সুমিত তালুকদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, নৈহাটি, উত্তর ২৪পরগনা:

নির্বাচন এলেই প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে নানারকম প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হয় জনতার দরবারে। আকর্ষণীয় প্যাকেজ তৈরি করে ভোট ভিক্ষা করে। রাজনৈতিক প্রচার ও হাতিয়ার হিসেবে নির্বাচনী ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। প্রতিশ্রুতির তালিকা কোন দল কত বেশি দীর্ঘ আর ফলাও করে জনসমক্ষে তুলে ধরতে পারবে, বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারবে তার উপর নির্ভর করছে ভোটের ময়দানে জয় পরাজয়ের ফলাফল। ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর ভোটের পরে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার মধ্যে বিস্তর ফারাক লক্ষ করা যায়। অধিকাংশ দলই ভোটের বৈতরণী পার করে ক্ষমতায় আসার পর ভুলে যায় প্রতিশ্রুতির শর্ত, অঙ্গীকারের শপথ। সম্প্রতি একুশের নির্বাচনেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতির ঢালাও বন্দোবস্ত করেছে। কিন্তু শুকনো মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিলেই হবে না, চিড়ে ভিজবে না। চাই সঠিক প্রয়োগ এবং রূপায়ণ। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতায় যে দলই আসুক প্রথম প্রতিশ্রুতি হবে কর্মসংস্থান। শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের সামনে চাকরি নেই। দিশাহীন তারা। দেশের মেরুদন্ড যুবশক্তি। আর্থিক কোনো উপার্জন নেই, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই। করোনা আবহে লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছে বহু মানুষ। পরিযায়ী হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ঙ্করভাবে চোখ রাঙাচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে কোনো উল্লেখযোগ্য শিল্প হয়নি। অথচ ঘটা করে প্রতি বছর বেঙ্গল বিজনেস সামিট করে শিল্পে কোটি কোটি টাকার লগ্নির কথা বলা হচ্ছে। কিন্ত কোথায় শিল্প? সিঙ্গুর আজ প্রায় শ্মশানে পরিণত। টেটে দুর্নীতি, বছরের পর বছর এস এস সি নিয়োগ বন্ধ। সম কাজে সম বেতন, বেতন বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকেরা লাগাতার প্রতিবাদ আন্দোলন করছেন। সপ্তম বেতন কমিশন লাগু হয়নি। এখনো ১০০ দিনের কাজে, বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুযোগ নিতে হলে কাটমানি দিতে হয়। সুতরাং সাধারণ মানুষ আজ বঞ্চনার জবাব চায়, যুব সমাজ চায় যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান।

পাশাপাশি চাই নারীদের সম্মান ও আরো বেশি সুরক্ষা। সিঙ্গুরের তাপসী মালিক হত্যা, পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ, কামদুনির মতো নৃশংস ঘটনা যেন আর না হয়। সরকারি ট্রামে বাসে ফ্রিতে যাতায়াত, কে জি থেকে পি জি শিক্ষাদানের আর কন্যাশ্রীর রূপশ্রীর প্রতিশ্রুতি দিলেই নারী স্বাধীনতার শর্ত পূরণ হয় না। দেখতে হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, সমানাধিকার অর্জিত হয়েছে কিনা। কৃষক, শ্রমিকদের স্বার্থও দেখতে হবে। কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত শস্যের ফসলের ভালো দাম পায় তার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। বন্ধ মিল কারখানা অবিলম্বে চালু করে শ্রমিকদের পুনরায় কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। আগামী দিনে পানীয় জলের সমস্যা বিরাট আকার ধারন করতে পারে। পরিবেশ দূষণ হয়ে উঠতে পারে অনিয়ন্ত্রিত। এ ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়নি। এছাড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পুরোদমে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কিভাবে সামলানো যাবে আগামী দিনে সেটাও বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে উঠবে। অক্সিজেন সংকট কাটানো যাবে, প্রতিষেধকের আকাল, মৃত্যু মিছিল রোধ করা যাবে ---সেটাও বিরাট দায় ও দায়িত্ব হয়ে দাঁড়াবে। সব দল গলা ফাটিয়ে বলছে প্রতিশ্রুতি পালন করবে, রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের, অর্থনৈতিক বিকাশের কথা বলছে। কিন্তু বললেও কিভাবে, কি উপায়ে হবে সে বিষয়েও কোনও সদুত্তর নেই। নিশ্চয়তা নেই। সর্বোপরি নিবার্চনে প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা আসবে কিভাবে এবং কোথা থেকে --এ প্রতিশ্রুতি কোনও দল দিয়েছে কি? 

(www.theoffnews.com West Bengal election promises)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours