মৌসুমী প্রামাণিক, লেখিকা, কলকাতা:
'কদম কদম বাড়ায়ে যা
খুশীকে গীত গায়ে যা
ইয়ে জিন্দেগী হ্যায় কৌম কি
তু কৌম পে লুটায়ে যা..."
(এই গানটি শুনলেই শিহরণ জাগে শরীরে ও মনে। অনুপ্রাণিত হয় আমার লেখনী। সেই অনুপ্রেরণা যা তিনি জাগিয়ে চলেছেন আজও ১২৫ বছর পরেও আপামোর বাঙালির মনে। সেই মহান পুরুষ, বাঙালির আইকন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার আজকের প্রতিবেদন শুরু করছি।
এটি দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাননীয় নরেন্দ্র মোদীকে খোলা একটি খোলা চিঠি।)
ডিয়ার মোদীভাই,
বলিতেছি যে আজ নেতাজীর জন্ম জয়ন্তী পালন করিতে বাংলায় আপনার পদধূলি পড়িতেছে। জানি, যাহাই করিতেছেন, আসন্ন বিধানসভা ভোটের কথা মস্তকে রাখিয়াই করিতেছেন। তবে কদম কদম বাড়াইয়া বাংলায় আইলেন নেতাজীর জন্মবার্ষিকী উজ্জাপন করিতে। তাহা মন্দের ভালো। কালকা মেলের নামও নেতাজী এক্সপ্রেস হইবে। পূর্বে ছিল মেল আর এখন হইবে এক্সপ্রেস। এই সুযোগে টিকিটের মূল্য নিশ্চিতরূপে বাড়িবে। বোকা বাঙালির কিয়দংশ তবুও আবেগে ভাসিবে। এমনটা আপনারা ভাবিতেছেন। তবে সকল বাঙালির ভবি তো ভুলিবার নহে।
আমাদিগের নেতাজীর জন্য আপনার এতখানি দরদ উথলাইয়া উঠিতেছে অথচ তাঁহার অন্তর্ধান রহস্য অদ্যাব্ধি উদ্ধার হইলো না। জানিয়া শুনিয়া আপনিও চাপিয়া গেলেন। আপনার স্বঘোষিত শত্রুদিগের বেইজ্জতি হইতে দিলেন না। ইহাও বুঝি ভোটেরই অংক।
যাহা হোউক, সুভাষ বোস আমাদিগের হৃদয়ে রহিয়াছেন বহু বৎসর ধরিয়া। আর থাকাবেনও এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।
প্রতিবৎসরই বাঙালি মেলা, পদযাত্রা, রক্তদান উৎসব, সভা ইত্যাদি সহযোগে মহাসমারোহে তাঁহার জন্মদিন পালন করিয়া থাকেন। তাই উহাদের আবেগে সুড়সুড়ি দিয়া কোন লাভ নাই।
তদানিন্তন হিন্দু মহাসভা দ্বারা যে দেশ উদ্ধার হয় নাই ইহা শিক্ষিত বাঙালি ভালো করিয়াই জানেন। ইহা ব্যতীত আজিকার হিন্দু ধ্বজাধারী গেরুয়া শিবির যে দেশকে বিক্রয় করিতে কোন উপায় ছাড়িতেছেন না তাহাও দেখিতেছি ও বুঝিতেছি। দেশপ্রেম তো আজিকার রাজনৈতিক ব্যক্তিদিগের নিকট নাটকে রূপান্তরিত হইয়াছে। ইহা ব্যতীত একখানা প্রশ্ন মনে উদয় হইয়াছে, যদি অভয় দেন তো করি? আমাদিগের নেতাজীও বিদেশিনী মানে জার্মানী লেডিকে বিবাহ করিয়াছিলেন, তাহা হইলেও কি তিনি ভারতীয় হইলেন? না। মানে আপনারাই তো বলিয়াছিলেন যে....থাউক।
অদ্য আমাদিগের একখানি উৎসবের দিনই বটে। আমরা তাঁহাকে লইয়া গর্ব অনুভব করি; আজও নস্টালজিক হই। তদাপি আপনি কিভাবে না জানি নেতাজির গুজরাট যোগ উথ্থাপিত করিয়া উৎফুল্ল হইতেছেন। বিস্ময়ের অবকাশ ফাঁকা রাখিতেছেন না!
যাক হউক! আর একখানা অন্য কথাও ছিল। বলিতেছি যে উৎসব কিংবা ছুটির দিবস আইলেই বাঙালির জিহবা ও স্টমাক মটন মটন করিতে থাকে। না। আসলে খাদ্যাভ্যাসের কথা কহিতাম না। কিন্তু দেখিতেছি ইহা আপনাদিগের পরম্পরা হইয়া উঠিয়াছে। আপনার দূতগন আসিয়া বাঙালি খাবার উদরস্ত করিতেছেন ও প্রসন্ন হইতেছেন। এই বিষয়ে সর্বসময় গুজরাট যোগ খুঁজিলে তো চলিবে না। বাংলা দখল করিবার পূর্বে জানিতে ও মানিতে হইবে যে বাঙালি খাদ্যরসিক। ছুটির দিবস, উৎসব, পার্বন, পিকনিক,বিয়াঘর নিমন্ত্রণ ইত্যাদে সর্বপ্রকার অতিথি আপ্যায়নে কষা মাংস নইলে মটন কারী থাকিতেই হইবে। কারণ উহারা যতো রাজ্যের ঘাসফুস হজম করিতে পারেন না যে! হাজার হউক বাঙালি তো আর হাম্বা হাম্বা রবে ডাক পাড়েন না! বড়োই মিষ্টভাষী। বাঙালি অলস হইতে পারেন, ঝগড়ুটে হইতে পারেন, কাঁকড়াও হইতে পারেন তথাপি স্বর্ণখচিত দুগ্ধ প্রদানকারী পশু কিছুতেই নহে।
যাহা কহিতেছিলাম ঐ মটনের বিষয়ে, বর্তমানে ঐ খাদ্যবস্তুটির দাম ৮০০টাকা কেজিতে আসিয়া ঠেকিয়াছে। চাহিলেও তাই রসনার তৃপ্তি ঘটিতেছে না। সুদের হার কমাইয়া পকেটকে গড়ের মাঠে পরিণত করিয়া দিয়াছেন। তাই যদি খাসি ও পাঠা, রেওয়াজী মটনের প্রোডাকশান যথাযথ বাড়াইয়া চাহিদার তুলনায় যোগান বাড়াইয়া যদি মূল্য খানিক কমাইতে পারিতেন তাহা হইলে বাঙালি যারপরনাই উপকৃত হইতো। ইস্তেহারে বিষয়টি যুক্ত করিলে ভোটবাক্সে ইহার প্রভাব দেখিতে পাইলেও পাইতে পারেন।
আমরা রামছাগল পছন্দ করি না। বড়ো দুর্গন্ধ বাহির হয় ঐ আচার আচরণ; কথাবার্তায়। তাই দয়া করিয়া উহাদিগের উইথড্রো করিবার বন্দোবস্ত করিবেন।
পরিশেষে বলি, আপনি যে কলিকাতায় শুধুমাত্র রাজনীতি করিতেই আসিয়াছিলেন তাহা আপনার ভাষনে ও আপনার অনুরাগীদিগের 'জয় শ্রীরাম' স্লোগানে সুস্পষ্ট হইয়াছে। করুন। যথেচ্ছ রাজনীতি করুন। আপত্তি নাই। তবে আমাদিগের সুভাষকে দয়া করিয়া অব্যাহতি দিলে বাধিত হইবো।
নমস্কার জানিবেন।
ইতি
প্রতিবাদী এক বাঙালি লেখিকা (ভোটার বলিয়া গন্য নাও করিতে পারেন)
(www.theoffnews.com Netaji birthday Modi prime minister open letter)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours