সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার ও শিক্ষিকা, শিবপুর, হাওড়া:
একটা ছোট্ট শব্দ কোণ কিন্তু কেমন যেন মায়া জড়ানো শব্দ। কোণ শব্দটা উচ্চারণের সাথে কত কিছু মনে এসে যায়। কত কিছু উঁকিঝুঁকি মারে তার ঠিক নেই! আচ্ছা কোথায় উঁকি মারছে শব্দটা? একটু ভাবুন না! আসলে ছোট হলেও ব্যাপ্তিতে বিশাল এবং বিরাটও বটে। শব্দটা খুব গভীর। অতল না হলেও বেশ গভীর, খুব অনুভবের? খুব অনুভূতিশীলও বটে। কিন্তু খুব মায়া জড়ানো। বলা যায় শব্দটার ভেতর একাধারে রোমান্টিক, নষ্টালজিক, মেলাংকলিক তিনটি অনুভূতিই একসাথে ভিড় করে আসে। কিন্তু কোথায়? ভাবুন না একবার। আগেও কিন্তু এই প্রশ্ন করেছি।
কোণ শব্দটায় জ্যামিতিক গন্ধ আছে। সমকোণ; সুক্ষ্মকোণ; অন্তঃস্থ কোণ; বহিঃস্থ কোণ; প্রবৃদ্ধ কোণ। কত রকমের কোণ!
কি এতরকম জ্যামিতিক কোণে কেমন কোণঠাসা লাগছে, না? কিন্তু কোথায়? কতরকমের প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে কোথায়? কোথায় আবার? আপনার আমার মনের কোণায়।
আসলে কোণ শব্দটাই এমন!
ধরুন তো বিরাট একটা মাঠ তার এককোণে সুবিশাল সুপ্রাচীন বটবৃক্ষ দাঁড়িয়ে। কত ঝড় জল রোদ সহ্য করে দাঁড়িয়ে আছে আজও। ছায়া দিচ্ছে, হাওয়া দিচ্ছে। । তার ছায়ায় এসে দুদন্ড দাঁড়ালে কত ভাবনা এসে খেলা করবে মনে। না না। বলা ভাল মনের কোণে। এই অনুভূতির উৎপত্তি বা বিনাশ সবই মনের কোণায়।
এমনও তো হয় সারা আকাশ জুড়ে নীল রংয়ের সমাহার। সাথে গনগনে রোদ। একেবারে রোদঝলমল দিন। হয়তো ঈশাণ কোণে মেঘ জমতে শুরু করল। তারপর দেখতে দেখতে আকাশের চারিকোণ মেঘের স্তূপ, রাশি রাশি মেঘ। মুহুর্তে প্রকৃতি শীতল। আর আমরাও পেলাম দাবদাহ থেকে মুক্তি। মনের কোণেও শীতল সতেজ স্পর্শ।
অথবা উল্টোটাও ভাবুন সারা আকাশ মেঘাক্রান্ত। বাদল মেঘে দিনেও যেন আঁধার! হঠাৎই বেলায় আকাশের এককোণে রোদের হাসিতে সারা আকাশ যেন খিলখিলিয়ে উঠল।
আপনার মনের মানুষটি যখন আপনার থেকে অনেক দূরে ভূগোলের ভাষায় আপনার আর তার কৌণিক দূরত্ব অনেকবেশি। তার কথা ভাবতে গেলে মানে সে কেমন আছে, কি করছে এসব ভাবতে ভাবতে আপনার আঁখি কোণ ছলছল করে বৈকি!
প্রেয়সীর আঁখির কোণে কাজলটা কোন মায়ায়, কোন মোহে যে তার মনের মানুষকে বেঁধে রাখে, কে জানে!
ছোট্ট একরত্তি শিশুরও তো ভাললাগা ভালবাসা ভরসা ঐ কোণেই.. মায়ের শাড়ির এককোণ ধরে টানমারা তো তারই লক্ষণ।
ঐ কোণ ভরসারও বটে। আপনার প্রিয় পোষা অবোলা জীবটা তো আপনার আসার অপেক্ষায় থাকে সারাদিন গৃহের ঐ এককোণে পড়ে থেকে। চার দেওয়ালে চারটে কোণ কিন্তু অনেক কথা বলে। চারটে কোণ তো আসলে আমার বা আপনার পৃথিবী। পড়ন্ত বিকেলে বারান্দার এককোণে যখন এক চিলতে রোদ এসে পড়ে তখন মনে হয় যেন দিনের মাধুরি ঝড়ে পড়ছে। উঠোনের কোণঘেঁসে আপনচিত্তে বেড়ে ওঠা মাধবিলতায় যখন থোকা থোকা ফুল গুলো ফোটে বাড়িকে যেন আরও সুন্দর মনে হয়। এইসুখী গৃহকোণেই সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালায় গৃহবধূ। ঘরের কোণে জ্বলে থাকা নরম হাল্কা আলোয় পুরো ঘরটা আলোময় হয়ে ওঠে। ক্ষণ পূব আকাশের এককোণে জ্বলজ্বল করে সন্ধ্যাতারা।
আসলে কোণ বহুমাত্রিক তা সে জ্যামিতিক হোক বা ভৌগোলিক! মনের কোণের বাইরেও একটা দুনিয়া আছে। হৃদয়ের এককোণ। ঐ এককোণে কার জন্য যে মনের মণিমাণিক্য সাজিয়ে রাখা আছে তা আপনি নিজেও বোধহয় জানেন না! নিজের সাথে নিজের যখন কথা বলা চলতে থাকে তখন অজান্তেই এক দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে ঐ হৃদয়ের কোণ থেকেই। কবি মনের কোণের বাইরের কথা বলেছেন
"আমার মনের কোণের বাইরে
আমি জানলা খুলে ক্ষণে ক্ষণে চাই রে।
কোন্ অনেক দূরে উদাস সুরে
আভাস যে কার পাই রে--"
কোণাকুণি অনেক হল। কৌণিক দূরত্ব ও হল।কোণের মাপ জানতে চান?
কোণঠাসা হয়ে যাবেন। কোণ মাপতে গিয়ে কখন যে গোল পৃথিবীটা ঘুরে ফেলবেন আপনি ধরতে পারবেন না। সেই বলে না, ছিল রুমাল হল বেড়াল।
আপনি কোণ মাপতে গিয়ে দেখবেন যেখান থেকে শুরু করেছেন সেখানেই এসে শেষ হল। তাহলে পুরো ব্যাপারটাই শূন্য। আর এখানেই যত রহস্য! আসলে মনের কোণ, গৃহকোণ হৃদয়কোণ যত রকমের কোণই হোক না কেন সবই মায়া আর মোহ। আসলে সবই শূন্য!
তাই মনের কোণের বাইরের জানলাও খুলে রাখতেই হয় মহাবিশ্বে অন্য কোনো কোণ খুঁজতে।
(www.theoffnews.com - angel)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours