সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, কলকাতা:

পাত্রের নাম কাব্য ঘোষ। পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের বাসিন্দা। আর পাত্রীর পরিচয় পশ্চিম মেদিনীপুরের অধিবাসী সৃজা অধিকারী। বুধবার দুপুরে দুর্গাপুরের বিধাননগরের একটি গেস্টহাউসে হয়ে গেল তাদের বৌভাতের এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান।

আপাতদৃষ্টিতে দূর থেকে এই বৌভাতের অনুষ্ঠানকে খুবই ছিমছাম মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এই বৈবাহিক আচারের মধ্যে জড়িয়ে গিয়েছে মানবিক বন্ধনের একগুচ্ছ রকমারি উপাচার।

অনুষ্ঠানের বহর যে খুব বড় তা অবশ্যই দাবি করে না। বিশেষ পরিচিত সামান্য কিছু অতিথি এসেছিলেন বাহারি ফুল নিয়ে। আসলে নবদম্পতির সাফ আবেদন, "আমন্ত্রিতরা উপহার সঙ্গে আনবেন না। আপনাদের আশীর্বাদটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রত্যাশার।"

ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে এগারোটা। গেস্টহাউসে দুই পক্ষের পরিজনদের সঙ্গে নিয়ে সটান হাজির কাব্য আর সৃজা। পূর্ব পরিকল্পনা মতো একটা ছোট্ট আলোচনা সভা। উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে পরস্পরকে বরণ করা ও পরিচয় করে নেওয়ার পর্ব শুরু। ততক্ষণে পাশেই আরম্ভ হয়ে গিয়েছে রক্তদান শিবির। একে একে একুশজন রক্তদান করলেন এই বৌভাতের অনুষ্ঠানকে স্বাক্ষী রেখে। শুধুই কি রক্তদান শিবির আর দ্বিপ্রাহরিক প্রীতিভোজের আয়োজনের মধ্যে দিয়েই কি শেষ হল এই বৌভাতের অনুষ্ঠান? মোটেই তা নয়। এই অনুষ্ঠানে মরোনোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করলেন জনা পনেরো দুর্গাপুরবাসী। এছাড়াও দশজন অতিথি মৃত্যুর পর দেহদান আবেদনপত্রেও স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করলেন।

এলাকার সমাজসেবী কবি ঘোষ ও স্থানীয় আইনজীবী আয়ুব আনসারী বলেন, "আমাদের সমাজে বৈবাহিক অনুষ্ঠান কমবেশি সব পরিবারেই হয়ে থাকে। কিন্তু এমন মানবিক কর্মসূচি সমৃদ্ধ বৌভাতের অনুষ্ঠান বর্তমান অবক্ষয় বিজরিত সমাজে অবশ্যই দৃষ্টান্তের দাবি রাখে।"

আসলে এই বৌভাত যে কাব্য ও সৃজা যুগলের। তাই হয়তো যুগলের দাম্পত্য সুচনায় কাব্যময় এক গভীর মানবিক দাগ কেটে দিল পাত্র স্বয়ং। আর সৃজার নামের  অর্থ-সার্থকতায় পাত্রী এদিন শিল্পশহরের বুকে সৃষ্টি করল এক অভিনব দৃষ্টান্ত যা এক সামাজিক প্রেরণার।

(www.theoffnews.com - marriage ceremony Durgapur blood donation)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours