দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
যার নাম অনুভব, তাঁর অনুভবী হৃদয় থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। অনুভবী আলাভি ওরফে রোহন। জন্ম থেকেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। বর্তমানে একশো শতাংশ প্রতিবন্ধকতা। রামপুরহাট পুরসভার দশ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। সেখানেই খাওয়া দাওয়া ও শৌচ কর্ম। সেরিব্রাল প্যালসি রোগে আক্রান্ত। মুখের কথা জড়িয়ে যায়। তবুও এই ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহামারীর সময় তাঁর অনুভব থেমে নেই দুর্গত অসহায় মানুষের জন্য। ইচ্ছে এই দুঃসময়ে ট্রেনের হকার, বাসের শ্রমিকদের হাতে কিছু তুলে দেওয়া। যেটা নিজের থেকে শারীরিক ভাবে সম্ভব নয়, তাই নিজের ভাতার কিছু অংশ তুলে দেন রেড ভলেন্টিয়ার্সের সদস্যদের হাতে।
মা রেখা মল্লিকের সারাদিন কাটে রোহনকে নিয়েই। তিনি বলেন, সেরিব্রাল প্যালসি রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্ম থেকেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন রোহন। সাত বছর বয়সে বসতে পারতো। স্প্যাসটিক সোসাইটিতে যেতে পারতো। কিন্তু ওই বয়সেই ভুল ফিজিও থেরাপির কারণে তাঁর একটি পা অকেজো হয়ে যায়। অর্থাৎ ভেঙে যায়। তারপর শয্যাশায়ী। একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী। বিছানায় সব কিছু। টিভি দেখে দেশের খবর দেখে। মামা সঞ্জীব মল্লিক রামপুরহাট পুরসভার সতেরো নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার। সেই মামার জনসেবা তাঁর প্রেরণা। রেখা মল্লিকের কাছ থেকে জানা, তাঁর স্বামী সেখ সাবেকুল হকের ছোট কাপড়ের দোকান আছে।
সাত বছর বয়স থেকেই রোহন বিছানা গত। আজ রোহনের বয়স পঁচিশ। তার ভাই সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছে। ভাইয়ের মতো পড়ার ইচ্ছে থাকলেও রোহনের পড়া হয়নি। মাসে দুহাজার টাকা ভাতা পায় সে। সেই টাকা থেকেই দুই হাজার টাকা লকডাউনের সময় দুঃস্থ মানুষের জন্য দুই হাজার টাকা তুলে দেয় সে। এবারও হকার ও শ্রমিকদের জন্য দুই হাজার টাকা তুলে দিতে খুব খুশি। কথা অস্পষ্ট হলেও চোখে মুখে ফুটে ওঠা উচ্ছ্বাসের ভাষা স্পষ্ট।
মা রেখা মল্লিক জানান, ওর বাবা ঠাট্টা করে বলে, তোর ভাতার টাকাটা আমাকে দে। সংসারে লাগায়। রোহন সরাসরি 'না' করে জড়ানো কথায় বলে, ওদের কষ্ট হচ্ছে না? অভাবের সংসার। স্বামীর ছোট্ট কাপড়ের দোকান। কিন্তু মনের অভাব নেই পরিবারের। রেখা মল্লিক তাঁর ছেলেকে আক্ষরিক অর্থে প্রতিবন্ধী মনে করেন না। করবেন বা কেন? যার মন সাধারণ অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে সক্ষম। সে প্রতিবন্ধী হতে পারে না। রেখা মল্লিক একজন গর্বিত মা। কুর্ণিশ তাঁকে।
(www.theoffnews.com - corona donation handicapped)
❤️
ReplyDelete