শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:
কত রথীমহারথী না এক সময় কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মরে গেছে। এক সময় কালাজ্বর হলে মৃত্যু নিশ্চিত ছিলো। কারন, এ রোগের কোন চিকিৎসা ছিল না তখন। কালাজ্বরের ওষুধ আবিষ্কার করেন একজন বাঙালি চিকিৎসক। তার নাম উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। তার গবেষণা ও আবিস্কারে অসংখ্য মানুষ নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পায়। তবে কেন তাকে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হলো না তা আজও প্রশ্নবোধক। এবং অবাক করার মত বিষয়। ম্যাক্সিম গোর্কির সাহিত্যে নোবেল না পাওয়া যেমন বিস্ময়কর। চিকিৎসায়ও তেমনি। উপেন্দ্রনাথের নোবেল না পাওয়াও বিস্ময়কর আমার দৃষ্টিতে। তিনি অবশ্য ১৯২৯ সালে নোবেল প্রাইজের জন্য মনোনিত হয়েছিলেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষাকারী একজন মানুষের প্রাপ্য কি কেবল নোবেল প্রাইজের "মনোনয়ন"! এ তো চরম অবিচার।
উপেন্দ্রনাথের জন্ম হয় বিহারের মুঙ্গের জেলার জামালপুরে। তার বাবা ভারতীয় রেলের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। উপেন্দ্রনাথ ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বৃটিশ ভারতে প্রাদেশিক স্বাস্থ্যসেবায় যোগ দেন। প্রথমে তিনি ঢাকা মেডিকেল স্কুলে কর্মজীবন শুরু করেন। এই মেডিকেল স্কুলই এখন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ। ১৯২০ সালে ইউরিয়া স্টিবাইন তৈরি করেন তিনি। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চে ১৯২২ সালে ৮ জন কালাজ্বর রোগীকে সুস্থ করার খবর প্রকাশ হয়। এতে সারা পৃথিবীতে হৈচৈ পরে যায়। কালাজ্বরের প্রতিষেধক প্রথমে খরগোশের উপর প্রয়োগ করেন। চিকিৎসা ও গবেষণায় তিনি বহুমাত্রিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। পৃথিবীর দ্বিতীয় ব্ল্যাড ব্যাংকেরও প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। "রায় বাহাদুর" ও "নাইট" উপাধিতেও ভূষিত হয়েছিলেন। প্রশ্ন থেকে যায় বাঙালি বলেই কি, উপেন্দ্রনাথকে নোবেল প্রাইজ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল? এর উত্তর হয়তো "হ্যাঁ" হয়তো "না"। যদি উত্তরটা "হ্যাঁ" হয় সে হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ভাগ্যবান বটে। নোবেল প্রাইজ না দিয়ে বৃটিশরা হয়তো সেদিন অবিচারই করেছিলো বাঙালি জাতি ও বাঙালি চিকিৎসক উপেন্দ্রনাথের প্রতি। তবে ইতিহাস বলে, পৃথিবীর মানুষ কিংবদন্তি রুশ লেখক ম্যাক্সিম গোর্কীকে ভুলে যায়নি নোবেল প্রাইজ না পাওয়ার পরও। তেমনি উপেন্দ্রনাথকেও মানুষ ভুলতে পারবে না, কালাজ্বরের ওষুধ আবিস্কারের জন্য। পুরস্কার মানুষকে খ্যাতিমান করে তুলে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্ত কর্ম ও আবিষ্কার যে মানুষকে অমর করে রাখে তা প্রমানিত। উপেন্দ্রনাথ তাই মরেও অমর হয়ে থাকবেন চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদানের জন্য।
(www.theoffnews.com - Upendranath Bramhachari)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours