তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, পাইকপাড়া, কলকাতা:
যীশু কেমন দেখতে ছিলেন? এই নিয়েও কম গবেষণা হয়নি। সেই আলোচনায় দ্বিতীয় পর্বে আসবো।
যীশু কি আধ্ম্যাতিক মহাপুরুষ নাকি ইহুদি বিপ্লবী ছিলেন ধর্মের মোড়কে। বিবিসি সমীক্ষা অনুযায়ী, যিশুখ্রীষ্টকে কি ভারতের কাশ্মীরে সমাধিস্থ করা হয়েছিল? কয়েক কোটি টাকার প্রশ্ন। যে প্রশ্নের উত্তর আজও ঘন রহস্যের আবরণেই মোড়া রয়েছে। স্মৃতি কি যিশুখ্রীস্ট মারা গিয়েছিলেন কাশ্মীরে? একটু বিশ্লেষন করা যাক গভীরে গিয়ে তথ্য সহকারে।
শোনা যায়, যিশু ভারতে এসেছিলেন। বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। ভারতে থেকে পাঠ নিয়েছেন বৌদ্ধ শিক্ষা ও পদ্ধতির। গবেষকরা বহু প্রাচীন বৌদ্ধধর্মের মধ্যে খ্রীস্টানধর্মের পদ্ধতিগত অনেক মিলও খুঁজে পেয়েছেন। দাবি করা হয়, একটা সময় যিশু 'নিখোঁজ' ছিলেন। নিউ টেস্টামেন্টেও সেই সময়টার উল্লেখ নেই। গবেষকদের ধারণা, ওই সময় আফগানিস্তান, উত্তর ভারত লাগোয়া অঞ্চলে চলে গিয়েছিলেন যিশু। পবিত্র জেরুজালেমে ফিরতে চাননি।
যিশুর কৈশোর ও প্রথম যৌবন, মানে, ১২ থেকে ৩০ বছর বয়স অবধি তিনি কী করেছেন, তা নিয়েই ধন্দ বা বিতর্ক সবচেয়ে বেশি। সেটাই 'লস্ট ইয়ারস'। যিশুর জীবনীতে সেই সময়টার সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। বাইবেলেও এর উল্লেখ নেই। এই সময়কাল নিয়ে অনেক কিছুই শোনা যায়। গবেষকদের কারও কারও ধারণা, যিশু 'সিল্ক রোড' ধরে পূর্বাভিমুখে রওনা দেন। এখন যেখানে রয়েছে ভারত, তিব্বত ও চিন। কিন্তু পালালেন কি করে এত প্রহরীর সামনে।গবেষকরা অনুমান করছেন যিশু সাসপেণ্ডেড অ্যানিমেশন বা নির্বিকল্প সমাধিতে চলে যাওয়ার জন্যই সম্ভবত ইহুদী সৈন্যরা তাঁকে মৃত বলে ভুল করেছিলেন। বা কোনও ভাবে অজ্ঞান ছিলেন প্রানের স্পন্দন খুঁজে পাইনি। যিশুকে প্রহরীরা ক্রস থেকে নামিয়ে কফিনে রাখেন। কিন্তু তিন ঘন্টা পরে এসে দেখলেন যিশু কফিনে নেই। ওই সময়ে প্রহরীদের দ্বিতীয়বার আসার আগে যিশুর কিছু ভক্ত যিশুকে সুস্থ করে তোলেন। আর পরে তো পালাবার প্রশ্ন আসে খুব স্বাভাবিক ভাবে। অবশ্যই পালাবেন কিন্তু পশ্চিম বা দক্ষিণ দিকে নয় তাহলে তো আবার রোমান সাম্রাজ্যের খপ্পরে পড়বেন। তিনি পুবের দিকে পালিয়েছেন মানে এশিয়া অর্থাৎ ভারতের দিকে।
প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, এই সময় সমাধির প্রহরীরা কি করছিল? একটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন, যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করবার দিনটি ছিলো ইহুদীদের উৎসব ‘সাবাথ’ এর দিন। এইদিন তাঁরা পরদিনের জন্য প্রস্তুতি নেন, বিশ্রাম নেন। কোনও কাজ করে না। অনেকটা আমাদের বিশ্বকর্মা পূজার মতো। সুতরাং এইদিন তাঁরা কড়া মনোভাব নিয়ে একজন মৃত ব্যক্তির সমাধি পাহাড়া দিচ্ছিলেন, একথা মনে করবার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই। যাই হোক গবেষকরা বলছেন, হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মে যিশু মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। গবেষকদের এই দলটিই বিশ্বাস করেন, সেই আসার পর আর নিজের শহরে ফিরে যাননি। বর্তমানে যা কাশ্মীর, সেখানেই তাঁর দেহবসান হয়। সমাধিস্থও করা হয় কাশ্মীরে।
পশ্চিম ভারতের গোয়া থেকে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা নবহিন্দ টাইমসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে ভারতেরও কয়েক জন গবেষক দাবি করেন, ওই 'লস্ট ইয়ারস'-এ যিশু এশিয়াতেই ছিলেন। পুরী ও বেনারসের হিন্দু মন্দিরগুলিতে ঘুরেছেন। পড়ে গিয়েছেন তিব্বতের বৌদ্ধ বিহারে। তাতে তিনি সমৃদ্ধ হয়েছেন। তাঁর অহিংস দর্শনকে আরও শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ-ও শোনা যায়, সে সময় ভারতের নামী কয়েক জন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাত্ হয়েছে।
আর একদল গবেষক যিশুর এই এশিয়ায় আসার তত্ত্ব স্বীকার করে বলেন, তাঁর যখন ৩০ বছর বয়স, স্বদেশে ফিরে যান। সেখানে ধর্মপ্রচার শুরু করেন। ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ এখানেই।গবেষকদের একাংশের দৃঢ় ধারণা, বহু বছর যিশু ভারতে কাটিয়েছেন। মধ্য প্রাচ্যে আর ফিরে যাননি। কাশ্মীরে মারা যাওয়ার পর তাঁর দেহ শ্রীনগরের রোজা বাল মাজারে সমাধিস্থ করা হয়।
আবার এও শোনা যায়, ক্রুশবিদ্ধ যিশু কোনও ভাবে বেঁচে গিয়ে, কাশ্মীরে চলে আসেন। দূরত্ব আড়াই হাজার মাইল। সঙ্গে মা মেরি ছাড়াও ছিলেন কিছু ভক্ত। শ্রীনগরের সমাধিক্ষেত্রের পাশে তাঁরা যে পদচিহ্ন রাখা রয়েছে, তাতে স্পষ্ট ক্রশবিদ্ধের দাগ রয়েছে।
শ্রীনগরের এই রোজা বাল মাজারের তত্ত্ব, অশীতিপর বয়স পর্যন্ত কাশ্মীরেই ছিলেন যিশু। সেখানে বিয়েও করেন। তাঁর অনেক সন্তানও ছিল। বাইবেলে বলা আছে, যিশু স্বর্গে চলে যান। কাশ্মীর হল সেই ভূস্বর্গ। কোনও কোনও কাশ্মীরির বিশ্বাস, তাঁরা আসলে ইজরাইলের হারিয়ে যাওয়া দশ উপজাতিদেরই এক উত্তরপুরুষ।
যিশুর সমাধিক্ষেত্র বলে যা দাবি করা হয়, সেই রোজা বাল মাজার নিয়ে ভারত সরকারের প্রযোজনায় তৈরি একটি তথ্যচিত্রও রয়েছে। নাম: The Roza Bal Shrine of Srinagar। যে মাজারে রয়েছে ইউজা আসাফের সমাধি, যিনি আসলে নাকি যিশু খ্রীস্ট। ওই তথ্যচিত্রেও দাবি করা হয়, টিনএজ বয়সে যিশু ভারতে এসে পঞ্জাব, রাজস্থান ছাড়াও পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির, রাজগীর ছাড়াও হিমালয় অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাদের তথ্যের সমর্থনে পরিচালক দাবি করেন, আরবি, পার্সি ও সংস্কৃতে লেখা প্রাচীন পুঁথিতেও তাঁদের তথ্যের সমর্থন রয়েছে।
যিশু কি ভারতে এসেছিলেন? প্রাচীন হিন্দু এবং বৌদ্ধ দর্শনের সংস্পর্শে কি তিনি আসতে পেরেছিলেন এই প্রশ্নগুলি আজও বিতর্কই রয়ে গেছে। ঠিক একই ভাবে অজানা থেকে গেছে নিউ টেস্টামেন্ট-এর সাইলেন্ট ইয়ার্সেও। বাইবেল-এর নিউ টেস্টামেন্ট বা নূতন নিয়মে উল্লেখ নেই যিশুর জীবনের ১৮ টি বছরের। যাবতীয় বিতর্ক এবং প্রশ্ন এই সময়কে ঘিরেই।
মধ্যযুগের শেষ দিকে আর্থারিয়ান কিংবদন্তি অনুযায়ী যুবক যিশু ব্রিটেনে গিয়েছিলেন। সমসাময়িক অন্য তথ্য বলে, জীবনের ১২ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে কোনও এক সময়ে যিশু ভারতে এসেছিলেন। মূলধারার খ্রিস্টান সাহিত্য এই দাবি উড়িয়ে দেয়। তবে যিশু তথা খ্রীস্ট ধর্মে ভারতীয় প্রভাব নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম লুই জাকোলিথের বই ‘লা বাইবেল দাঁ ল্যাঁদ’। অর্থাৎ দ্য বাইবেল ইন দ্য ইন্ডিয়া। তবে জাকোলিথ একবারও দাবি করেননি যিশু ভারতে এসেছিলেন। তিনি তুলনা করেছেন কৃষ্ণ এবং যীশুর জীবন। খ্রাইস্ট এবং কৃষ্ণের নামের মধ্যেও মিল খুঁজে পেয়েছেন তিনি। অন্যদিকে জাকোলিথের তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন জার্মান পণ্ডিত ম্যাক্স মুলার।
জাকোলিথের থেকে আবার আরও এক কদম এগিয়ে গেছেন নিকোলাস নোটোভিচ। এই রাশিয়ান যুদ্ধ-সাংবাদিক ১৮৮৭ সালে গিয়েছিলেন লাদাখে। সেখানে হেমিস বৌদ্ধ মঠে তিনি জানতে পারেন Life of Saint Issa, Best of the Sons of Men সম্বন্ধে। ইসলামে আরবি ভাষায় যিশুকে ইসা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে নিকোলাস বই লেখেন। ১৮৯৪ সালে ফরাসি ভাষায় সেই বই প্রকাশিত হয়। নাম, 'লা ভি ইনকনিউ দ্য জেসাস ক্রাইস্ট' (Unknown Life of Jesus Christ)। ইংরেজিতে যার অনুবাদ বের হয় Life of Saint Issa বলে।
যিশুর মৃত্যু নিয়েও আছে প্রশ্ন এবং দ্বন্দ্ব। অনেক মত বলে, যিশু কাশ্মীর অথবা রোমে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু উপরি উক্ত কারণ গুলো বিশ্লেষণ করলে তিনি রোমে যেতে পারেন না, এটা প্রায় অসম্ভব। বোঝা যায় Ahmadiyyas-এর প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গুলাম মনে করতেন, ১২০ বছর বয়সে কাশ্মীরে প্রয়াত হন যিশু। সেখানে তাঁর নাম ছিল ইউজ আসফ। অষ্টাদশ শতকের কাশ্মীরের সুফি কবি খাজা মহম্মদ আজম দিদামারিও উল্লেখ করেছেন এই ইউজ আসফের কথা। এবং এই আসফ নাকি একজন বিদেশি যুবরাজ ছিলেন। পশ্চিমের কিছু ভারতবিদ আবার বলেন, কাশ্মীর বা রোম নয় | যিশু প্রয়াত হয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধের প্রয়াণের শহর, কুশিনগরে।
ভারতে তখন চলছে কুষাণ যুগ। কাশ্মীরের জোজিলা গিরিপথের কাছে হেমিস বৌদ্ধ মঠে দেহত্যাগ করলেন পশ্চিম দেশীয় সাধক ঈশা। শ্রীনগরের কাছে “রোজাবাল”, সেখানে তাঁকে সমাধি দেওয়া হয়। কাশ্মীরে সাধুসন্তদের সমাধিকে রোজাবাল বলা হয়। কাশ্মীরের অধিবাসীরা একজন প্রাচীন হিব্রুভাষী ইহুদি পুণ্যবান পুরুষের কথা বলে আসছে। তাঁর নাম উজ আসাফ (Yuz asaf) অর্থাৎ “Leader of Healed”। এই উজ আসাফই হলেন ঈশা। ঈশাই হলেন যিশু খ্রীষ্ট। কাশ্মীরে মুসলিম আগমনের পূর্বে বৌদ্ধ ও হিন্দুরা রোজাবাল দেখাশোনা করত। পরে পঞ্চদশ শতকে মুসলিম এক পীরকে রোজাবালে সমাহিত করা হয়। সেই পীরের নাম সৈয়দ নাসর-উদ-দিনিস। যিশুর জীবনের ১৩ থেকে ৩০ বছরের কথা বাইবেলে উল্লেখ নেই। খৃষ্টান দুনিয়া সযত্নে এড়িয়ে চলে ওই নিয়ে চর্চা। কারণ হিসাবে মনে করা হয় যে, যিশুর উপর খৃষ্টান দুনিয়া তথা ভ্যাটিকানের একাধিপত্য থাকবে না সব প্রকাশ পেলে। গবেষকদের মতে যিশুর শান্তি, অহিংসা ও প্রেমের বাণী হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রভাবে প্লাবিত। মিশরের আলেকজেন্দ্রিয়া বৌদ্ধধর্ম চর্চার বড় কেন্দ্র ছিল। সেখানেই প্রথম বৌদ্ধ দর্শনের পাঠ নেন যিশু, পরবর্তীতে ভারতে।
দু’বার ভারতে এসেছিলেন যিশু। প্রথম বার মিশর থেকে ভারতে এসেছিলেন বৈদিক, বৌদ্ধ ও আয়ুর্বেদ শিক্ষার জন্য। তক্ষশীলা সহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা লাভ করেন। গবেষকরা এটাও বলছেন ভারতে এসেছিলেন নালন্দায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার করার জন্য। কারণ ওই সময়ে নালন্দা ছাড়া আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না পৃথিবীতে।
দ্বিতীয় বার এসেছিলেন ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পর। বাইবেল অনুযায়ী যিশুকে ক্রশবিদ্ধ করা হয়েছিল শুক্রবার দুপুরে। তিন ঘন্টা পর অচেতন যিশুর দেহ ক্রশ থেকে নামিয়ে নিকটস্থ সমাধি গুহায় রাখা হয়। ক্রশবিদ্ধ হওয়ার পর খুব কম করে ২৪ ঘন্টা এবং অনেক সময় ৬ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকা সম্ভব।
প্রচুর প্রমান আছে রোমান সাম্রাজ্যের এই ক্রুশ বিদ্ধের ইতিহাসে। যিশুও বেঁচে ছিলেন। সমাধি গুহা থেকে পালিয়ে জেরুজালেমের বাইরে কোথাও লুকিয়ে ছিলেন যিশু ও মেরি। তারপর ক্ষত সেরে ওঠার পর নাম বদলে ফেলে ছদ্মবেশ ধারণ করে কাফেলার সঙ্গে রেশম পথ ধরে পূর্ব পরিচিত ভারতবর্ষের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন যিশু। পন্ডিতদের ধারণা প্রথম শতকের মাঝামাঝি কাশ্মীরে পৌঁছান যীশু। তারও কিছু প্রমাণ রয়েছে:
● নিকোলাস নটোভিচ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে ভারতের কাশ্মীর আসেন এবং লাদাখের হেমিস মঠে কিছু সময় অতিবাহিত করেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নটোভিচকে প্রাচীন তিব্বতীয় পান্ডুলিপির কথা বলেন, যাতে ইসা নামে এক পশ্চিমদেশীয় জ্যোর্তিময় পুরুষের কথা রয়েছে। নটোভিচ তিব্বতীয় পান্ডুলিপি অনুবাদ করেন এবং রাশিয়া ফিরে যান। যিশুর অজানা জীবনের কথা প্রকাশ হতে যাচ্ছে শুনে রুশ খ্রীষ্টান কট্টরপন্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে। অবশেষে ১৮৯৪ সালে বহু বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে The Unknown life of Jesus Christ বইটি প্রকাশিত হয়। বইটিতে নটোভিচ দাবি করেন যে হারানো বছর গুলোয় যিশু ভারতবর্ষে এসেছিলেন ও এই সময়ে তিনি বৈদিক দর্শন, বৌদ্ধ ধর্ম এবং আয়ুর্বেদ সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করেন।
● যিশুর রহস্য সন্ধানে লাদাখ যান স্বামী বিবেকানন্দের গুরুভাই পন্ডিতপ্রবর স্বামী অভেদানন্দ। হেমিস মঠে যিশু বিষয়ক তিব্বতী পান্ডুলিপি সচক্ষে দেখে বিস্মিত হন তিনি এবং তাঁর বই ‘কাশ্মীর ও তিব্বতী’ গ্রন্থে যিশু বিষয়ক তথ্যাদি সর্বমোট ২২৪ পঙতি বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন।
● হেমিস মঠে তিব্বতীয় পান্ডুলিপিটি অনেকেই দেখেছেন। তাদের মধ্যে হেনরিয়েটা মেররিক অন্যতম। ইনি In the World’s Attic নামে বইয়ের লেখিকা। ১৯২১ সালে মেররিক পান্ডুলিপিটি দেখেন। মেররিক তাঁর লিখেছেন,”In Leh (লাদাখ -এর রাজধানী) is the legend of Jesus who is called Issa, and the Monastery at Himis holds precious documents fifteen hundred years old which tell of the days that he passed in Leh where he was joyously received and where he preached.” (লাদাখের রাজধানী লেহ্তে কিংবদন্তীর যিশু ইসা নামে পরিচিত। এবং হেমিস মঠে রক্ষিত পনেরশ’ বছরের পুরনো মূল্যবান নথিপত্রে যিশুর কথা কথা রয়েছে, যিশুর শিক্ষার কথা রয়েছে। )
● ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে মীর ইজ্জুৎউল্লাহ নামে একজন পারস্যবাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নির্দেশে মধ্য এশিয়া ও লাদাখ সফর করেন। Travels in Central Asia বইতে তিনি লিখেছেন: “They keep sculptured representations of departed saints, prophets and lamas in their temples for contemplation. Some of these figures are said to represent a certain prophet who is living in the heavens, which would appear to point to Jesus Christ.” (তাহারা ধ্যানের নিমিত্ত তাহাদের প্রার্থনাগৃহে পরলোকগত সাধুসন্তের ভাস্কর্য সংরক্ষণ করে। এইসব ভাস্কর্যের কয়েকটি স্বর্গবাসী নবীর-যাহাকে যিশু খৃষ্ট বলিয়া প্রতীয়মান হয়।)
● কাশ্মীরের ইতিহাসের অন্যতম উৎস হল ‘রাজতরঙ্গিনী’। এটি রচিত হয় ১১৪৮ খ্রিস্টাব্দে। রাজতরঙ্গিনী গ্রন্থটিতে রয়েছে, “ইসানা নামক একজন মহৎ সন্ত ডাল হ্রদের তীরে ইসাবারে বসবাস করিতেন। তাঁহার অসংখ্য ভক্ত ছিল।”
● “বৈশ্যমহাপুরাণ” হিন্দুদের আঠারোটি পবিত্র গ্রন্থের অন্যতম। বৈশ্যমহাপুরাণে প্রথম শতকের কাশ্মীরের রাজার সঙ্গে যিশুর সাক্ষাতের দৃশ্য বর্ণিত আছে। বৈশ্যমহাপুরাণে যিশুকে ‘ইসাপুত্তম’ এবং ‘কুমারীগর্ভস্বংবরণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
শ্রীনগরের কাছে রাজা শালিবাহনের সঙ্গে ইসা মহি-র সাক্ষাতের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। রাজা শালিবাহন-এর সময়কাল ৩৯ থেকে ৫০ সাল। শালিবাহন কুষাণ সাম্রাজ্যের কাশ্মীর অঞ্চলের শাসক ছিলেন। অর্থাৎ ইসা এবং যিশু যদি একই ব্যক্তি হন তাহলে এটা প্রমাণিত হয় যে যিশু যিনি কাশ্মীরে মারা যান। বেশীর ভাগ গবেষক এমনকি বিবিসির সমীক্ষা অনুযায়ী যিশু কাশ্মীরের শেষ জীবন কাটিয়েছেন।
কাশ্মীরে তাঁর যে সমাধি আছে। এই মসজিদের ভিতরে দু-জনের সমাধি আছে। প্রথম জন ইউজা আসফ, অপরজন সৈয়দ নাসিরউদ্দিন। ইউজা আসফের সমাধিটি পূর্ব পশ্চিমে শায়িত, অর্থাৎ রোমের দিকে। ইউজা আসফের পদচিহ্ন ওই মসজিদে রক্ষিত আছে (পদচিহ্নে দুই পায়ে ক্ষতচিহ্নের দাগ বর্তমান (ক্রুশবিদ্ধ?)।
যীশুকে শুক্রুবার ক্রসে গাঁথা হয়েছিল বেলা তিনটের পর। কারণ সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে পরের দিন মানে শনিবার সূর্য্যের অস্ত পর্যন্ত সাবাতের অনুষ্ঠান চলে ইহুদিদের সংস্কৃতি অনুযায়ী। ওই সময়ে কোনও ইহুদিকে ( সৈন্য সামন্ত) পাওয়া যাবে না। আর এই সুযোগটাই যিশু নিয়েছিলেন। সুতরাং যিশু যে ভারতেই এসেছিলেন এই নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকতে পারে না। স্বামী অভেদানন্দও একই কথা বলছেন প্রাচীন পুঁথি ঘেঁটে যিশু এসেছিলেন ভারতে এবং এই যিশু হলেন ইসা। (ক্রমশঃ)
(www.theoffnews.com - Jesus Christ death Kashmir)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours