শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

সরকারের সাথে ভিন্নমত মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ নয়। বলেছেন, ভারতীয় সু্প্রীমকোর্ট। বাংলাদেশে সুপ্রীম কোর্ট কি এখন এমন রায় দিতে পারবে? বা কখনো দিয়েছিল? পাকিস্তানে বাক স্বাধীনতার অবস্থা কত করুণ, তা পুরো পৃথিবীই জানে। নতুন করে বলার কিছু নেই।

দুঃখজনক হলেও সত্য আমার প্রিয় 'মাতৃভূমি" বাংলাদেশেও দিনে দিনে, খুব দ্রুততার সাথে বাক্ স্বাধীনতার আয়তন ছোট হয়ে আসছে। ভবিষ্যতে বাক্ স্বাধীনতা যে থাকবেই না বললেও চলে। এবং তা অনুমান করতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার দরকার নেই। বাংলাদেশে এ মুহুর্তে সরকার পরিবর্তন ঘটলে বাক্ স্বাধীনতা বলতে কিছুই থাকবে না। অনেকেই এমনটা মনে করেন। এ কথায় বিতর্ক আছে। আমি সে বিতর্কে যাব না এখানে।  ধরুন, আজ বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলো। আর সাথে থাকলো হেফাজত! এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা সংবিধান থেকে কেটে দিল। এবং শব্দটিই  নিষিদ্ধ করে দিল। আওয়ামী ক্ষমতার বাইরে থেকে তাদের কোন নেতা যদি তখন বলে, "ধর্ম নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে ভারতের সহযোগীতা নেবে।" কি হবে তার  পরিনতি? এমনিতেই তো আওয়ামী লীগকে ভারত ও হিন্দুদের "দালাল" বলে থাকে পাকিস্তানপন্থীরা।  (যদিও গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে কার্যকলাপ উল্টো মনে হয়)। ঐ কথা বললে, কি ঘটতে পারে তা অনুমান করার দায়িত্ব আপনাদেরকেই দিলাম। 

কেন কথাটা বললাম, শুনুন তাহলে, কাশ্মীরের নেতা (?) ফারুখ আব্দুল্লাহ এক বিচিত্র নেতা। দিল্লী এলে,  সংসদে বসলে ধর্ম নিরপেক্ষতা চান। আবার কাশ্মীরে ঢুকেই স্থানীয় জঙ্গিদের তুষ্ট করতে শরীয়াভস্কি হয়ে যান! তিনি একটি টিভি টক শোতে বলেছিলেন, ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে  চায়নার সাহয্য নেবেন! আমি বাংলাদেশি হলেও, কথাটা আমার চোখেও রাষ্ট্রদ্রোহ মনে হয়েছে। কেন না, ফারুখ আব্দুল্লাহ তার দেশের ভিতরে, দেশের বাইরের শক্তির আগমনকে উৎসাহিত করেছেন!  তাও আবার এমন একটি রাষ্ট্রের সাহায্য কামনা করেছেন, যে রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের কথা বললেই জিন্দা মানুষের উপরে ট্যাংক চালিয়ে দেয় বলে অভিযুক্ত। যেহেতু খোদ ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট বলেছে ফারুখ আব্দুল্লার বক্তব্য ভারতীয় সংবিধান মতে  রাষ্ট্রদ্রোহীতা নয়। বরং এটা ভিন্নমত। তাই আমার বলার আর কিছু নেই। ভারতীয় সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিবৃন্দ মনে করেন, গনতন্ত্রের সৌন্দর্য্য হলো ভিন্ন মত বরদাস্ত করা। এবং তা রাষ্ট্রদ্রোহের কাছাকাছি হলেও। অথচ বাংলাদেশের "নিরিহ জনতাও" স্রেফ নাস্তিক হলেই ফাঁসি দিতে হবে বলে পথে দাড়িয়ে পরে! এরাই আবার গণতন্ত্র চায়। 

ভারতের  সুপ্রীম কোর্টের কাছ থেকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারগুলোর শেখার আছে বৈকি। ভিন্নমতকে তাদের মত চলতে দিলে দেশ ও গণতন্ত্রের দুইয়েরই কল্যান হয়। আমি অবশ্য গণতন্ত্রে খুব একটা আস্থাশীল নই। আপনারা যারা, এখানে সেখানে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে মঞ্চ ও ময়দান কাঁপান তাদের জন্যই বিষয়টা আলোচনায় আনলাম। ভারতের মত ভিন্নমত সহ্য করার ক্ষমতা আপনাদের আছে কি না। তা না হলে আপনাদের এই গণতন্ত্রের প্রতি দরদ দেখানো, স্রেফ ভন্ডামী হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবে। গণতন্ত্র মানে সংখ্যগরিষ্ঠের শাসণ এটা ভয়ানক রকমের মিথ্যা। গণতন্ত্র হলো, যারা দুর্বল, সংখ্যায় কম তাদেরকে, তাদের মতো করে মত প্রকাশ করতে দেওয়া। গণতন্ত্র হলো সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া। তা না থাকলে সে সমাজ গণতান্ত্রিক নয়। এখন ভাবুন, আপনার সমাজ, রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক কি না।

(www.theoffnews.com - democracy supreme court Farooq Abdullah)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours