শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

দরিদ্ররা "দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র'' বোঝে না।  অর্থনীতির এ জটিল শব্দ বোঝার সময়ও তাদের নেই। কোনও সরকার চায় না তার নাগরিক দারিদ্রের দুষ্টচক্র বুঝে উঠুক। তাহলে কোনও সরকার তো দুরের কথা। রাষ্ট্রসমূহের অস্তিত্ব ও প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারে! তা সকল শাসক ও শোষকেরা জানে। যারা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নিয়ে পড়ে ও পড়ায়, তারাও এসব নিয়ে কথা বলে না। কেননা শিক্ষকের প্রয়োজন 'বেতন' আর শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন 'সনদ'! এই সনদ ও বেতনের চক্করে শিক্ষার উদ্দেশ্যই মাঠে মারা যায়। জ্ঞানার্জনের বিষয় তো দূর কি বাত! যে শিক্ষা, সনদ ও  বেতন ছাড়া অন্য কিছু দিতে পারে না। সে শিক্ষা জাতির কোন উপকার আসবে কি? প্রশ্ন থাকলো।

কি গ্রাম, কি শহর অনেক মহিলাকে দেখবেন তারা অস্থির। কেন অস্থির? উত্তরে বলবে, আজ কিস্তির দিন! কিসের কিস্তি? সমিতি ও এনজিওর কিস্তি। এই সমিতি ও এনজিওগুলো, ব্যাংকের ভুল নিতীমালার সুযোগে মানুষকে চড়া সুদের ফাঁদে ফেলে। কত মানুষ সমিতি ও এনজিওর ফাঁদে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে তার হিসেব কি কারো কাছে আছে? 

সুদের ফাঁদ বড় ভয়ংকর। যে বা যারা সুদের ফাঁদে আটকা পড়েছে, তারাই কেবল জানেন সুদের ফাঁদ কত বিপদজনক। কাবুলিওয়ালা গল্প পড়ে সুদে টাকা সুদখোরদের বর্বরতা বোঝা যাবে না। আমাদের দেশের মানুষ ব্যাংক, এনজিও ও বিভিন্ন সমিতি থেকে টাকা ঋণ নিয়ে থাকে। এছাড়া ব্যক্তির নিকট থেকে চড়া সুদে ঋণ নেয়।  আমি এই লেখায় ব্যাংক ঋণের প্রসঙ্গ আনছি না। তবে এতটুকু না বললেই নয় যে, ব্যাংক ঋণ না পেয়েই মানুষ, বিভিন্ন ঋণের উৎস থেকে ঋণ গ্রহনে বাধ্য হয়।  ঋণ নেওয়ার উৎসগুলো হচ্ছে, বিভিন্ন এনজিও, সমিতি ও ব্যক্তি। ব্যক্তির নিকট থেকে ঋণ নিলে, প্রতি ১ লাখ টাকায় মাসে ৩ হাজার টাকা থেকে  ১০ হাজার টাকা সুদ গুণতে হয়। হাত পা ধরেও বসে থাকে ঋণগ্রহীতা। ভাবা যায় প্রতি মাসে ১ লাখে, ১০ হাজার টাকা সুদ! ব্যাংক যাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে, সেই ব্যক্তিই কিন্তু এনজিও ও সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের দ্বিগুণ সুদ নিয়মিত পরিশোধ করে। আরো গভীর চিন্তার বিষয় এনজিও ও সমিতি যে ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়ার অনুপযুক্ত ঘোষণা করছে। সেই ব্যক্তিই আবার কোন ব্যক্তির নিকট থেকে ঋণ নিয়ে সমিতি ও এনজিওগুলোর চেয়েও দ্বিগুণ সুদ পরিশোধ করছে! তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়ালো?

ব্যাংক যে ব্যক্তিকে বছরে ১ লাখ টাকায় ১৬  হাজার টাকা পরিশোধ করার যোগ্য নয় ভাবছে। সেই ব্যক্তি সমিতি ও এনজিওকে প্রতি লাখে বছরে ৩২ হাজার থেকে ৩৬ হাজার টাকা সুদ দিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত! আবার যে ব্যক্তিকে সমিতি ও এনজিও ১ লাখ টাকায় প্রতিবছর ৩৬ হাজার টাকা সুদ দেওয়ার অনুপযোগী ভাবছে। সেই ব্যক্তিই প্রতি লাখ টাকার বিপরীতে ৭২ হাজার টাকা সুদের ঘানি টানছে! তাই, কে ঋণ নিয়ে সুদ সহ মূলধন ফেরত দেওয়ার উপযোগী বা উপযোগী নয়,  তার যে নিয়ম, মানদন্ড ও পদ্ধতি প্রচলিত তা সঠিক মনে হচ্ছে না। 

আমিও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদান ও রিকভারিতে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি দেখেছি সাধারণত দরিদ্ররা টাকা মেরে দেওয়ার কথা ভাবেন না। অথচ সমিতি ও এনজিওগুলোর সুদের হার দ্বিগুণের বেশি। আর ব্যক্তিগত ভাবে যারা ঋণ দিয়ে থাকে, তারা তো গলা কাটা সুদ আদায় করে। অথচ ব্যক্তির নিকট থেকে ঋণ নিয়ে কোনও  ঋণগ্রহীতা, আসল তো দূরের কথা, সুদের টাকা মেরে দিয়েছে, এমন ঘটনা খুব খুব কম। অন্তত ব্যাংক ঋণের তুলনায়। সাধারণত যারা ব্যক্তিগত ভাবে ঋণ প্রদান করে, তারা হয় মাসলম্যান, না হয় খুব ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ। 

ব্যাংকের কঠোর নিয়মের কারনে মানুষ সমিতি ও এনজিওর নিকট ঋণ নিতে যায়। আবার এনজিওর বহুবিধ নিয়মের কারনে মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ নিতে বাধ্য হয়। এবং যথারীতি  ঋণের বিপরীতে চড়া সুদের ফাঁদে আটকা পরে। এই ঋণের ফাঁদ থেকে জনগনকে বাঁচাতে রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক নীতিমালা পাল্টাতে হবে। সাপ্তাহিক ঋণের কিস্তি, সুদখোরের জালে আটকে পরা আমজনতাকে উদ্ধার করবে কে? রাষ্ট্র, বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদেরা এর দায় এড়াতে পারেন না! সুদে অর্থ-ঋণ দিয়ে এনজিও, সমিতি ও সুদখোরেরা ৯৯% ই লাভবান হয়েছে। কিন্তু একশোজন ঋণগ্রহীতার কতজন তাঁদের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে পেরেছেন তা কেউ জানালে বাধিত হবো। অপ্রিয় হলেও সত্য, সমিতি ও এনজিওগুলো টিকেই থাকে দরিদ্র মানুষকে পুঁজি করে!

(www.theoffnews.com - Bangladesh NGO, bank, interest, samity loan)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours