সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
সততার মুর্তির ইমেজ ভেঙ্গে চুরমার। এবার সরাসরি বেনিয়ম ও সরকারি অর্থ ঘুরপথে নয়ছয় করার অভিযোগ উঠল পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।
সময়টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোটেই ভালো যাচ্ছে না এটুকু নিশ্চিত। নদীর নিত্য পাড় ভাঙার মতো গোটা তৃণমূল দলটার পলেস্তরা খোসা এখন যেন রোজ নামচা হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে আসন্ন নির্বাচন আবহে তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিরোধী দল তোলাবাজির তোপ দাগছে রোজ নিয়ম করে। সিবিআই কয়লা কান্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বলে খবরে প্রকাশ। কাটমানি প্রসঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং ইতিমধ্যে একযোগে বিদ্ধ করেছেন তৃণমূল দল ও ভাইপোকে। তবুও এতদিন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির আঙুল তুলতে পারেননি কেউই বা কোনও পক্ষ। কিন্তু এবার বোধ হয় বেড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধা হয়েই গেল। বেনিয়ম ও ঘুরপথে সরকারি অর্থে লাভবান হওয়ার প্রত্যক্ষ অভিযোগ শেষে উঠেই গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। এসব যাবতীয় অভিযোগের সৌজন্যে রয়েছে কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ে সাম্প্রতিক রুজু করা একটি জনস্বার্থ মামলা।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য গ্রন্থাগার দফতরের ডাইরেক্টর সহ অন্যান্য বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন দীপক কুমার ঘোষ।
কে এই দীপক ঘোষ? উনি অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস আধিকারিক। তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক। একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনধারা প্রসঙ্গে একটি বই লিখে সারা ফেলে দিয়েছিলেন বঙ্গ রাজনীতিতে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ওই বই প্রকাশ্য বাজারে অদৃশ্য হয়ে যায়।
জনস্বার্থ মামলার রিট পিটিশনে অভিযোগ করা হয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। দীপকবাবুর আইনজীবী সৌরভ মন্ডল বলেন, "রাজ্য সরকারের আর্থিক আনুকূল্যে চলা মোট ৪১টি গ্রন্থাগারে বিগত পরপর কয়েকটি আর্থিক বছরে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা নানা বই কেনা হয়েছে। মজার বিষয় হল এই আর্থিক বছরগুলিতে আর কোনও লেখকের একটিও বই কেনেনি এই গ্রন্থাগারগুলি। আমার মক্কেল এই তথ্য লিখিত ভাবে পেয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে তথ্য জানার অধিকারের আবেদন করার প্রেক্ষিতে।"
আইনজীবী সৌরভ মন্ডলের মন্তব্য, "ওই মামলার পিটিশনে অভিযোগ করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিজের বই পুশসেল করেছেন সরকারি গ্রন্থাগারগুলিতে। যা পুরোপুরি বেআইনি ও অনৈতিক পদক্ষেপ।" ওই আইনজীবীর আরও অভিযোগ, "বইগুলো কেনা হয়েছে সরকারি অর্থে। অন্যদিকে বইয়ের রয়েলটি লেখিকার প্রাপ্য। ফলে ঘুরপথে সরকারি অর্থ চলে যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই সরকারি কানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। সুতরাং এখানেও আর্থিক বেনিয়ম ঘটেছে সুনির্দিষ্ট ভাবেই।"
কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ে রুজু করা মামলায় যে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছে তাতে পরিস্কার উল্লেখ রয়েছে, গ্রন্থাগারগুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইগুলি কেনার ক্ষেত্রে কোনও সরকারি বিধি অনুসরণ করেনি। পুরোটাই অস্বচ্ছতায় ভরা। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এখানে উঠে এসেছে একগুচ্ছ প্রশ্ন--
১) বিগত কয়েক বছর যাবৎ রাজ্য সরকারি গ্রন্থাগারগুলি শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর বই কিনলো কেন ও কার স্বার্থে কেনা হল?
২) বিগত পরপর কয়েকটি আর্থিক বছরে অন্য কোনও লেখক লেখিকার বই কেনার উদ্যোগ নিল না কেন গ্রন্থাগারগুলি?
৩) কি এমন পরিস্থিতি ঘটল যেখানে শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই কেনার ক্ষেত্রে রাজ্য গ্রন্থাগার দফতর সরকারি বিধি লঙ্ঘন করতে বাধ্য হয়েছে?
৪) সরকারি বিধি ভেঙে এই বইগুলি কেনার ক্ষেত্রে চুড়ান্ত আর্থিক মঞ্জুরী কোন আধিকারিক দিলেন, কেনই সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে মঞ্জুরী দিলেন, আর এতে চুড়ান্ত আর্থিক লাভবান কে কে হয়েছেন?
৫) মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর ব্যক্তি স্বার্থে ব্যক্তি প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে যাবতীয় অনিয়মের আড়ালে, এটা কি বেঠিক?
প্রশ্নগুলি যে সোজা কিন্তু উত্তর যে অজানা!
(www.theoffnews.com - West Bengal Mamata Banerjee Dipak Kumar Ghosh Calcutta High Court)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours