মৌসুমী প্রামাণিক, লেখিকা, কলকাতা:

বলিউড দাঁড়িয়ে আছে দাউদ ও তার দুবাইয়ে বসবাসকারী ডনভাইদের ইনভেস্টমেন্টের দৌলতে। সেখানে ঘা দেবার ক্ষমতা কোন সরকারের নেই। ঠক বাঁচতে গা উজাড় হয়ে যাবে। সব প্রতিষ্ঠিত নায়ক, নায়িকা, পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনেতাদের গ্রেফতার করতে হবে। আর যে তদন্তকারী সংস্থার বড়বাবু গ্রেফতার করবেন, তদন্ত শেষ করার আগেই তার হয়তো রাম নাম সত্য হয়ে যাবে।

টলিউডে এবং ফুটবলে স্পনসর পাওয়া খুব মুস্কিল হয়। একসময় ফুটবল সংস্থাগুলো ও বাংলার সিনেমা শিল্প ধুঁকছিল। সেই সময় ঐ সারদা, রোজভ্যালী ইত্যাদির মত সংস্থাগুলো বাংলা সিনেমা ও ফুটবল মাঠে ও অন্যান্য স্পোর্টসে ইনভেস্ট করতে শুরু করে। একজন খেলোয়াড় বা অভিনেতারা নিজের কাজ করেন এবং পারিশ্রমিক নিয়ে চলে যান। তদন্তে গ্রেফতার করতে হলে তো সবাইকে করতে হবে। অথচ তারা কি জানে নিবেশিত টাকা কিভাবে রোজগার করা হয়েছে? মাঝে কিছু ব্রোকার থাকে, তাদেরও গ্রেফতার করা উচিত। তারাও তো খেটেখুটে দুটো পয়সা রোজগার করেছে। প্রোডাকশান বয় থেকে আরম্ভ করে একস্ট্রা যারা যারা ঐ টাকা নিয়েছে সকলকে গ্রেফতার করা উচিৎ। তা কি সম্ভব? 

নিজ নিজ সংস্থার পাবলিসিটি করার জন্য উপঢৌকন দিয়ে এমএলএ, এমপিদের মন্ত্রী সামন্তদের নিয়ে আসা হয়েছে। তারাও প্রয়োজনীয় অর্থের বিনিময়ে প্রশংসা করে দিয়েছেন। আফটার অল পার্টি করতে গেলে ফোকোটিয়া পয়সা তো দরকার রে বাবা!

ঐ সংস্থাগুলির কাজকর্ম সম্পর্কে সম্যক ধারণা শুধুমাত্র যারা অনুমোদন করে কোম্পানী আইন অনুযায়ী মানে সরকারী সংস্থা যে রেজিস্ট্রীকরণ করে, প্রতি বছর যার কাছে ডিরেকটরদের ডিটেলস সহ ব্যালান্স শিট জমা করতে হয় বাধ্যতামূলক ভাবে। মিনিষ্ট্রি অফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সও জড়িত থাকে বিষয়টিতে। জড়িত থাকে সেই চার্টাড ফার্মটি যে প্রতিবছর স্ট্যাটুটারী অডিট রিপোর্ট জমা করে তারা। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে একটি সংস্থা মাসের পর মাস, বছরের পর বছর হাজার কোটি টাকার ট্রানজেকসন করছে, বিদেশে টাকা আসা যাওয়া করছে অথচ সেই বিষয়ে কোম্পানী রেজিস্ট্রার, সেবি, ফেমা, ইনকাম ট্যাক্স ও মিনিষ্ট্রি অফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ইত্যাদি সংস্থাগুলো কিছুই জানতো না?

সত্যিকারের তদন্ত যদি চালাতে হয় তবে সবার আগে সেইসকল অফিসারদের তলব করা হোক। সেইসব সিএ'দের লাইসেন্স বাতিল করা হোক। কিন্তু সেই স্বদিচ্ছা কি কেন্দ্রের শাসক দলের আছে? মনে হয় না। কারণ আর্থিক দুর্নীতির শিকড়টা যে অনেক গভীরে। সেই শিকড়ওয়ালা বিশাল গাছে বসে পা দোলাচ্ছে কেন্দ্রীয় শাসক দল। আর তাদের বিরুদ্ধে বলার মতো সাহস না সংবাদ মাধ্যমের আছে। না কোন বিরোধী দলের আছে। 

যদি নির্বাচন কমিশন স্বশাসিত সংস্থা হোন তবে তদন্ত করে দেখুন এবং প্রমাণ করুন ভারতবর্ষে এমন কোন রাজনৈতিক দল ভোটের প্রচার করছে নিজের বাপের টাকায় বা নিজেদের পকেটের টাকায়? তদন্ত হোক কত কালো টাকা নির্বাচনের আবডালে হাতবদল হয়? নির্বাচনে অর্থ নিবেশের কারণে কোন কোন সংস্থা সরকারের থেকে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে? পারবেন না কারণ কেঁচো খুঁজতে মাটি খুঁড়লে কেউটে গোখরো অ্যানাকোণ্ডা সব বেরিয়ে পড়বে। 

যে সমস্ত দলই শাসন ক্ষমতায় এসেছে রাজ্য তথা দেশে, সেই দলই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে ক্ষমতা দখলের স্বার্থে। কেউ প্রমাণ রেখেছে কেউ হয়তো প্রমাণ রাখেনি। কেউ প্রকাশ্যে করছে, কেউ বেনামে করেছে। একটিও রাজনৈতিক দল ধোয়া তুলসীপাতা নয়। আর সিবিআই, ইডি, সেবি, ইনকাম ট্যাক্স, সিআইডি ইত্যাদি সব খাঁচায় বন্দি তোতা ময়নার দল। যে দানা খাওয়াবে তার গুনগান গাইবে। যেমন বুলি শেখানো হবে, তেমনটাই আওড়াবে। ভীত, কাপুরুষ, দুর্বল গুটিগুলোকে তাক করে কিস্তিমাত করার প্রচেষ্টা তাই ভোটের আগে চলতেই থাকবে। শুধু ও শুধুমাত্র ভোটারদের বোকা বানানোর জন্য। এর পিছনে যদি কোন সদিচ্ছা থাকতো তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণের চেষ্টা সবার আগে করা হতো। পছন্দের ইণ্ডাস্ট্রিয়ালিস্টদের নিয়ম ভেঙে হাজার কোটি টাকার ঋণ মকুব করতে পারে আর ঐটুকু টাকা খরচ করার মতো ক্ষমতা নেই তা বিশ্বাস হয় না। কিন্তু করবে কেন? ওরা সাংসদ বিধায়ক কিনতে পয়সা দেয়। গরীব খেটে খাওয়া মানুষরা কিইবা দিতে পারবে? ভোট? সেতো ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় নাকি? ভাত দিয়েই তো অন্ধ সমর্থক পুষে রাখা সম্ভবপর হয়। তাই না?

আসলে আমাদের নিজেদের মানসিকতাকেই বদলাতে হবে। যে দেশে মানুষ দুবেলা পেট ভরে খেতে পায় না, যে দেশ প্রত্যেকটি মানুষকে পছন্দমত কর্মসংস্থান দিতে পারে না, যে দেশের মানুষরা ওষুধ ডাক্তার হাসপাতালের খরচা সামলাতে ঘটি বাটি থেকে জীবন বিক্রি করে দেয় সেখানে ইলেকশনের নামে এত টাকা উড়বে কেন? ভোট তো কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে হওয়া উচিৎ। কতদিন আমরা ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারী সেজে থাকবো? রিভোল্ট আমাদের করতেই হবে। নইলে রাষ্ট্র চালানোর দায়িত্বে থাকা রাজনৈতিক শাসক ও বিরোধী সব দলই আমাদের বোকা বানিয়েই চলবে। রাষ্ট্রীয় যন্ত্রণা দিতেই থাকবে। 

হ্যাঁ। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য--- মহাপ্রসাদের দায় শাসক দলের ঘাড়ে চাপে ঠিকই, কিন্তু প্রধান প্রধান বিরোধী দলগুলোও ভাগ পায়। যাতে সরকার পরিবর্তন হলে ফোঁসটুকু করেই ছেড়ে দেয়। বিষ ঢালতে না পারে।

(www.theoffnews.com - Indian politics black money corruption)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours