ইরানী বিশ্বাস, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও পরিচালক, বাংলাদেশ:

১৯৬৪ সালে ‘পিটিভি’ হিসাবে যাত্রা শুরু করা রাস্ট্রীয় টিভি চ্যানেল বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নানা ধরণের অনুষ্ঠান প্রচার করে দর্শকের বিনোদন চাহিদা পূরণ করে আসছে। অনুষ্ঠান বিভাগের প্রথম ব্যবস্থাপক ছিলেন কলিম শরাফী। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম নাটক ছিল ‘একতলা দোতলা’ এটি ১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রচারিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে টেলিভিশনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং এর রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করা হয়। ১৯৭৫ সালে ডিআইটি ভবন ছেড়ে রামপুরায় টেলিভিশনের নিজস্ব ভবন তৈরি করা হয়। এখন সেটি রামপুরা টেলিভিশন সেন্টার নামে পরিচিত। 

এম এল সোনার বাংলা নাটকটি ২৮ মার্চ তারিখে টেলিভিশনে প্রচারে জন্য লেখা হয়েছিল। তখনও বাংলাদেশ স্বাধীণ হয়নি। সময়টি ছিল বিক্ষোভে উত্তাল। ১৯৭১ সালে ১৬ মার্চ নাটকটি রচনা করেছিলেন আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। পরবর্তীতে এই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে এই পান্ডুলিপির ভিত্তিতেই নাটকটি মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।

১৯৭১ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস ‘সংশপ্তক’থেকে ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তক নির্মান শুরু হয়েছিল। কিন্তু চার পর্ব প্রচারের পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় এর নির্মাণ ও প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৮৮ সালে আবার এর নির্মান কাজ শুরু হয়।

বরাবরই আমাদের টিভি নাটকে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কাহিনী উঠে এসেছে আবেগঘনভাবে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক ‘বাংলা আমার বাংলা’। নাটকটি লিখেছিলেন ড. ইনামুল হক, প্রযোজনা করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। 

১৯৭২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আমজাদ হোসেনের রচনা ও মুস্তাফিজুর রহমানের প্রযোজনায় প্রচারিত হয় আলোচিত মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘জনতার কাছে আমি’। মোর্শেদ চৌধুরির রচনা ও মোহাম্মদ বরকতউল্লাহর প্রযোজিত ‘এরা ছিল এধারে’ এ সময়ে উল্লেখিত আরো একটি নাটক। ১৯৭৩ সালে জেসমিন চৌধুরীর লেখা ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ নাটকটি প্রযোজনা করেন আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। শুধু তা-ই নয়, ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে টিভি নাটকে মুক্তিযুদ্ধ এসেছে বহুবার। একটা সময়ে এসে দেশের একমাত্র টেলিভিশন বিটিভিতে মুক্তিযুদ্ধের নাটক স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে নির্মিত হতে শুরু করে। আশির দশকের কাছাকাছি সময়ে এসে আরো কিছু চেতনা সমৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের নাটক বিটিভিতে প্রচার হয়। এর মধ্যে জিয়া আনসারীর ‘কোনো এক কুলসুম’, আকিকুল হক চৌধুরীর ‘কম্পাস’ রাবেয়া খাতুনের ‘বাগানের নাম মালানীছড়া’ জোবেদ খানের ‘একটি ফুলের স্বপ্ন’ এবং রাজিয়া মজিদের ‘জ্যোৎস্নার শূন্য মাঠ’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া হাবিবুল হাসানের রচনায় ও আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় ‘আমার দ্যাশের লাগি’ নাটকটি সে সময়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। এ ছাড়া মমতাজউদ্দীন আহমেদের লেখা মোস্তফা কামাল সৈয়দের প্রযোজনায় ‘এই সেই কন্ঠস্বর’ নাটকটি দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘আয়নায় বন্ধুর মুখ’ ও ‘একটি যুদ্ধ অন্যটি মেয়ে’ আসাদুজ্জামান নূরের ‘এ মোর অহংকার’ রাহাত খানের ‘সংঘর্ষ’ আল মনসুরের ‘শেকল বাঁধা নাও’ এবং ‘নয়ন সমুখে তুমি নাই’ আতিকুল হক চৌধুরীর ‘যদিও দুরের পথ’ এবং ‘স্বর্ণতোড়ন’ মামুনুর রশীদের ‘খোলা দুয়ার, রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস অবলম্বনে রফিকুল হক রচিত ‘ফেরারী সূর্য’ উল্লেখযোগ্য।

পরবর্তীতে বিটিভিতে শুরু হয় এ সপ্তাহের নাটক, বিশ্বনাটক, হীরামন, কন্যা-জায়া-জননী শিরোনামের নাটক। এগুলো নির্মাণ ও মানের দিক দিয়ে ছিল উচ্চমানের। এই সব নাটক এক সময় বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে পশ্চিমবাংলা, ত্রিপুরা, আগরতলার বাংলাভাষীদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সাপ্তাহিক নাটকের মধ্যে ছিল দূরবীন দিয়ে দেখুন, বাবার কলম কোথায়, শেষ পৃষ্ঠায় দেখুন, বাঁচা, পারলে না রুমকি, কালো সুটকেস, এখন দুঃসময়, নিলয় না জানি, এখন জোয়ার, কি চাহ শঙ্খচিল উল্লেখযোগ্য। এই সব নাটকের জনপ্রিয়তা খুঁজতে গিয়ে উঠে আসে অনেক কিছু। তারমধ্যে কলাকুশলীরা ছিলেন মঞ্চ সংশ্লিষ্ট। তাই তাদের নির্মানে ও অভিনয়ে ছিল মেধা ও যত্নের ছাপ। এসব নাটকের অধিকাংশই ছিল বিটিভির ইনডোর সেটে নির্মিত। (ক্রমশঃ)

(www.theoffnews.com - Bangladesh Bangla drama)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours