শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

কেবল করোনার ভ্যাকসিন নয়, মানুষের জন্য এখন প্রয়োজন ক্ষুধার ভ্যাকসিন। ক্ষুধার ভ্যাকসিন বলতে বুঝাতে চেয়েছি,খাদ্যের শতভাগ নিশ্চয়তা। তা ধনী হোক বা দরিদ্র মানুষের বিনামূল্যে খাদ্যের নিশ্চয়তা দেওয়া। অথবা মানুষকে খাদ্যের ক্রয় ক্ষমতা উপযোগী করে গড়ে তোলা। কেন না, মানুষ মানুষকে শোষন, নিপীড়ন করছে ঐ ক্ষুধার ডর ভয় দেখিয়েই। স্বর্গের লোভ ও নরকের ডর ভয় দেখিয়ে যা না করা যায়, তা করা যায় খাদ্যের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে। এমন কি মানুষ মানুষকে দাস বানিয়ে রেখেছিল। এখনও দাস বানিয়ে রাখে ভিন্ন নামে। পৃথিবীর দুর্ভিক্ষের ইতিহাস তাই-ই বলে।

মানুষ প্রথমে প্রকৃতপক্ষে অন্নের নিশ্চয়তার জন্যই অসংখ্য অপরাধে সম্পৃক্ত হয়। বা সম্পৃক্ত করানো হয়। সত্য এই যে, মানুষ যে শাসককে মেনে নেয়, শোষককে মেনে নেয় ঐ ক্ষুধার ডরেই। সকলেই নিজে ও তারপর তার পরিবারের অন্নের নিশ্চয়তা কামনা করে। এটা খুবই স্বাভাবিক। নাগরিকেরা শাসককে ও আমলাকে কেন ভয় পায়? গ্রামের কথিত মাতব্বর নামের ফ্যাসিস্ট আরেকটি শ্রেনীকেও আমজনতা খুব বেশি ভয় পায়। শাসক তথা সরকার, আমলা ও মাতাব্বর শ্রেণি কেবল তাকে নির্যাতন নিপীড়ন করবে সে ভয়ে ভীত নয়। আমজনতা জানে, তার আয় রোজগার বন্ধ করে দিতে পারে ঐ শ্রেণিগুলো। অর্থাৎ সেই ক্ষুধা! কেন না, আয় রোজগার বন্ধ হলে খাবে কি? কল্পনার  সেই সাম্যবাদী সমাজে তো আমরা বাস করছি না, যে সকলকেই খাদ্যের নিশ্চয়তা দেওয়া আছে। যে কোন অবস্থায়।

করোনা মহামারি থেকে একদিন মানুষের মুক্তি আসবে, তাতে কোন সন্দেহ নাই। পৃথিবীতে এমন  অনেক মহামারি অনেকবার এসেছে। মানুষ মরেছে, এমন কি পশুপাখিও উজাড় হয়েছে। মহামারি থেকে মানুষ আবার ঘুরে দাড়িয়েছে। মহামারি নিয়ে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ব্যক্তিগোষ্ঠী যাই-ই শোনাক, ভাববাদীরা যাই-ই ভাবুক। যারা আবিস্কারক তারা বসে থাকবে না। এক সময় মহামারির চিকিৎসা খুঁজে বের করবেই। জ্বর, কালাজ্বর, কলেরা, বসন্তকে এই মানুষেরাই থামিয়ে দিয়েছে।ভবিষ্যতেও যে কোন ঘটনা ও পরিস্থিতিতে মানুষই মানুষকে রক্ষা করবে।

করোনা মহামারি নিয়ে বিশ্বের নেতারা যে ভাবে দৌড়াদৌড়ি করছেন, সেভাবে যদি মানুষের অন্নের নিশ্চয়তা নিয়ে ভাবতেন তাহলে, খাদ্যের বিকল্প এতদিন তৈরি হয়ে যেত বৈকি৷ মানুষ একসময় গাছে থাকতো। গাছ থেকে গুহায়। পাহাড়ে তারপর সমতলে এলো। যাপন করলো যাযাবর জীবন। আবিষ্কার করলো পাথরের অস্ত্র, আগুন, ভাষা, লেখার অক্ষর, তারপর চাকা। তারপর আরও কত না আবিস্কার। মানুষ একই সাথে ঝগড়া, লড়াই, যুদ্ধে লিপ্ত। আবার আবিস্কারেও পিছিয়ে নেই। জ্ঞানে বিজ্ঞানে প্রতিমুহূর্তে ঋদ্ধ হচ্ছে আজকের পৃথিবী। কোন সন্দেহ নেই, সম্পদে সভ্যতায় এগিয়ে চলছে দূর্বার গতিতে। এ গতি আর থামবার নয়। যদিও এই মানুষই আবার সাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তায় বহুধা বিভক্ত। মানুষ যখন নিজেদের এক বিশ্বের বাসিন্দা ও এক জাতি ভাবতে শিখবে এবং সেভাবেই অগ্রসর হবে, তখন সম্পদ, সভ্যতা ও আবিষ্কারের গতি কল্পনাতীত ভাবে আরও এগিয়ে যাবে। পৃথিবীর এমন অনেক আবিস্কার রয়েছে যা মানুষের ভাবনার অতীত ছিলো। অনেক ব্যর্থতার পরও আজ ওসব বাস্তব। 

করোনা মহামারি মানুষকে স্থবির করে দিয়েছে। পৃথিবী প্রায় অচল। এই স্থবিরতা ও অচলাবস্থার মধ্যে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, মানুষ রাষ্ট্রের মধ্যে থেকেও নিরাপদ নয়। তা সে রাষ্ট্র যতই আধুনিক ও ধনীই হোক না কেন। এই মহামারির সময়ে কেবল করোনা ভাইরাসের টিকা আবিস্কার করলেই চলবে না। সাথে প্রয়োজন ক্ষুধার টিকা আবিস্কারের। এই ক্ষুধাকে পৃথিবী থেকে বিদায় জানাতে পারলে, মানুষের অসংখ্য সমস্যা এমনিতেই সমাধান হয়ে যাবে। জানি না, পুঁজিবাদী শক্তিরা এখনই তা হতে দেবে কি না। তবে, আমি আশাবাদী পুঁজিবাদীরাই হয়তো এক সময় খাদ্যের বিকল্প আবিস্কারের গবেষনায় বিনিয়োগ করবে। এবং মানুষ একদিন ক্ষুধার ভ্যাকসিন আবিস্কার করবে। তথা পৃথিবী ক্ষুধা মুক্ত হবে। 

(www.theoffnews.com - corona hungry)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours