দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
বাঙালি নিশ্চয়ই ভুলতে পারবেন না তুলসী চক্রবর্তীকে। যাঁর সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন আমেরিকায় জন্মালে উনার ঝুলিতে অস্কার শোভা পেত। অভাবের তাড়নায় তাঁর স্ত্রীকে ভিক্ষে করে দুমুঠো অন্ন যোগার করতে হয়েছে। সব শিল্পী ভোটে টিকিট পান না। তাই মহামারী অতিমারী এলে মনোরঞ্জন করার মানুষগুলো বাড়ির পুরাতন আসবাবের মতো এক কোনে পড়ে থাকেন! তবুও আশার আলো, করোনা অতিমারীতে শিল্পীদের পাশে থাকার ব্রত নিয়েছে সংস্কার ভারতী।
করোনা অতিমারী কাকে ছোঁয়নি! এ প্রশ্নের অবকাশ আজ নেই। প্রান্তিক শিল্পীদের অবস্থা করুণ। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে মঞ্চে সব অনুষ্ঠান বন্ধ। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিল্পীরা। এমনই শতাধিক শিল্পীদের পাশে দাঁড়ালো সাংস্কৃতিক সংস্থার সদস্যরা। তাদের কেউ গৃহবধূ, কেউ নৃত্য, কেউ সঙ্গীত, অনেকেই ছবি আঁকা শেখেন। গান বাজনাকে ভালোবেসে তারা তৈরি করছে সাংস্কৃতিক সংস্থাও। দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে তাঁরাই পৌঁছে দিচ্ছেন শিল্পীদের বাড়ি ।
গত প্রায় ১৬ মাস যাবৎ অতিমারীর কারণে মানুষ নানাভাবে বিপর্যস্ত। বিশেষতঃ শিল্পী মানুষেরা যারা পেশাগতভাবে গানবাজনার সাথে যুক্ত, এই মুহুর্তে তারা আর্থিকভাবে একটা সংকটময় অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। সিউড়ি শহরের একটি সাংস্কৃতিক দল সংস্কার ভারতী এইসব শিল্পীদের পাশে থাকার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। সিউড়ি শহরের বাসিন্দা গৃহবধূ, স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা একজোট হয়ে সাংস্কৃতিক চর্চার লক্ষ্য নিয়ে বছর ভর নানা অনুষ্ঠান করে থাকে। কিন্তু করোনা অতিমারীর কারনে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ সমস্ত অনুষ্ঠান। অনলাইনে সাংস্কৃতিক চর্চা হলেও সভা গৃহের দরজা সম্পূর্ন রূপে বন্ধ। ফলে বহু শিল্পীর রুজি রোজগারে টান পরেছে। বিশেষত যারা গান বাজনাকে অবলম্বন করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা আজ চরম অর্থ সংকটে। তাই সংস্কার ভারতী সাংস্কৃতিক সংস্থার সদস্যরা নিজেরাই অর্থ দিয়ে দৈনন্দিন জীবন ধারনের জন্য আবশ্যক সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে শিল্পীদের বাড়ির দরজায়।
এই উদ্যোগে নাম দেওয়া হয়েছে - "শিল্পীদের পাশে শিল্পীদের সাথে সংস্কার ভারতী পরিবার"। এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে গত ১৩ই জুন থেকে সদস্যরা দৈনন্দিন প্ৰয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে সিউড়ি শহর, পঞ্চায়েত এবং ব্লক স্তরের শিল্পীদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। সংস্থার সম্পাদিকা সঙ্ঘমিত্রা কবিরাজ জানালেন, "এই কর্মসূচীর মাধ্যমে আমরা প্রায় ১০০জন আর্থিকভাবে অসহয়তার মধ্যে থাকা শিল্পীদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।" সিউড়ি সেহাডাপাডার বাসিন্দা পারক্যাশান শিল্পী বিষ্ণু হাজরা জানান, সংস্কার ভারতীর এই উদ্যোগে আমরা উপকৃত হলাম।"
ইতিমধ্যেই যে সকল শিল্পীদের কাছে সাহায্যের সামগ্রী পৌঁছে গেছে তারা সকলেই সংস্কার ভারতী সিউড়ি শাখার এই আর্থিক ও মানসিকভাবে পাশে থাকার উদ্যোগে আবেগ মথিত। কালীপুর গ্রামের বাউল শিল্পী গোঁসাই দাস বাউল বলেন, "প্রত্যন্ত গ্রামে এসে সংস্কার ভারতী ছেলে মেয়েরা যে ভাবে আমাদের পাশে দাঁড়লো তাতে আমারা আপ্লুত।"
(www.theoffnews.com - corona Sanskar Varati Birbhum)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours