দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

খেলা হবে শ্লোগানের পেটেন্ট কার? তার হকদার খুঁজতে গাঁ উজার। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতা ওসমান সাহেব নাকি এই "খেলা হবে" শ্লোগানের প্রথম প্রবক্তা।  

সে যিনিই হোন, আমজনতার মাথা ব‍্যাথা তাতে বিন্দুমাত্র নেই। একুশের নির্বাচনে ফলাফল এখন সত‍্যি খেলা হবের উপর নির্ভর করে কিনা সেটা দেখার। দিলীপ ঘোষেরা বা বিমান বসুদের জোট কেমন তালমিলে কটা গোল দেবেন সেটাই দেখার। দিদি তো গোল রক্ষক হিসেবে সেই গোল আঁটকাবেন বলেছেন। সর্বপরি নির্বাচন কমিশন রাজ‍্য নির্বাচনে আটদফা নির্বাচন করবেন। রেফারি, সাইড ম‍্যান নিয়ে নেমে পড়েছেন। খেলা হবে। কে ফ্রিকিক পাবেন, পেনাল্টি দেবেন সেটাই দেখার। তবে জেন্টল ম‍্যানের খেলা হবে না সেটা স্বয়ং অনুব্রত বলেছেন অনেকবার। তিনি বলেছেন, ফাউল প্লের কথা। বলেছেন হাঁটুর উপরে কিকে মালাইচাকি ভাঙার কথাও। ইঙ্গিত ভয়ংকর। তাই তিনি বলেই রেখেছেন ভয়ংকর খেলা হবে। তাতে  পেনাল্টি হলে হোক।

অনুব্রত মণ্ডলের এহেন হুংকার মোটেই আমল দিতে নারাজ বিজেপি। দলের এক নেতার বক্তব্য, "তোলাবাজ তৃণমূল নেতাদের নাম মুখে আনলে জিবটা নোংরা হবে নিজের। হারের সিঁদুরে মেঘ দেখে মানসিক অবসাদের এখন এরা বিকারগ্রস্থ। যারা মালাইচাকি ভাঙার ধমকি দেয় তারা আসলে রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া আর পলিটিকাল লুম্পেন ছাড়া আর কিছু নয়। নর্দমার কীটেরও এদের থেকে সৌজন্যতা বোধ অনেক বেশি। আমরা নিশ্চিত, খেলা হবে। জনগণের যথাযত রায় নিয়ে উইনিং গোলটা ঠিক দিয়ে দেব তৃণমূলকে কোনো ফাউল ছাড়াই।"

সেই জন্য তর্কযুদ্ধের দাফটে "খেলা হবে" শব্দ বন্ধ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ট্রেণ্ডিং। তার প্রভাব দেওয়াল লিখনেও। এখন সব রাজনৈতিক দল পড়তে শুরু করেছেন জয় পরাজয়ের অঙ্ক এর মধ্যেই। 

এ যেন গুপি বাঘার ভূতের রাজা দিল বর। জবর জবর তিন বর। এক- নকুল দানা। গুড় বাতাসা। দুই --ঢাক চড়াম। পাঁচনে সোজা। উন্নয়ন রাস্তায়। তিন নম্বর "খেলা হবে"।

এই স্লোগানের পেটেন্ট নিয়ে যতই দড়ি টানাটানি হোক, বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম আসবেই। তাঁকেই বিভিন্ন দলীয় সভায় বার বার "খেলা হবে" বলতে সবাই শুনেছেন। তাঁর কথায় সুর দিয়েছেন বোলপুরের রথীন কিসকু। বিভিন্ন সভায় এখন আলাদা সংস্কৃতি মঞ্চ  হয়। সেখানে সভা শেষে গান হয় "খেলা হবে"। অনুব্রতর কথায় এসব একটু বিনোদন। বিয়ে বাড়িতেও সেই খেলা হবে গান। নির্বাচনী দেওয়াল লিখনেও তার প্রভাব থাকবে, তাতে আশ্চর্য কিছুই নেই। নলহাটি দুই ও এক ব্লকে বেশ কিছু জায়গায় দেওয়াল লিখনে সেই খেলা হবে শ্লোগান। যেমন নলহাটির ভদ্রপুরে একটি দেওয়ালে দেখা গেল -- "হাতরাসেতে বোন জ্বালাও, মোদি বলেন থালা বাজাও। এই মাটিতে বাজনা হবে। একুশে আবার  খেলা হবে।" কিম্বা " বুড়ি মায়ের স্বাস্থ্য সাথী ফুলিয়ে বলে বুকের ছাতি। অপারেশন ফ্রীতে হবে। বন্ধু এবার খেলা হবে।" বিভিন্ন মঞ্চে হোক কলরবের মতো এধরনের স্লোগান বাজার মাত করেছে। হুগলির সাহাগঞ্জের সভায় এই "খেলা হবে" স্লোগান নিজের গলায় তুলে নিয়েছেন খোদ মুখ‍্যমন্ত্রী তাঁর নিজের গলায়। জনপ্রিয়তার নিরিখে বিজেপিও বলতে শুরু করেছে খেলা হবে। বীরভূমের বিজেপি নেতা কালোসোনা মণ্ডল থেকে দলের রাজ‍্যর সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননের গলায় শোনা গেছে খেলা শুরু হয়েছে। বামদলও পাল্লা দিতে  হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গণ সঙ্গীত ছেড়ে এখন টুম্পা সোনাতে মজেছে ব্রিগেড ভরাতে। তবে এখনও পর্যন্ত খেলা হবে সুপার ডুপার হিট। তাই বেশির ভাগ সভায় অনুব্রত সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে বলছেন-- রথীনের গলায় খেলা হবে শুনবেন তো? দর্শকের আগ্রহেই চলে মার্কেটিং। দেওয়াল লিখন সেই কথায় বলে। শ্লোগানের উৎস এপার না ওপার বাংলার, না অনুব্রতর সেটা বিষয় না। মোদ্দা কথা লোক খাচ্ছে। নির্বাচনী দেওয়ালও পড়ে নিচ্ছে সেই শ্লোগান। আর এখানেই পেশাদার ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের অস্বস্তি হতে বাধ‍্য। কারন দিদির কেষ্টর স্লোগান এখন তাঁর মস্তিষ্ক প্রসূত স্লোগানকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। এব‍্যাপারে একটা ঘটনা মনে করিয়ে দেয় অনুব্রতর দূরদর্শিতা। রামপুরহাটের এক সভায় অনেক ভালো বক্তব্য রাখা হলো। শেষে অনুব্রত শুধু একটি কথা বললেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর এক সহচরকে বললেন, দেখবি আমি যেটা বললাম, কালকে সেটাই নিউজ হেড লাইন হবে।

(www.theoffnews.com - West Bengal politics khela hobe)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours