তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, পাইকপাড়া, কলকাতা:

কলকাতায় অবস্থিত নাখোদা মসজিদের পাশের এই প্রাসাদসম বাড়িতেও প্রায়শই বসত মেহফিল। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন গহর বিল্ডিং। গহরের ব্যক্তিগত জীবন কিন্তু মোটেও রঙিন ছিল না। একে সুন্দরী তারপর হাতে অগাধ টাকাপয়সা। একাধিক পুরুষ তাঁর আকর্ষণে বারেবারে এসেছেন ‘গহর বিল্ডিং’এ। একাধিক পুরুষকে ভালবেসে, বিশ্বাস করে গহর বারেবারে পেয়েছিলেন আঘাত। শেষজীবনে গহর আঘাত পেলেন সবচেয়ে কাছের মানুষ ম্যানেজার আব্বাসের কাছ থেকে। পেশওয়ারী যুবক আব্বাসউদ্দীন ছিলেন গহরের ম্যানেজার। সেই আব্বাসই যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে গহরের প্রভূত ধনসম্পত্তি হাতিয়ে নিল তখন গহর ভেঙে পড়লেন পুরোপুরিভাবে। গহরের সঙ্গে আব্বাসের সম্পত্তি এবং ‘গহর বিল্ডিং’ নিয়ে চলে দীর্ঘ মামলা-মোকদ্দমা। অবশেষে ‘গহর বিল্ডিং’ ছাড়লেন গহরজান। শুধু ‘গহর বিল্ডিং'ই নয়, গহর তাঁর প্রিয় কলকাতা ছেড়ে চলে গেলেন মাসিক পাঁচশো টাকা বেতনে মহীশূর রাজদরবারের সভাগায়িকা হয়ে। প্রিয় কলকাতা ছাড়ার দু’বছর পর মহীশূরে মারা যান মিস গহরজান।

এবার ‘গহর বিল্ডিং’এর বাড়িতে গহরজানের ছবি নেই, নেই কোনো নামের ফলক। স্যাঁতসেঁতে সেই চারতলা বাড়িজুড়ে আছে শুধুই স্মৃতি। সেই সময়ে এই বাড়িতে কে না এসেছে। দেশ জোড়া খ্যাতি তাঁর। তবে বাড়ির নাম বদলে গেলেও মুছে ফেলা যায়নি তাঁর নাম। ‘সেলিম মঞ্জিল’ তাই আজও ‘গহর বিল্ডিং’। যেখানে শোনা যায় আজও দৃপ্ত কণ্ঠে গহরজান বলছেন, তাঁর গানের রেকর্ডের শেষে   থাকতো তাঁর আওয়াজ মাই নেম ইজ গহরজান।

আসুন জেনে নিই এই গহরজান সম্মন্ধে কিছু কথা।

এখনো ভেসে আসে আসে সুর অলিতে গলিতে কখনো অন্তঃপুরে

আছে পায়ের দাগ যাও যদি

দমদম কিংবা চিতপুরে।

কত রঙের বাবুদের আসা যাওয়া হতো গজল রংবাহারি

ওটাই ছিলো ধূলি শেঠের বাগানবাড়ি।

বসে আছে যেন রানীর মতো

ও শুধু গান নয়, ভালোবাসায়

ছড়ানো প্রাণ নাম তাঁর গহরজান।

গহরজান শুধু গায়িকা নন ইনি একজন উঁচুমাপের নৃত্যশিল্পী ও বটে। উনি বাংলা কীর্তনও গাইতে পারতেন। এই ধূলি শেঠের বাগান বাড়ি থেকে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়লো। গহরজানের বাড়ি ছিল চিৎপুরে। কিন্ত গানের চর্চা হতো ওই বাগান বাড়িতে।উনি প্রথম মহিলা গায়িকা গ্রামোফোন কোম্পানির। ১৯০২ সালে ভারতবর্ষে এইচএমভি'র প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। উনার গানের বিষয় ছিল ঠুমরি গজল ও দাদরা। কিন্তু ঠুমরি গজল ছাড়াও নজরুলের গান ও রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েছেন অনেক। তাঁর বিখ্যাত বাংলা গান ছিল, 'ফাঁকি দিয়ে প্রাণের পাখী উড়ে গেল।' উনার রেকর্ড এর  সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০। তখন ৭৮ আর পিএম রেকর্ড।

বিখ্যাত শিল্পী দেশ জোড়া নাম বেগম আখতারএর মা সিদ্ধান্ত নিলেন গহরজানের গান শোনার পর মেয়েকে ঠুমরি গজল এর তালিম নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হিন্দী সিনেমার  জন্য তৈরী করবেন। কিন্ত সেটা আর হলো না। বেগম আখতার হয়ে গেলেন গজল ও ঠুমরির রানী। বিশ্বজোড়া নাম। শুধু একটি মেয়ের গান বদলে দিল আর একটি গায়িকার ভবিষ্যৎ। তবে প্রথম রেকর্ডে তিনি যোগিয়া রাগ পরিবেশন করেছিলেন।

গহরজানের জন্ম ২৬ জুন ১৮৭৩। মৃত্যু ১৭ জানুয়ারি ১৯৩০। তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য মেহেফিল ছিল দ্বারভাঙার মহারাজা লক্ষণেশ্বর সিংহের দরবারে। এরপর থেকেই গহরজানের নাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে দেশীয় শিল্পীদের গান রেকর্ড করে বাজারজাত করার জন্য কলকাতায় 'গ্রামোফোন ও টাইপরাইটার লিমিটেড' নামে একটি অফিস খোলে। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ অক্টোবর গেইসবার্গ তাঁর দলবল নিয়ে কলকাতায় পৌঁছান। প্রথমে তিনি মিস্ শশীমুখী ও মিস্ ফণীবালার গানের রেকর্ড করেন। এই সূত্রে রেকর্ডের বাংলা গানের প্রথম শিল্পী হিসেবে মিস্ শশীমুখী এবং মিস্ ফণীবালা স্মরণীয়া হয়ে রয়েছেন। তবে এই গানে গেইসবার্গ সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এরপর তিনি আরও ভালো কণ্ঠের শিল্পীদের খুঁজতে থাকেন। এর দুই দিন পর, তৎকালিন ক্ল্যাসিকাল থিয়েটারের সহায়তায় গেইসবার্গ আরও কিছু শিল্পীর গান রেকর্ড করেন। এঁদের গানেও গেইসবার্গ সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এরপর তিনি ১১ই নভেম্বর গহরজানের গান রেকর্ড করেন। এবার গহরজানের গান শুনে গেইসবার্গ মুগ্ধ হন। তিনি গেয়েছিলেন দাদরা অঙ্গের একটি হিন্দি গান। গানটির শিরোনাম হিসেবে উল্লেখ ছিল 'Mahomedan Song'। তাঁর কণ্ঠে রেকর্ডকৃত প্রথম বাংলা গান ছিল 'ভালবাসিবে বলে ভালোবাসিনে।' এরপর তিনি গহরজানের কণ্ঠে আরও কয়েকটি গানের রেকর্ড করেন। গ্রামোফোন রেকর্ড ছাড়া অন্যান্য রেকর্ড কোম্পানির রেকর্ডেও গান করেছেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে রয়্যাল রেকর্ড-এ তিনি গান করেছিলেন।

এই সময় থেকে তিনি প্রতিটি গানের অনুষ্ঠানের জন্য সম্মানী নিতেন তিন হাজার টাকা! নিজ প্রতিভাগুণে তিনি সেকালের অভিজাত শিল্পীতে পরিণত হয়েছিলেন। সে সময় তিন থাকতেন নাখোদা মসজিদের পাশেই এক প্রাসাদসম বাড়িতে। এই বাড়ির নাম ছিল ‘গহর বিল্ডিং’। তাঁর বিলাসী জীবনযাপনের কথা সে যুগে লোকের মুখে মুখে ফিরত। শোনা যায় পোষা বেড়ালের বিয়েতে তিনি নাকি খরচ করে ছিলেন কুড়ি হাজার টাকা।

গহরজানকে নিয়ে নানা ধরনের চমকপ্রদ গল্প আছে। শোনা যায়, কলকাতাস্থ জোড়াসাঁকোর মল্লিকবাড়ির এক অনুষ্ঠানে গান শোনাতে এসে, গৃহকর্তা ভাষা অনুসারে শ্রোতাদের বসানোর জন্য অনুরোধ করেন। গৃহকর্তা সেই ব্যবস্থাই করেন। পরে বহুমূল্য অলঙ্কারে সুসজ্জিতা তিনি আসর থেকে প্রাঙ্গণে নেমে প্রথম ইংরেজ সাহেবদের কাছে একটা ইংরেজি গান শোনান। এর পরেই পাঞ্জাবি, মারাঠি, হিন্দি ও বাংলা ভাষীদের কাছে গিয়ে ওই সব ভাষায় গান শোনান। গওহরজান ছিলেন স্বয়ং কবি ও গান লিখিয়ে। খুব কম মানুষই হয়তো খোঁজ রাখেন যে, বিখ্যাত ‘রসকে ভরে তোরে নয়ন’। মা মালকাজান ছিলেন কবি এবং গায়িকা।

সে কালের প্রখ্যাত রঙ্গমঞ্জ স্টার থিয়েটারে গান গেয়ে বহুবার শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। সে সময়ে তাঁকে দেখার জন্য রাস্তায় ভিড় জমে যেত। দেশলাইয়ের বাক্সে তাঁর ছবি যুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর কবরের উপর শেষ গোলাপটা কে রেখেছিল সে কথা আজ কেই বা জানে। স্মৃতির অতলে কবেই বিলীন হয়েছে হিন্দুস্থানের সেই সঙ্গীত সম্রাজ্ঞীর কবর। অথচ সেখানে কোনও দিন বসেনি একটা স্মৃতি ফলকও।

জীবদ্দশাতেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন একটা ‘মিথ’। তাঁর রেকর্ডে লেখা থাকত ‘ফার্স্ট ডান্সিং গার্ল’। মৃত্যুর একানব্বই বছর পরেও তিনি আজও কিংবদন্তী। তাঁকে নিয়ে চলে নিত্য নতুন গবেষণা। আর তাঁর গাওয়া গানের পুরনো রেকর্ডগুলি আজও কালেক্টর্স আইটেম।

১৮৭৩ সালের ২৬ জুন উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে জন্ম অ্যাঞ্জেলিনা ইয়োয়ার্ডের। পরবর্তী কালে তাঁরই নাম হয় গহরজান। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন ইহুদি। মায়ের নাম ভিক্টোরিয়া হেমিংস, আর বাবা রবার্ট উইলিয়াম ইয়োয়ার্ড। ভিক্টোরিয়ার মা রুক্মিণী ছিলেন জন্মসূত্রে ভারতীয়। ভিক্টোরিয়া ও রবার্টের সুখের সংসার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পরে এক মুসলিম যুবক খুরশিদের সাহায্যে ভিক্টোরিয়া ও অ্যাঞ্জেলিনার ঠিকানা হয় বারাণসী শহরে। এখানেই মা ও মেয়ে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর ভিক্টোরিয়ার নাম হয় মালকাজান এবং ছোট্ট অ্যাঞ্জেলিনা হল গহরজান।

মালকাজান ভাল গান গাইতে পারতেন। লিখতেন উর্দু কবিতাও। এ বার শুরু হয় তাঁর সঙ্গীতের তালিম। কিছু বছরের মধ্যে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাঈজিদের মধ্যে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কিন্তু এ সবের পাশাপাশি মালকাজান সর্বদা তৎপর থাকতেন গহরজানের তালিমের ব্যাপারে। ইতিমধ্যেই বিখ্যাত বেচু মিশ্রের কাছে গহরজানের তালিমের ব্যবস্থা করেছিলেন। চার বছর বারাণসীতে থাকার পরে খুরশিদ, মালকা ও গহরজান চলে আসেন কলকাতায়।

শুরু হল নতুন এক অধ্যায়। তাঁদের ঠিকানা হল এ শহরের কলুটোলা অঞ্চলে। ইতিমধ্যেই দেশের রাজা-মহারাজাদের দরবারে মালকাজানের ডাক পড়তে শুরু করে। ঠিক এমনই এক সময় মালকাজান নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন মেটিয়াবুরুজে, নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের দরবার থেকে। সেখানেই কত্থকের প্রবাদপ্রতিম গুরু বিন্দাদিন মহারাজ গহরজানকে দেখে বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর প্রতিভা। শুরু হয় গহরজানের নাচের তালিম। এর পাশাপাশি চলতে থাকে গহরজানের গানের তালিমও। তিনি বাংলা গান শিখেছিলেন বামাচরণ ভট্টাচার্যের কাছে। রমেশচন্দ্র দাস বাবাজির কাছে কীর্তন। শ্রীজান বাঈয়ের কাছে ধ্রুপদ-ধামার এবং মিসেস ডি’সিলভার কাছে কিছু ইংরেজি গানও শিখেছিলেন। তাঁর অন্যান্য গুরুদের মধ্যে ছিলেন রামকুমার মিশ্র, গোয়ালিওরের ভাইয়া গণপত রাও সাহেব প্রমুখ।

গহরজান গাইতে পারতেন হিন্দি, বাংলা, উর্দু, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, সংস্কৃত ইত্যাদি ভাষায়। তবে তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য মেহেফিল দ্বারভাঙার মহারাজা লক্ষ্মেশ্বর সিংহের দরবারে। এরপর থেকেই গহরজানের নাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

১৯০১ সালে কলকাতায় আসে গ্রামোফোন ও টাইপরাইটার লিমিটেড। উদ্দেশ্য, এ দেশের শিল্পীদের গান রেকর্ড করে বাণিজ্য করা। সেই থেকেই শুরু হয় এ দেশে রেকর্ডের প্রচলন। প্রথম যুগের শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম গহরজান। কোম্পানির রেকর্ডিস্ট হিসেবে এসেছিলেন গেইসবার্গ সাহেব। রেকর্ডিং-এর সময় গহরজানকে দেখে অবাক হয়েছিলেন তিনি। রেকর্ডিং-এর প্রথম দিনই গেইসবার্গ বুঝেছিলেন এই শিল্পী হয়ে উঠবেন এ দেশের ‘গ্রামোফোন সেলিব্রিটি’। এমন আত্মবিশ্বাস এবং স্বতঃস্ফূর্ততা তিনি অন্য কোনও শিল্পীর মধ্যে লক্ষ্য করেননি। ১৯০২ থেকে চল্লিশের দশক পর্যন্ত তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী।

তাঁর বিলাসী জীবনযাপনের কথা সে যুগে লোকের মুখে মুখে ফিরত। ইতিহাসে কান পাতলে আজও শোনা যায় এ শহরে গহরজানের বহু মেহফিলের স্মৃতি। সে যুগে পাওয়া যেত গহরজানের ছবিওয়ালা রঙিন পোস্টকার্ড। তাঁর গাওয়া বাংলা গানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ফাঁকি দিয়ে প্রাণের পাখি’, ‘আজ কেন বঁধু’, ‘নিমেষেরই দেখা যদি’। আর মাইলস্টোন বলতে মূলতানী, মালকোষ, কিংবা ভূপালি রাগের খেয়ালগুলি। তবে হিন্দি গানগুলির মধ্যে ‘আনবান জিয়া মে লাগি’, ‘নহক লায়ে গবানবা’ আজও উল্লেখযোগ্য। তাঁকে বলা হত ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের সম্রাজ্ঞী। অথচ মাঝে মধ্যেই আসরে তিনি গাইতেন লঘু চালের সাধারণ গান। আসলে খেয়াল, ধ্রুপদ কিংবা ধামার যে সকল শ্রোতার মন ছুঁতে পারবে না তা তিনি বুঝতে পারতেন। তাই শ্রোতার মন বুঝে আসরে গান গাইতেন।

তাঁর ব্যক্তিগত জীবন কেটেছিল নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে। ভালবেসে বার বার পেয়েছিলেন আঘাত। এক দিকে, দেশ জোড়া খ্যাতি, অর্থ, মান সম্মান। অন্য দিকে, সব কিছুর অলিন্দে ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসঙ্গতা এবং একাকীত্ব। ১৯২৮ সালে মাসিক ৫০০ টাকা বেতনে মহীশূর দরবারে সভাগায়িকা নিযুক্ত হয়েছিলেন গহরজান। তাঁর প্রিয় কলকাতা ছেড়ে চির কালের মতো পাড়ি দিয়েছিলেন গহরজান। দু’বছর পরে, ১৭ জানুয়ারি ১৯৩০ সালে মহীশূরে তাঁর মৃত্যু হয়।

তিনি আজও রয়ে গেলেন একটা ‘মিথ’ হয়ে। গানের শেষে আজও তাঁর রেকর্ডে শোনা যায় সেই ঘোষণা ‘মাই নেম ইজ গহরজান’।

(www.theoffnews.com - Gauhar Jaan)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours