেল আমেরিকার রাষ্ট্রপতির চেয়েও ভাল একটা বিমান, এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান। নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন সেই বিমান কিনতে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তা হোক না, সে খরচ তো পেট্রো পণ্যের দাম বাড়িয়ে কবেই তুলে নেওয়া হয়ে গিয়েছে। নতুন, ঝকঝকে, অত্যাধুনিক বিমানে চেপে দেশ বিদেশে ঘোরার মজাটাই আলাদা। বেরসিকেরা সেই মজার কতটুকুই বা বুঝবে? বোঝেনি, তাই তো সমালোচনার ঝড়। 

কিন্তু বুঝেছিলেন একজন। বুঝবেন নাই বা কেন, আগেই বলেছি দুজনের স্বভাব কিন্তু এক। তাই তো হোমওয়ার্কের জন্য এবার বিদেশ থেকে আনা হল বিমান। না কেনা হয়নি, আপাতত তিন বছরের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে সেটি। এয়ার ইন্ডিয়ার মত বড়সড় না হলেও, দশ আসনের ওই বিমানটি ভাড়া নিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রধানত মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের অন্য ভিআইপি-দের জন্যই এই বিমান ভাড়া নেওয়া হয়েছে বলে শোনা গিয়েছে। 

ফ্রান্সের জেসল্ট সংস্থার তৈরি দুই ইঞ্জিনের এই ফ্যালকন ২০০০ বিমানের জন্য মাসে কমপক্ষে দু’কোটি টাকা পঁচিশ লক্ষ টাকা খরচ হবে রাজ্য সরকারের। দিল্লির একটি সংস্থার কাছ থেকে যে-চুক্তিতে সেটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে, তাতে বলা আছে, প্রতি মাসে ন্যূনতম ৪৫ ঘণ্টা উড়ানের টাকা দিতে হবে। প্রতি ঘণ্টায় ওড়ার খরচ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। যার অর্থ, কোনও মাসে বিমান ৪৫ ঘণ্টার কম উড়লেও রাজ্যকে ৪৫ ঘণ্টার খরচই দিতে হবে। যার পরিমান সোয়া দুই কোটি টাকা। তবে বেশি উড়লে ঘণ্টা প্রতি আরও পাঁচ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা। এই হিসেবে তিন বছরে ওই বিমানের জন্য খরচ হবে কম করেও ৭০ থেকে ৭৫ কোটি টাকা। ওই বিমানের সঙ্গেই আসছেন দু’জন পাইলট, এক জন ইঞ্জিনিয়ার এবং বিমানসেবক। আগামী তিন বছর তারা শহরের পাঁচতারা হোটেলে থাকবেন। 

সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার কাছে হয় তো ৭৫ কোটি টাকা কিছুই নয়। কিন্তু হোমওয়ার্কের জন্য ছোটখাটো দিয়েই শুরু হোক না। গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীদেরও নিজস্ব বিমান আছে। আমরাই বা বাদ থাকি কেন? তবে দ্বিতীয় জনের সুপ্ত আশা, বছর তিনেক পরেই তিনি এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ানেই চড়বার সুযোগ পেয়ে যাবেন। সেই আশাতেই কি তিন বছরের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে বিমান? কে জানে…

(www.theoffnews.com - Air India One Falcon 2000)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours