মৌসুমী প্রামাণিক, লেখিকা, কলকাতা:

চতুরঙ্গের খেলায় একে অপরকে মাত দিতে দেখে যেমন মজা লাগে, তেমনই ভোট-উৎসব এলে শাসক-বিরোধীর চাল ও পাল্টা চাল নিয়ে বিশ্লেষন করতে বেশ লাগে। তবে প্রথমেই বলে রাখি এটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষন মাত্র। কোন রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার করার কোন ইচ্ছে বা প্রয়োজন আমার নেই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে বিরোধীরা অনেকরকম নিন্দা রটিয়েছেন। পড়েছি। যার সত্য মিথ্যা বিচারে এই মুহূর্তে যাচ্ছি না। সময়ের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। তবে দু’ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি।

যদিও আমার মোটেই ফর্ম ফিলাপ করার ইচ্ছে ছিল না। আমার বাবা-মা একপ্রকার জোর করলেন। বর্তমান সরকারের যথেষ্ট সমালোচনা করলেও তাঁরা এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থক। বিরোধিতা ও সমালোচনা করলে আমাকে যথেষ্ট বকাবকিও শুনতে হয়।

যাক গে, দুপুর দুটোর সময় গিয়ে দেখলাম হাফ কিলোমিটার লাইন যা একঘন্টার মধ্যে এক কিলোমিটার ছাড়ালো। কে কে হাজির ছিল না সেই লাইনে! সদ্যজাত থেকে প্যারালিসিস, বিকলাঙ্গ, গরীব, মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত, ধনী সকলেই। এবং অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে শৃংখলা রেখে সকলেই অপেক্ষা করছিলেন। এবং সকলের মুখেই মাস্ক ছিল।

আধার কার্ড কমপেয়ার করে বুড়ো আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে, পরিবারের প্রত্যেকের ছবি ফাইল করে তারপর কার্ড দেওয়া হলো। বুঝলাম প্রসেসটির মধ্যে কোন অসত্যতা নেই। এবং কোন রাজনৈতিক বিভাজনও করা হয়নি। অনেক সিপিএম সমর্থকদের উৎসাহ লক্ষ্য করেছি। বিজেপি সমর্থক বলতে কিছু বিহারী পরিবার। তারাও ছিল। নিতান্ত গরীব, দিন আনি দিন খাই মানুষেরা বলাবলি করছে যে বিজেপি এলে সরকার থেকে আর কোন সুযোগ, সুবিধা নাকি পাওয়া যাবে না। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতেই হয়। কারণ স্মার্ট ফোন ও সংবাদ চ্যানেলের কারণে আজ তারা সত্য মিথ্যা সবই টের পান।

কার্ডের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালের নামের লিস্ট ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া দুয়ারে সরকার লেখা একটি কার্ড।

বলতে কোন দ্বিধা নেই যে এটা ভোটের প্রচার। এটাও বুঝতে পারছি অসুখের সামনে মানুষ কতখানি অসহায়। প্রাইভেট নার্সিংহোম কিভাবে মানুষের সঞ্চয় নিঃশ্বেস করে দিচ্ছে তার প্রমাণ কদিন আগেই পেয়েছি। চারদিনে আমার বিল হয়েছিল ৭৯০০০টাকা। মেডিক্লেম ছিল। ৮০% ক্যাশলেস হয়েছে। মেডিক্লেমগুলোর প্রিমিয়ামও তো খুব কম নয়। এবং সঙ্গে পরোক্ষ কর।

কোথায় পাবে গরীব মানুষ এত টাকা? তাইতো এত ভিড়। দেখে চামার ব্যবসায়ীদের লজ্জা পাওয়া উচিৎ। 

সব মিলিয়ে বলতেই হচ্ছে এটা ভোটের বাজারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা সাংঘাতিক ট্রাম কার্ড। মানুষকে উৎসাহিতও করেছে যথেষ্ট। এবং কর্মীদেরও। এর প্রভাব ভোটবাক্সে কতটা পড়বে তা সময়ই বলবে।

ঠিক এই সময় চতুরঙ্গের খেলায় বিরোধীদের থেকে শাসকদল কিন্তু কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছে। আজকের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই আমার ওবজারভেশান। গেরুয়া শিবির কোটালপুত্র শুভেন্দু’কে হরণ করে যে চাল দিয়েছিল, এ তারই পাল্টা চালই বটে। এরপরের চাল কে দেবে এবং সেটা কিরকম ও কতখানি সুদূরপ্রসারী হবে, দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

(www.theoffnews.com West Bengal politics swasthya Sathi)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours