সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

এ যেন জ্যোতির মাতৃদুগ্ধে মমতার নম্বরফেরি!

সেই জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রীত্বের সময়কালে পশ্চিম বাংলার শিক্ষা প্রসারণের ভাগ্যাকাশে শনি গ্রহরাজের মহাদশা শুরু হয়। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালেও বঙ্গের শিক্ষা বিস্তারে নেতির ধারাবাহিকতার রাহুমুক্তি তো ঘটলই না। বরং শনির সাড়ে সাতি এক্ষেত্রে পুরোপুরি জাঁকিয়ে বসেছে অন্তর্জলি যাত্রার শেষ পেরেক পোঁতার দৃষ্টান্তে।

লাল লাল লাল সেলামের মতো দিগন্ত বিকীর্ণ করে কি প্রচারই না সেদিন করেছিলেন রক্তিম সেবকেরা। তখন বাংলার বুকে একটাই গণস্লোগান। "মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সম।" এই স্লোগান তো সত্যি অপরূপ ও চিরন্তন সত্য। কিন্তু এই নান্দনিক সত্যনিষ্ঠার স্লোগান কায়ায় রক্তিম পতাকার ছায়া প্রতিষ্ঠা করে বাংলার প্রাথমিক স্কুলগুলি থেকে ইংরাজি উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল জ্যোতিবাবুর নেতৃত্বে। রাতারাতি। ফলাফল তো সবাই জানেন। বঙ্গমাতার প্রজন্মের পর পড়ুয়া প্রজন্ম পঙ্গু হয়ে পড়ে ইংরেজির নূন্যতম জ্ঞানচর্চায়।

আর বর্তমানে মমতাদেবীর সৌজন্যে শিক্ষাব্যবস্থায় নয়া পাইয়ে দেবার কালচার আমদানি হয়েছে। বাংলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অবাধে চলছে "বিনা পরীক্ষায় নম্বর দান" ও "যোগ্যতাহীন পরীক্ষার্থীকে অতিরিক্ত নম্বর দান।" হে বঙ্গ বিধাতা!  এমন শিক্ষা নৈরাজ্যের করুণ নিয়তির অভিশাপে শুধু প্রজন্ম নয়, সমগ্র বাঙালি জাতির ললাটে লিখে দেওয়া হল বং-খুনের জীবন্ত পরোয়ানা। এই উদ্যোগের সৌজন্যে এককেশ্বরী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।

এরাজ্যের শিক্ষার এহেন চিতা শয্যার মর্মান্তিক উদাহরণের জন্যে তাহলে কি দুজনেই সমান রূপে দায়ী? প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর, না একটি কয়েনের দুটি পিঠের দোষারোপ এক্ষেত্রে সমগোত্রীয় নয়।

সরকার চালাতে গেলে নানা পরিকল্পিত সরকারি নীতি রূপায়নের দায়িত্ব বর্তায় মুখ্যমন্ত্রীর উপর। জ্যোতিবাবু সেই কাজটাই করেছিলেন পরীক্ষামূলকভাবে স্পষ্ট একটা নীতি রূপায়নের ভিত্তিতে। সেই গৃহীত নীতি বেঠিক না সঠিক তাতো বহুল চর্চিত হয়েছিল। কিন্তু এই পরিসরে কোনও পাইয়ে দেবার পরিকল্পনা ছিল না। যেমন ছিল না ভোট বৈতরণী পাড় করার নিজের দলগত লিপ্সা। উনার চরম রাজনৈতিক বিরোধীরাও এই এহেন লিপ্সার তকমা তাঁর সাদা পোশাকে এক মূহুর্তের জন্য সাঁটাতে পারেননি কোনদিন। তবে নীতি গ্রহণের বিরোধিতায় জ্যোতিবাবু রাজনৈতিক ভাবে সমালোচিত হয়েছেন ঘনঘন। এটাও ঠিক।

আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেলায় এই ইস্যুতে বিরোধীরা তাঁকে বারংবার কাটগড়ায় তুলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পাইয়ে দেবার রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির অভিযোগকে কেন্দ্র করে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পৃথক ভাবে চরম সোচ্চার। তাঁদের বক্তব্য, এখানে নাকি আক্ষরিক অর্থে প্রশাসনিক নীতির কোনও প্রকৃত অবকাশ নেই। রয়েছে নীতির মোরকে নতুন প্রজন্মের পড়ুয়া ভোটারদের মনজয়ের দলীয় লক্ষ্য! যথেচ্ছ নম্বর রেজাল্টে বিলিয়ে পড়ুয়াদের ভবিষ্যতকে কালো ঘোড়ায় বাজি ধরা হয়েছে আসন্ন ভোট বৈতরণীর পালে হাওয়া লাগাতে।

মুখ্যমন্ত্রী দুজন ঠিকই। কিন্তু একটাই রাজ্য। কিন্তু একটাই ইস্যু, শিক্ষার অধঃপতন। তবু ফারাক রয়ে গেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক আলোকবর্ষ দূরত্বের। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজ নামের প্রচারক যে নিজেই। বরাবরই। অথচ জ্যোতি বসুর নাম ঘুরেছে মানুষের মুখে মুখে। দশকের পর দশক ধরে। আজও।

আসলে নিজ স্বার্থহীন একটা ব্যক্তিত্ব চেতনে বিস্তর ফারাকের চিন্তনের একটা বুনিয়াদ তো গড়েই দেয়। যা রাজ্যবাসীর একান্ত নিজস্ব অন্তর্কথা। তাই না?

(www.theoffnews.com - West Bengal education policy Jyoti Basu Mamata Banerjee)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours