তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, পাইকপাড়া, কলকাতা:

'ম' শব্দটা নিয়ে একটু আলোচনা প্রয়োজন।

'ম' মানে মায়া, মমতা, মাৎসর্য্য, মহিলা, মুক্তি, মানুষ, মন, মাতা ইত্যাদি।

বেদান্তের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মায়া ত্যাগ করে ব্রহ্মান্ডের সাথে যুক্ত হওয়া, অর্থাৎ এইখানেই ম মানে মুক্তি। আবার মায়ায় জীবন কাটানো সেইখানেও ম। আমরা মাটি থেকে এসেছি আবার মাটিতে মিশে যাবো, ওইখানেও ম। অর্থাৎ ম সর্বত্র বিরাজমান।

এই' ম' কে যারা বুঝতে পারেননি তারা বাংলা তথা ভারতকেও বোঝেননি। পুরো ঊনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর মানুষ এত সৃষ্টি শীল কাজ করেছে সারা পৃথিবী জুড়ে এর কারণ তাঁরা ম কে ধরতে পেরেছেন এবং বুঝতে পেরেছেন।

এক সময়ে গায়ক নচিকেতা আমায় জিগ্যেস করেছিল যে তপনদা এক কথায় উত্তর দাও তো  আমায় যে -ধর্ম কি বস্তু?আমার উত্তর হল ধর ধর ধর 'ম'। যাঁদের মমত্ব বোধ নেই, যাঁরা মাটি ছুঁয়ে আকাশ দেখতে ব্যর্থ হয়, আর যাঁরা মুক্তি কোথায় এইটা খোঁজেন না, তাঁরা শুধু অশান্তিতেই থাকবেন শুধু তাই নয়, তাঁরা মানুষকেও বিপদগামী করবেন সচেতন ভাবে হোক আর অচেতন ভাবে হোক।

দেশের মাটিকে বোঝা বা উপলব্ধি করা মানে দেশের সংস্কৃতিকে বোঝা। যদি কোনও দেশ নায়ক বা সরকার মানুষের সঙ্গে থাকে, তার মানে সেই সরকার বা ব্যক্তি বা দেশ নায়ক ম কে ধরতে পেরেছে।

আবার সংগীতের ক্ষেত্রে যদি বলি মধ্যম সুর হল সংগীতের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ এইখানেও 'ম' এর কর্তৃত্ব। তাই 'ম' তে থাকুন আর নিজেই খুঁজে বার করুন আপনার মুক্তির পথ কি।

কোনও একটা পথকে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়, আর চাপিয়ে দিলে সেই পথ হবে সর্বগ্রাসী। এই যে নির্বাচনের সময়ে শুনছিলাম, একটাই মূল কথা গোবলয়ের মানুষদের কাছ থেকে সেটা হল একটাই সংস্কৃতি, একটাই কার্ড, একটাই জাত। যেমন শুধু হিন্দুরা দেশ চালাবে অর্থাৎ হিন্দুত্ব, এটা হিন্দুদের দেশ প্রধানতঃ আর ব্রাহ্মণ হল শ্রেষ্ঠ আর দলিতদের কাজই হল ব্রাহ্মণ সেবা করা। এক কথায় উচ্চ বর্ণবাদ। বা অন্য ভাষায় ব্রাহ্মণ্যবাদ। মানুষ কোনদিনও মানেনি এবং সন্মান করেনি। চিরকাল এর বিরুদ্ধে লড়ছে কারণ এরা সবাই 'ম' বিরোধী।

মানুষকে ভাগ করা নয়। এ হিন্দু ও মুসলমান, ও ব্রাহ্মণ ও নমশুদ্র সে দলিত। মূল কথা সবাই মানুষ আর সবাই মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য অধিকারী।

আবার 'ম' মানে মর্যাদা। আমাদের দেশ বহুত্ব বাদের দেশ। এ প্রধান নাগরিক আর উনি অপ্রধান নাগরিক এইরকম নয়। শেষ বিচারে যত মত তত পথ।

মাটি এবং মানুষ হল শেষ কথা অর্থাৎ ম তে বিলীন হওয়া। কেউ ভাবতেই পারেন ম'' মানে মক্কা মদিনা, মাদ্রাসা, মুহাম্মদ, মেজাজ তাতেও কোনও সমস্যা নেই। এই ম' নিয়ে গৌতম বুদ্ধের ব্যাখ্যা প্রণিধান যোগ্য। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, "মধ্যমে থাকো তাহলে জীবনকে বুঝতে পারবে। আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে নিজেকে, সত্য খুঁজে পাবে। যেমন তানপুরার সুর বাধা হয় মধ্যমে।" যাতে সুর টান টান থাকে। এইখান থেকেই সাত সুরকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

মানুষ প্রথম যে শব্দ উচ্চারণ করেছিল, সেটা হল 'ওম' অর্থাৎ ম না থাকলে ও শব্দটির কোন গুরুত্ব নেই। 'অ-কার যুক্ত ম'কার দুইটি মিলে "ওম"। মধ্যম মানে মাঝখানে থাকা নয়। সচেতন ভাবে বোধ এবং শ্বাসের কেন্দ্রে থাকা। অর্থাৎ যেখানে থাকলে চৈতন্য লাভ হয়।

(www.theoffnews.com - M ম)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours