তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, পাইকপাড়া, কলকাতা:

হজরত মৌলা আলী ছিলেন সেকালের কলকাতার এক ধার্মিক মানুষ। ঊনবিংশ শতাব্দীতে তাঁর সমাধির কাছে এক পবিত্র স্থান নির্মাণ করা হয়।লোয়ার সার্কুলার রোড সুরেন ব্যানার্জী রোডের সংযোগ স্থলে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬১ সালে। ওয়্যাকফ এস্টেট এর দ্বারা এটি পরিচালিত হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার ভক্তরা, শত শত অনাথ ও গরিবদের খাবার বিতরণ করেন। এইখানে একটি মাদ্রাসা আছে, এইখানে আরবি, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এনার নামেই এই রাস্তা।

স্বাধীনতা আন্দোলন ও বিপ্লবী সমিতির স্থাপন এবং এই সব ইতিহাসের সাথে সার্কুলার রোডের নাম বিশেষ ভাবে জড়িত। এই অঞ্চল গুলিতে জঙ্গল ভর্তি, লোক সংখ্যা কম, পুলিশের দৃষ্টি সহজে পড়বে না তাই বোমা তৈরির কারখানা এই রাজপথের ধরে গড়ে উঠেছিল। পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিলেন বাঘা যতীন। তাঁর প্রিয় শিষ্য অতুল কৃষ্ণ ঘোষ (১৮৯০-১৯৬৬) হিন্দু ইস্কুল থেকে পাশ করে স্কটিশ চার্চ কলেজে বিজ্ঞান পড়তেন। উচ্চ বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে অতুল কৃষ্ণ ঘোষ বোমা তৈরিতে পারদর্শিতা লাভ করেন।

সম্ভবত ১৯১২ সালের প্রথম দিকে রাজা বাজারে ২৯৬/১ আপার সার্কুলার রোডে একটি বোমা তৈরির কারখানা করেন। ২১ নভেম্বর ১৯১৩ সালে রাজা বাজারের এই বাড়িতে তল্লাশি হয়, ওই সময়ে দীনেশ দাশগুপ্ত, সারদা গুহ, চন্দ্রশেখর দে প্রমুখ গ্রেপ্তার হন। রাজা বাজার বোমার কারখানার সাথে জড়িত অন্যতম পুলিশ ইন্সপেক্টর নৃপেন ঘোষকে ১৯১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি চিৎপুর রোডে হত্যা করা হয়। খালি বোমা তৈরি করে ইংরেজদের  সাথে লড়াই করা যাবে না। তাই যতীন্দ্র নাথ ওরফে বাঘা যতীন শ্রী অরবিন্দের স্মরণ নেন। জে এন উপাধ্যায় ছদ্মনামে তিনি বরোদার সৈন্য বাহিনীতে যোগদান করেন। সশস্ত্র অভ্যুত্থান ছিল শ্রী অরবিন্দুর সংকল্প। যতীন সেই রূপায়ণে ব্রতী হলেন। কলকাতায় এসে  আপার সার্কুলার রোডের ১০৮ নম্বর একটি বাড়ি ভাড়া নিলেন। তাঁর সহধর্মিনী চিন্ময়দেবী ও বিধবা ভগ্নির সাথে এই বাড়িতে বাস করতে থাকেন। এটি সম্ভবতঃ ১৯০৩/১৯০৪ সালের কথা।

পাশেই একটা বড় মাঠ ছিল। এইখানেই ব্যায়াম চর্চা, কুস্তি, লাঠিখেলা, ঘোর দৌড়, সাঁতার চর্চা হতো। এছাড়াও শিক্ষা দান করা হতো। সার্কুলার এই বাড়িটি একটি বিপ্লবী শিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়।পরে অনুশীলন সমিতিও যোগদান করেন। এইখানে পড়ানো হতো শিখ অভ্যুত্থান, ফরাসি বিপ্লব, সিপাই বিদ্রোহ, আয়ারল্যান্ডের মুক্তি যুদ্ধের কাহিনী প্রভৃতি।সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইতালির জাগরণের কাহিনী। শ্রী অরবিন্দু নিয়মিত মাসোহারা পাঠাতেন। এরপরে বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলন হিন্দুদের সাথে মুসলিম সম্প্রদায় হাতে হাত মিলিয়ে শপথ নিয়েছিলেন লড়াইয়ের জন্য। এবং সেটি সংগঠিত হয়েছিল সার্কুলার রোডের ধরে রাজা বাজারে। তাই স্বাধীনতার ইতিহাসের কথা রাজা বাজারের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

স্বদেশী আন্দোলন ছাড়াও স্বদেশী শিল্পের বিকাশেও শিল্প প্রদর্শনী গড়ে উঠে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, জগদীশ বসু, রাসবিহারী বসু। আর একজনের নাম খুব উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন রাজা মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজ ৯২ নম্বর আপার সার্কুলার রোদে অবস্থিত। এই ১২ বিঘা জমির মালিক ছিলেন স্যার তারকানাথ পালিত। এই বিজ্ঞান কলেজ তারকানাথ পালিত ও রাসবিহারী ঘোষের বদান্যতায় এবং স্যার আশুতোষের একান্ত আগ্রহ ও উৎসাহে গড়ে উঠে। বহুমূল্য যন্ত্রপাতি  কেনার হাত বাড়িয়ে দিলেন কাশিম বাজারের রাজা মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দী। এছাড়া এই রোডের ধারে প্রচুর স্কুল ও পাঠশালা গড়ে উঠতে থাকে। এর কিছু দিন পর রাসবিহারী আস্তে আস্তে প্রায় ২৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা দান করেন এই বিজ্ঞান কলেজের জন্য। বিজ্ঞান সাধনার চর্চা ও উন্নতির জন্য আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র লিখছেন, আমার যুবক সহকর্মী রামন ছিলেন একাই একশো।

ভারতের প্রোথিত যশা সেরা বিজ্ঞানী তৈরি হয় এই বিজ্ঞান কলেজের মাধ্যমে আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও সি ভি রমনের নের্তৃত্বে। এই রাস্তার ওপর গড়ে উঠে ম্যাথমেটিকাল সোসাইটি (১৯০৮)।  ভারতের শ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ গণ এই সমিতির সদস্য ছিলেন। মেঘনাদ সাহা ও সত্যেন বসু তো ছিলেন আগের থেকেই। ম্যাথমেটিকাল সোসাইটির মতো বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজের আঙিনায় জন্ম লাভ করে। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের স্থাপনের সংকল্প করা হয় ১৮ অক্টোবর ১৮৪৭ সালে। সভা হয় সার্কুলার রোডের বিজ্ঞান কলেজে। সভাপতিত্ব করেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। ঠিকানা ৯২ আপার সার্কুলার রোড। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ও প্রসার। সার্কুলার বিজ্ঞান কলেজের পাশে আর একটি মহান প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। যার স্রষ্টা ছিলেন আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু। এটি ৯৩ নম্বর আপার সার্কুলার রোডে অবস্থিত। এইখানে আরও অনেক বছর পরে গড়ে উঠে তাঁর গবেষনাগার। যেটি বসু বিজ্ঞান মন্দির নামে পরিচিত। এটি নির্মিত হয় ১৯১৭ সালের ৩০ নভেম্বর। ভারতের ইতিহাসের এক স্মরণীয় দিন। ওই দিনে তাম্র ফলকটি প্রোথিত হয়।

'ভারতের গৌরব ও কল্যাণ কামনায় এই বিজ্ঞান দেশ চরণে নিবেদন করিলাম।'

শ্রী জগদীশ চন্দ্র বসু। ১৯৭৪।

বিজ্ঞান ছাড়াও মন্দির প্রতিষ্ঠায় তাঁর সঞ্চিত সমস্ত অর্থ প্রদান করলেন। নিজস্ব গবেষণা ছাড়াও তাত্ত্বিক ও ফলিত পদার্থ তত্ব, কৃষি ও উদ্ভিদ রসায়ন এবং নৃতত্ব বিষয়ে গবেষণার ব্যবস্থা বিজ্ঞান মন্দিরে হয়েছিল। বসু বিজ্ঞান মন্দিরের একটি পত্রিকা ছিল। নাম ট্রানজাকসন। এই পত্রিকায় সমস্ত গবেষণার খবর প্রচারিত হতো। জগদীশ বসুর মৃত্যু হয় ১৯৩৭ সালের নভেম্বর মাসে।

রাজা বাজারের বিপরীত দিকে আপার সার্কুলার রোড ও কেশব চন্দ্র সেনের সংযোগ স্থলে দাঁড়িয়ে ভিক্টরিয়া ইনস্টিটিউশন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশব চন্দ্র সেন। এনার অবদান ও কম নয় শিক্ষার ব্যাপারে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অনুশীলনের জন্য যেটা ওই সময়ে সাড়া জাগিয়েছিল তার নাম বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ। ১৩০১ বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ তৈরি হয়। সভাপতি ছিলেন রমেশ চন্দ্র দত্ত, সহ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নবীন চন্দ্র সেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের মতো আর একটি গ্রন্থালয় আপার সার্কুলার রোদে গড়ে উঠে। নাম রামমোহন লাইব্রেরি। ১৯০৫ সালে রামমোহন লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হলো। ১০১/১ নম্বর আপার সার্কুলার রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে। এই গ্রন্থাগারে ছিল বিশাল পুস্তক ভান্ডার। রবীন্দ্রনাথ এর মৃত্যুর পর এইখানেই তাঁর প্রথম জন সম্বর্ধনা হয়। এটি রবীন্দ্রনাথের খুব পছন্দের গ্রন্থাগার ছিল। বর্তমানে এর নাম হলো রামমোহন মঞ্চ। এটি রামমোহন লাইব্রেরির সভা গৃহ ছিল।

হরিশ মুখার্জি রোড। এর প্রাচীন নাম ছিল বেদিয়া পাড়া রোড। ১৮৯৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এই বেদিয়া পাড়ার রোডের নাম করণ হয় হরিশ চন্দ্র মুখার্জি রোড। হরিশ পার্ক এনারই নামে। এটি ভবানীপুরে। হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় (ইংরেজি: Harish Chandra Mukherjee), (জন্ম: ২৪ জুলাই ১৮২৪, ১২৩১ বঙ্গাব্দ), (মৃত্যু: ১৬ জুন ১৮৬১) একজন সাংবাদিক এবং সমাজসেবক। তিনি তার হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকার মাধ্যমে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা সবার কাছে তুলে ধরেন। উনিশ শতকে কৃষকদের বিভিন্ন বিদ্রোহকে অধিকাংশ সংবাদপত্র এবং সাময়িকপত্র খুব একটা ভালো নজরে দেখেনি। সংবাদপত্র এবং সাময়িকপত্র গুলি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং জমিদার শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করত। তবে নীল বিদ্রোহে কৃষকদের প্রতি বাঙালী বুদ্ধিজীবী সহানুভূতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নীল বিদ্রোহে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে নীলকরের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল তত্ত্ববো্ধিনী সহ অনেক সংবাদপত্র এবং সাময়িকপত্র। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিল হিন্দু পেট্রিয়ট। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের প্রত্যয়ী মনোভাব এবং ক্ষুরধার কলম হিন্দু পেট্রিয়টকে স্মরণীয় করে রেখেছে। সাপ্তাহিক ইংরেজি সংবাদপত্র হিসাবে হিন্দু পেট্রিয়ট প্রথম আত্মপ্রকাশ করে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ৬ জানুয়ারি।            

পত্রিকার স্বত্বাধিকারী ছিলেন মধুসূদন রায়। এবং সম্পাদক ছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। কলকাতার কলাকার স্ট্রিটের অবস্থিত মধুসূদন রায়ের প্রেস থেকে এটি প্রকাশিত হতো। প্রথম থেকে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৮৫৫ খ্রীস্টাব্দে জুন মাসে হরিশচন্দ্র তার দাদা হারাণচন্দ্রের নামে পত্রিকার স্বত্ব মধুসূদনের কাছ থেকে কিনে নিয়ে পত্রিকার সম্পাদক হন। যা মৃত্যুকাল অবধি টিকে ছিল। হরিশচন্দ্রের মৃত্যুর পর কালীপ্রসন্ন সিংহ হরিশচন্দ্রের স্ত্রীর কাছ থেকে পত্রিকার সমস্ত স্বত্ব কিনে সম্পাদনার দায়িত্ব গিরিশচন্দ্র ঘোষের হাতে তুলে দেন। ১৮৯২ খ্রীষ্টাব্দে পত্রিকাটি দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। ১৯২৪ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত পত্রিকাটি চালু ছিল। এই পত্রিকাটি শুরুর দিকে ছিল ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ এর মুখপত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল।

নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। নীলচাষী সম্পর্কে মিশনারিদের এবং মিশনারি ও নীলকর বিরোধের আসল কারণ পত্রিকাটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে। যোগেশচন্দ্র বাগল লিখেছিলেন “নীল হাঙ্গামার(১৮৫৯ খ্রিঃ) সময় হরিশচন্দ্রের গৃহ অতিথিশালায় পরিণত হইয়াছিল। এই সময় ‘পেট্রিয়ট’ নিয়মিত খরচ চালিয়ে তার বেতনের যাহা অবশিষ্ট থাকিত তৎসমুদয়ই নীলচাষীদের সেবায় ব্যয়িত হইত।”

দুঃখের কথা হল, বাঙালি তো আত্মবিস্মৃত জাতি, তাই ওঁর একটা ছবিও পাওয়া যায় না। উনি কেমন দেখতে ছিলেন, তা জানার উপায় নেই। আরও দুঃখের বিষয়, ভবানীপুরে হরিশ মুখার্জি রোডে ওঁর যে বসত বাড়িটা ছিল, সেটা একসময় ঐতিহ্যবাহী ভবন বা হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের তালিকায় ছিল। কিন্তু পরে রাজনীতির নানা কারণে ওই ভবনটিকে ঐতিহ্যবাহী ভবনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় এবং বলা হয় যে এখানে যে উনি থাকতেন এমন কোনও প্রমাণ নেই। ওই বাড়িটি ভেঙে দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখেছি যে ওই বাড়িতে ফলক লাগানো ছিল যে এই বাড়িতে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বসবাস করতেন।উনার মৃত্য হয়েছিল মাত্র ৩৭ বছর বয়সে। 

বাঙালি জাতিকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখালেন তিনি, তিনি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। রসায়নের ক্লাস। ছাত্রদের সামনে এক টুকরো হাড় হাতে নিয়ে বুনসেন বার্নারে পুড়িয়ে মুখে পুরে দিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ছাত্রদের শেখালেন, এটা ক্যালসিয়াম ফসফেট। এছাড়া আর কিছুই নয়। সেটা কোন প্রাণীর হাড় তাও আর চেনার উপায় রইল না। রসায়ন দিয়ে শুধু রসায়ন শিক্ষাই নয়, ছাত্রদের মনে ধর্মান্ধতার মূল উপড়ে ফেলার মন্ত্রটিও প্রবেশ করিয়ে দিতেন তিনি। যত টুকু দরকার, তার বাইরে কতটুকুই বা পড়ার আগ্রহ আছে আমাদের বইবিমুখ আগামীর? অথচ, বই পড়ার আগ্রহ থেকেই জন্ম হয়েছিল এই বাঙালি মনীষীর। নিজের সফলতাকে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন সার্থকতার শিখরে।

১৮৬১ সাল, ২ অগস্ট অবিভক্ত বাংলাদেশের রাড়ুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রফুল্লচন্দ্র। প্রপিতামহ মানিকলাল রায় ছিলেন নদিয়া (কৃষ্ণনগরের) ও যশোরের কালেক্টরের দেওয়ান। পিতামহ আনন্দলাল রায় ছিলেন যশোরের সেরেস্তাদার। পিতা হরিশচন্দ্র রায় ও মাতা ভুবনমোহিনী দেবী। বাবা মায়ের আদরের সেই ছোট্ট ফুলু পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন ‘মাস্টার অফ নাইট্রাইটস’ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।

কেমন ছিল তাঁর এই জীবন পথ? নিজ গ্রামে পিতার প্রতিষ্ঠিত স্কুলেই তাঁর শিক্ষার সূচনা। পিতা পুত্রের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। বই পড়া অপেক্ষা পিতার সঙ্গে কথা বলে অনেক বিষয় বেশি করে শিখতেন। ১৮৪৬ সালে সদ্য প্রতিষ্ঠিত কৃষ্ণনগর কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ, ক্যাপ্টেন ডি এল রিচার্ডসনের লেখা ‘ব্রিটিশ কবিগণের জীবনী’ বইটি তিনি পান তাঁর পিতার কাছ থেকে। এটাই ছিল তাঁর অমূল্য পৈতৃক সম্পদ। (ক্রমশঃ)

(www.theoffnews.com - Kolkata roads Bengal renaissance)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours