দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

নানুরে বামেদের বিধায়ক ছিল। শাসকদলের অন্তর্কলহে সিঁধ কেটে সুখ এসেছিল। তখন ২০১৬  বিধানসভায়  সিপিএম কাজল কালো চোখে দেখেছিল "আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস..." ঠিক শুনেছেন, সেই কাজল সেখ এখন শাসক দলে ফিরেছে। নানুর বিধানসভার ২০২১ সাল বড্ড অচেনা।  

কথায় বলে, অনটনে দুনো খরচ। বামেদের সেই অবস্থা। বৃহস্পতিবার দিন ভর অশান্তির প্রেক্ষাপট। কিছু বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবারও বন্দরে ঘটেছে অশান্তি। বোমা উদ্ধার। ভোটের  আগে মুখ‍্যমন্ত্রীর একটা ফোনে পাল্টে যায় নানুরের সমীকরণ। কাজল, তুই নানুরটা দেখ। আমি তোর কথা ভাবছি। ব‍্যস! এই কাজল সেখকে দুটি  অঞ্চলের দায়িত্ব দিয়েছিলেন অনুব্রত। কাজলও পরিচিত মহলে ক্ষোভ করে বলেছিলেন, আমি দুটো অঞ্চল জিতিয়ে দেব। বাকিটা যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা বুঝবে। কাজল সেখ পুরোপুরি দায়িত্ব না পেলে নানুরে খেলাটা অন‍্য হত। সেটা তৃণমূল দেখেছে। সিপিএম এই নানুরে জিতেছে বিগত নির্বাচনে। খেলা পাল্টানোয় বামের মতো বিজেপি এতটা বেকায়দায়।  

কাগজে কলমে নানুর বিধানসভা বামের দখলে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য গৌতম ঘোষ বলেন, মনে রাখবেন! ২০১৬ সালে আমরাই জিতেছিলাম। ৫০.০৭ ভোট পেয়ে তৃণমূল বিধায়ক গদাধর হাজরাকে পরাজিত করেন সিপিএমের শ্যামলী প্রধান। ২৫,৭৩০ ভোটে জেতেন আমাদের প্রার্থী। কিন্তু তিনি বলেননি সেই বছর বামেদের জয়ের এক্স ফ্যাক্টর ছিল কাজল সেখ। অনুব্রত ও কাজল সেখের দ্বৈরথে আখেরে লাভ হয়েছিল সিপিএমের। কাজল সেখ তৃণমূলের হয়েও, দলে ছিলেন ব্রাত্য! বিভিন্ন মিথ্যা মামলার ফেরারী আসামী।

এবার সেই কাজল সেখ তৃণমূলের। যদিও, এবার এই দুঁদে নেতা কাজল সেখকে মাত্র দুটি পঞ্চায়েতের দায়িত্ব দেওয়া থাকলে, ফল অন‍্যরকম হতো। সুব্রত ভট্টাচার্য, কেরিম খানরা কি এভাবে সামলাতে পারতেন? ২০১৬ সালের নির্বাচন থেকে এবছরের নির্বাচন আলাদা। কারণ এই বছরের ভোটের ফল নির্ভর করেছে ভোটের টার্ন ওভারের উপর। গত নির্বাচনের মত ভোটদানে বাধা দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। সকাল থেকে লাইন দিয়ে মানুষ ভোটও দিয়েছে । দুপুরের পর ভোটদাতাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।  

অন্যদিকে সেই চেনা রূপ ময়ুরেশ্বর বিধানসভা এলাকা। অশান্তি! প্রমাণ করে ময়ুরেশ্বর ছিল  ময়ূরেশ্বরে। বিজেপি প্রার্থীর ভাই তৃণমূলের হাতে মার খায়। তাই শেষের দিকে মারণ কামড় দেয় বিজেপি। ভুললে চলবে না, বীরভূম জেলার এই বিধানসভায় সব থেকে বেশি মেরুকরণ হয়। তার কারণ কিছু অনাকাংখিত মৃত্যু। যদিও, এই বিধানসভায় তৃণমূলের বিধায়ক আছে। কিন্তু প্রতি নির্বাচনে এই বিধানসভায় বিজেপির পার্সেন্টেজ বাড়ে। ২০১১ সালে তৃণমূলের ঝড়ে সিপিএম প্রার্থী অশোক রায় প্রায় ৭ হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী জটিল মণ্ডলকে হারাতে সমর্থ হন। সে বছর দুঁদে ভূমি পুত্র বিজেপি প্রাথী দুধ কুমার মণ্ডল দাঁড়ালেও, বিজেপির ভোট ৭ শতাংশের বেশি ঘাটতি হয়ে তৃতীয় স্থান দখল করে। ২০১১ সালে সিপিএমের ভোট ২০১৬ সালে তৃণমূলের ঝুলিতে পড়ে। বিজেপির তারকা প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় ১৯ শতাংশ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। কিন্তু বিজেপির ১২ শতাংশ ভোট বাড়ে। অন্যদিকে, ২৭ শতাংশ ভোট পান সিপিএমের অরূপ বাগ। তাঁকে হারিয়ে জয়ী হন তৃণমূলের অভিজিৎ রায়। বাম ভোটের  ২১.০৯ শতাংশ সুইংয়ে তৃণমূল ও বিজেপির ভাগ্য নির্ধারণ হয়। এবার বিজেপি প্রার্থী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় একজন সঙ্ঘ নেতা। তাই সংগঠন ভালো বোঝেন। তাছাড়া বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি। ভোটের আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এই বিধানসভা। এই বিধানসভার ক্ষেত্রেও শাসক দলকে চিন্তায় রাখছে ভোটের টার্ন ওভার। সকাল থেকে ভোটের লম্বা লাইন ছিল। দুএকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া মোটের উপর ভালো ভোট হয় এখানে।

(www.theoffnews.com - Birbhum election)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours