শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:
লেখক হতে অনেক মূল্য দিতে হয়। আর যদি আপনার অর্থের টানাটানি থাকে তবে বিপদ আরো একটু বেশি। তার মানে বলছি না যে, ধনী হলে মূল্য দিতে হবে না। কেন না, ধনী হোক বা অধনী, বউয়ের বকুনি না খাওয়া, লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে এটা সত্য যে অধনী লেখক হতে গেলে অনেক অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়। কারন ঐ একটাই অর্থই সব অনর্থের মূল! সকল কাজ আজকাল অর্থ সম্পদ কেন্দ্রিক। যা হওয়া উচিত নয়। ঐ যে আপনার দরিদ্র ঘরে বড় হওয়া "মেধাবী" ছেলেটিকে যে ধনীর ঘরে জামাই করা হয়। ওটাও তাই, সম্পদে ব্যক্তি মালিকানার বৃদ্ধি ঘটানো৷ কোন ভালোবাসা বা আদর "সন্মান" করার মত বিষয় থেকে নয়। অধনীর বউ বকাঝকা করবে, আয় রোজগার বাদ দিয়ে 'মেইসে' করছেটা কি, যেন বিদ্যাসাগর হবে! আর নিশ্চয় ধনীর বউ বলবে, অযথা সময় নষ্ট এতক্ষণে ব্যবসার পেছনে সময় দিলে ব্যাংক ব্যালেন্স আর কিছু বাড়তো! সমাজের লোকজনের উপহাস তো বোনাস হিসেবে থাকবেই। এক দল বলবে, ওর কাজ নেই তো কি করবে! ঠিক উল্টোটা বলবে, যখন শুনবে আপনি ধনী। কিন্তু পড়ছেন এবং লিখছেন৷ বলবে, ধনী মানুষ, জমিদার, নিজের খেয়ে দেয়ে বনের মোষ তাড়ায়। যদি সমাজ পরিবর্তনের কথা বলেন, তাহলে এর দালাল, ওর দালাল বলে গায়বী অভিযোগ করা হবে। এ ছাড়া যে কোন সময় ধর থেকে গলাটা আলাদা তো হয়ে যেতেই পারে। আমরা কেবল সরকারকে বলি অমানবিক অথচ সমাজ বেশি অমানবিক। সমাজের পাষন্ডতা ও পৈচাশিকতা নিয়ে কথা বলি না। বিতর্ক জুড়ে দিই সরকার পাষন্ড হলে সমাজে পৈচিশকতা বাড়ে। আমরা ভুলে যাই রাষ্ট্রটা কৃত্রিম সমাজটা অনেকটাই প্রাকৃতিক এবং আমরা সমাজের প্রভাবই রাষ্ট্রের উপর বেশি। একটি রাষ্ট্রের কাজ হলো, সমাজে সকল মানুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আমরা দেখি সরকারের অমানবিক নীতির সমালোচনা করলে অনেক দেশের স্বর গায়েব হয়ে যেতে পারেন কপাল ভালো হলে জেল।
একটি জাতীয় দৈনিকে এসেছে, কুষ্টিয়াতে এক ছেলে তার মাকে হত্যা করে ফেলছে তার চাচার সহায়তায়! কারন, সেই মা তার সম্পদ মেয়েদের দিয়ে দিতে চান। ছেলে তা হতে দিতে চায়নি। অনেকেই বলে অর্থ সম্পদ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেয়। এখানে ঠিক উল্টো। সম্পদ কারনে সন্তান খুনি হলো, মা হয়ে গেল খুন! কোন সরকারের মন্ত্রীদের মত এটা ব্যতিক্রম বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। পাড়া প্রতিবেশি আত্মীয়-স্বজন এবং সহদোর ভাইবোনদের বিরোধের প্রকৃত কারণ এই সম্পদ। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও আসলে ঐ অর্থ সম্পদ সম্পর্কিত। আগামী কাল থেকে যদি কেউ জানে এবং নিশ্চিত হয়। রাজনীতি করলে ধনী হওয়া যাবে না। বরং যা আছে তা থেকে কমে যেতে পারে। তবে পরশু দিন থেকে এই উপমহাদেশে যারা নেতা পাতিনেতা ও তাদের চামুচ সকলেই প্রয়োজনে মক্কা মদীনা, গয়া কাশি বৃন্দাবন চলে যাবে। তবুও রাজনীতি মুখোমুখি হবে না।
সম্পদে সীমাহীন ব্যক্তি মালিকানা পরিচালিত সমাজ ও রাষ্ট্রে সন্তানের হাতে মায়ের জীবন অনিরাপদ হলে আর কার জীবন নিরাপদ হতে পারে? যুদ্ধ ও দূর্ভিক্ষের প্রকৃত কারনও ঐ সম্পদ কুক্ষিগত করার আকাঙ্খা! যারা যুদ্ধ বাধাবে এবং দুর্ভিক্ষ ঘটাবে তাদের সম্পদ ফুলে ফেঁপে উঠবে।
আজকাল কমিউনিস্টরাই সম্পদে সীমাহীন ব্যক্তি মালিকানা পদ্ধতির সমাজের সমালোচনা করে না। বিরোধিতা করা তো দূরের কথা! আজকাল এও দেখছি সম্পদ আর ক্ষমতার স্বাদ পেতে বস্তুবাদী কমিউনিস্টরাও ভাববাদী এমনকি ধর্ম ব্যবসায়ীদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়। পুঁজিবাদী এতটা, বিধ্বংসী যে, ছেলেকে খুনি বানায় আবার ডাকাত ও পেশাদার খুনিদের পরস্পরকে বন্ধু বানিয়ে ফেলে! যদিও তা ক্ষনস্থায়ী! সম্পদে ব্যক্তি মালিকানা যতদিন অসীম থাকবে খুন ধর্ষন, মামলা, মোকাদ্দমা হিংসা বিদ্বেষ সাম্প্রদায়িকতা, সংঘাত, যুদ্ধ ততদিন থাকবেই। "অর্থই সব অনর্থের মূল" জানি না, আজও এ বাক্যটির ভাবসম্প্রসারণ ছাত্রদের করতে দেওয়া হয় কি না।
(www.theoffnews.com - writer money communist)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours