শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

কি লিখবো? কি নিয়ে লিখবো? কেন লিখবো? লিখলে কি সমাজ পরিবর্তন হয়? পেটে ভাত জোটে? যদি পরিবর্তন না হয় এবং পেটে ভাত নাই বা জোটে। তবে লিখে কি লাভ? ঘরে ও বাইরে কত রকম প্রশ্নের যে মুখোমুখি হতে হয়, তার শেষ নেই। লিখলে ভাত জোটে না তা আমি জানি, জানে সবাই। সমাজ পরিবর্তন হয় কি না। তা জানি না।  আমজনতার লাভ হয় কি না, তাও জানি না।

তবে, ড্রাগ ডিলার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, ধর্মব্যবসায়ী, লুটেরা, দূর্নীতিবাজ, শাসক, শোষক, ভন্ড, চামচা, সুবিধাবাদী রাজনীতিক, প্রতারক ও ভেজাল ব্যবসায়ীরা ছড়া কবিতা কার্টুন গদ্য লেখা দেখে যে  ভড়কে যায় তা প্রমানিত। এমন কি আজকালের ফেসবুক পোষ্ট দেখেও সন্ত্রস্ত হয়ে যায় সব অপরাধীরা। গদ্য পদ্য কার্টুন ছড়া কলাম লেখায় আমপাবলিকের আসলেই কিছু যায় আসে না। আমপাবলিক এসব নিয়ে মাথাও ঘামায় না। এতে তারা নিজেদের লাভ লস দেখতে পায় না। রাষ্ট্রানানূভূতি, ধর্মানানূভূতি, সরকারানানূভূতি, আমলানানূভূতি, দলানানূভূতি, জাতিনানূভূতি, আঞ্চলিকতানানূভূতি, সম্প্রদায়ানানূভূতি, পেশানানূভূতি সহ সকল অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত ও ধ্বংস হয়ে গেলেও তাতে আমপাবলিকের কিছু যায় আসে না। আমপাবলিক আগে দাস ছিলো, তারপর প্রজা হয়েছিলো। তারপর নাগরিক হয়েছে। এখন কেউ দাস নয়, প্রজা নয়। এক সময় নাগরিক শব্দটাও থাকবে না। মানুষের পরিচয় ইতিহাসে বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। এই তো কিছুদিন আগেও অনেক দেশে ভোটাধিকার স্বপ্ন ছিলো। এখনও অনেক দেশে ভোটাধিকারের কথা চিন্তাও করতে পারে না। নারীর ঘরে বাইরে চলা কোন কোন সমাজে এখনো অচিন্তনীয়। আসলে লিখলে, কথা বললে, লিখতে ও বলতে দিলে অনেকের অনেক রকম দোকানদারি বন্ধ হয়ে যাবে। ভয়টা ওখানেই। তাই, তারা তাদের সুবিধা মত আমজনতাকে উসকে দেয় বিভিন্ন অপকৌশলে। এবিষয়ে  যুদ্ধবাজদের কৌশল সবচেয়ে বিপজনক ও কার্যকরী। তাদের মানববিবিধ্বংসী অপকৌশল ধরা পরে অনেক পরে।

আপনার মত যদি সত্যই হয়, তবে আপনি এত ভীত কেন? কথা বলতে দিন উভয় পক্ষকে। তারপর মানুষ জানুক, জেনে যার যার যে ভালো লাগে করবে। ভালো না লাগে করবে না।  আর কথা বা লেখার বদলে দা বটি  নিয়ে আসেন কেন? অথবা জেলে ঢোকানো কেন? কথা ও লেখার উত্তর কথা ও লেখায় দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। নাকি কথা, বলার ও লেখার মুরোদই আপনাদের নেই! 

রাষ্ট্র গোষ্ঠী দল ধর্মের কথা কি বলবো, ব্যক্তিও কত বর্বর হতে পারে তার দুটো ঘটনা শোনাই। বাংলাদেশে কদিন আগে শ্রেফ প্রেম করার কারনে, ভাই, তার বোনকে খুন করে ফেলেছে, কি ভয়বহ! আবার আজ ভারতীয় একটি দৈনিকে খবর  ছাপা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে একজন পিতা তার কন্যার মাথা কেটে হাতে নিয়ে হাটছে! কন্যার অপরাধ, সে একটি ছেলের সাথে সেক্স করছিলো, তার বাবা তা দেখে সহ্য করতে পারেনি! কি পাষন্ড পিতা! সেক্স একটি বায়োলজিক্যাল নিড এবং প্রাকৃতিক বিষয়। কার ক্ষমতা আছে এটা রোধ করার? প্রেম ও সেক্স করার অধিকার কি কেবল পুরুষের জন্য সংরক্ষিত? এই যে পুরুষ প্রেম করে, সেক্স করে, তা কি কোন নারীর সাথেই করে না? পুরুষতান্ত্রিক অপচেতনা একটি সংক্রামক ব্যধি। তবে এ ব্যধির সাথে কথিত সন্মানও জড়িত! এই সন্মান শব্দটা আজকাল ধর্ম ও পুঁজির রং দিয়ে নির্ণয় করা হয়। কখনো কখনো দেশ দিয়েও। যেমন আরবের কোন নারী যদি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের কোন পুরুষকে বিয়ে করে, তবে নির্ঘাত মেয়েটিকে বলি দেওয়া হবে। আর অনারব পুরুষটিকে কেটে কুটে মরুর বালুতে শুটকি বানাবে। হতে পারে খুলিটা রেখে দেবে ছাঁইদানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। এটা আরবদের পুরোনো ঐতিহ্য তারা শত্রুর কবর থেকে লাশ তুলে আনে। মাথার খুলিতে মদের পেয়ালা রাখে! খোদ ইসলামের ইতিহাস লেখকেরা এটা লিখে গেছে! সব মুসলমান ভাই ভাই, এ হাদীসের পাঁচ পয়সা মূল্য নেই আরব, অনারব বিয়ের প্রশ্নে। অত দূরে যেতে হবে না, নিকট অতীত ইতিহাসে তাকালেই হবে। বাঙালিরা পাকিস্তান কায়েমে প্রথম সারিতে ছিলো। যেই না পাকিস্তান হলো, তখনি বাঙালি ও বাংলা ভাষা অপবিত্র হয়ে গেল। আর পাকিস্তানি মুসলিম হয়ে গেল আশরাফ! বাঙালি মুসলিম হয়ে গেল জাতে নিচু! তাই অনুভূতি একটি বায়বীয়  বিষয়, একেবারেই কৃত্রিম। নাম পদবী, ধর্ম, নাগরিকত্ব, পেশার মতই পরিবর্তনীয়।  সাথে সাথেই অনূভূতিও পরিবর্তন হতে বাধ্য। আজকাল তো চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে লিঙ্গ ও যৌনানূভূতিও পরিবর্তন করা যায়। লিখলে লেখকের আর্থিক লোকসান হয়ই। এমনকি জীবন যৌবন জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে পরে। লাভ হয় দূর্বল  ও আমজনতার। বুঝে নিন লোকসান হয় কার কার। লেখক দরকার আরও বেশি, লেখক যত বেশি হবে দেশ হবে নিরাপদ৷ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আপনি যদি মনে করে পুলিশ ও সমাজের মাতাব্বর, নেতা ও নেতার চামচারা আপনার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে তবে আপনি নির্বোধ। বোকার স্বর্গে বাস করছেন। লেখনির শক্তি সম্পর্কে আপনি অবগত নন। আপনাকে ঠেকানোর জন্য পুলিশের হাতে আছে স্রেফ একটা লাঠি ও ৫৪ ধারা। রাতে কোমরে বাড়ি দিয়ে নিলে সকালেই ছেড়ে দেবে আদালত। কোন জেল জরিমান নেই। আর লেখনি ঠেকাতে ৫৭ ধারা। ধরলে জামিন পেতে পেতে হাতই অবশ হয়ে যাবে। আত্মীয় স্বজনের জুতার তলা কয়টা ক্ষয় হবে তার হিসেব থাকবে না। লিখবেন হাত দিয়ে কিন্তু অকেজো করে দেওয়া হতে পারে অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গও। আর একদল মানুষ নামের বন্য প্রাণীরাতো লেখনী ঠেকাতে মাঝে মাঝে লেখকের মাথা থেকে কাল্লাটাই পৃথক করে ফেলে। এবং তারা প্রকাশ্য বলেও তাদের মতের বিরোধীদের জবাই করবে, কল্লা কেটে নেবে।

তবুও কেউ না কেউ লিখবে। কেউ স্বেচ্ছায় বিষ পান করবে। কেউ চাপাতির আঘাতে মৃত্যুর মুখোমুখি হবে। কেউ মরেও যাবে। তবুও, কেউ না কেউ লিখবে, লিখবেই। লেখনী ও লেখক সকল প্রকার অপরাধীর আতঙ্ক। অপরাধীরা যাতে এ ভয়ে ভীত থাকে। সে জন্য কিছু মানুষের লিখে যাওয়া দায়িত্ব।  তা না হলে সমাজ কি রাষ্ট্রে নিরাপত্তা বলে কিছু থাকবে না। আমাদের চাওয়া আসলে একটি সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমাজ। যা এখন ছয় নম্বর মৌলিক অধিকার বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

(www.theoffnews.com - Bangladesh writer writing)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours