সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ:

কমলা। আরে না না। কমলালেবু নয়। তবে? কমলা রঙ? একদমই নয়। তাহলে? আচ্ছা ধরুন না, এই কমলা শুধুমাাত্র কমলালেবুর মতো মিষ্টি নয়়, একইসঙ্গে রঙেরও যে সার্থক প্রতীক। অর্থাৎ মিষ্টি ও রঙের প্রকৃত মিশেল প্রতীক এই কমলা। এবার একটু খোলসা করে বললে হয় না? ঠিকই আছে। তবে শুনুন মিষ্টি ও রঙের এহেন কমলা উপাখ্যান।

কমলা একটি মেয়ের নাম। তার মুখের হাসি মানে শুক্লপক্ষের মিষ্টি চাঁদনি দক্ষিণা বাতাস। আর গুনে যেন সাতরঙা রামধনুর রোদেলা আভাস। 

অষ্টাদশী যুবতী কমলা মিস্ত্রি। সুন্দরবন লাগোয়া যোগেশগঞ্জে তার আদি বসবাস। বর্তমানে কলকাতার একটি প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'ভয়েজ অফ ওয়ার্ল্ড' হল বর্তমান জগৎ। দেখতে দেখতে প্রায় এক দশক সময় কাল অতিক্রান্ত ভয়েজ অফ ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে তার এই আত্মিক সম্পর্ক। এই ঠিকানার সহচর্যে কমলা আজ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উর্ত্তীনা ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। মাথার চুলে বেশ গোছ। লম্বায় কোমর ছুঁই ছুঁই। কি মনে হচ্ছে? নিশ্চয়ই চুড়ান্ত সৌজন্যতা বজায় রেখে রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতার লাইনটা আবৃত্তি করবেন মনে মনে। "আমি অন্তঃপুরের মেয়ে, চিনবে না আমাকে।" বড্ড আটপৌরে মনে হয় তাই না? লাজুক আভাসে হয়তো বলবেন, এরকম কমলা মেয়ে তো রূপসী বাংলার প্রতিটি মহল্লার পরিচিত নাম। এ নিয়ে কি এমন লেখার উপপাদ্য রয়ে গেল আবার?

দাঁড়াও পথিকবর দাঁড়াও। তিষ্ঠ ক্ষণকাল। এই কমলা শারীরিক গঠনে অনেকাংশে প্রতিবন্ধী ঠিকই। কিন্তু মনে যে এক হার না মানা প্রকাশনার একটা গোটা অভিধান। একেতে জন্মাবধি শারীরিক আংশিক অক্ষমতা। তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়া স্বরূপ বছর তিন আগে বাঁ পা ভেঙ্গে যাওয়া। তাই স্বাভাবিক হাঁটাচলায় আপাতত চিরযতি জীবন পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে গেল। নিয়তির চোখ রাঙানিতে। কোথাও ইতিউতি যাওয়া মানে সহবাসী বান্ধবীদের কাঁধে চেপে বেতাল পঞ্চবিংশতির গল্প মনে পড়া। তবু ওই যে একটা গান আছে না? হার মানা হার পরাবো তোমার গলে'র মতো রঙ তুলির নানা ফুলমালা নিয়ে বসে পড়া। যখন তখন। কি অবলীলায় না আঁকা ছবিগুলো জীবনরূপী হয়ে ওঠে তার তুলির আঁকিবুঁকি আঁচরে। কখনও আবার তার তুলি ছোঁয়ায় মাটির তৈরি অতি ম্যারমেরে প্রদীপ হয়ে ওঠে রঙ নক্সার ফিউশন টোন।

আবার যখন গাছের নিচে একা একা বসে থাকা একক কমলা। সবুজ গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে বাবুই পাখির উড়ান পরখ করা। আনমনে। উদাস নয়নে। তখন? ঠিক তখনই বুলবুলি পাখির মতো কলকলিয়ে তার সুরেলা কন্ঠে সার্থক হয়ে ওঠে কত গীতালীর রকমারি সুর। কখন যে 'কি গাব আমি কি শুনাব আজি আনন্দধামে' শুনে আমরা সকলে ধন্য ধন্য মগ্ন পুরবাসী হই কে জানে। হ্যাঁ এই কমলাই যখন শীত রোদেলা পুকুর পাড়ে বসে থাকে পুকুর পারে। হাতে থাকে ছিপ আর টোপ। এক্কেবারে পটু হাতে টপাটপ মাছ ধরা। ফিসিং যে তার অন্তর্মুখী হবি। বা মাছরাঙা নেশাও।

জানি ও বুঝি এরকম বহুবিধ গুন অনেকেরই থাকে। তাই বলে একটা আস্ত প্রতিবেদন লিখতে হবে? আলবাত হবে। তা কেমন কেমন শুনি। এই মিষ্টি কমলার জীবনের এক অচেনা রঙ যে আমাদের অনেকেরই অজানা। যে প্রতিবন্ধী কমলা মাটির উপরে হাঁটতে বর্তমানে বাস্তবিকই অক্ষম, সেই যুবতী মাঝ পুকুরে জলের মধ্যে অনায়াস ছন্দে সঠিক পদচালনা করতে অনেকের থেকে বেশি সক্ষম। সেকি? হ্যাঁ এটাই বাস্তব কমলার জীবন ধারাপাতে। সে কিন্তু জলপোকার মত জলে হাঁটতে পারে অদ্ভুত ভাবে। আমরা সাধারণত মাটিতে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারলেও জলেতে স্থবির অনেকেই। কিন্তু কমলা যে উল্টো স্রোতের অবাক করা দৃষ্টান্ত। এমন নজিরবিহীন জীবন নক্সিকাঁথার উদাহরণে কমলাকে যে সমীহের কুর্ণিশ জানাতেই হয় সসম্মানেই।

মিষ্টভাষী কমলার নিজের কথায় জীবনের অর্থ হল, বেঁচে আমাদের থাকতেই হবে। তাই বাঁচতে গেলে জীবনমুখী তো হতেই হয় আবশ্যিকভাবে। ভয়েজ অফ ওয়ার্ল্ড আমার জীবনের একটা অঙ্গ। আমি মাথা উঁচু করেই বাঁচতে চাই। জলে আমি হাঁটতে পারি। এই পারাটুকুই হল আমার আত্মবিশ্বাসের স্বভিমান।

ভয়েজ অফ ওয়ার্ল্ডের পক্ষে গার্গী গুপ্ত ও শৈবাল গুহ বলেন, "কমলাকে আমরা বহু বছর ধরে চিনি ও জানি। প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় তুড়ি মেরে জীবনযুদ্ধে দৃষ্টান্তের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলার প্রকৃত নাম কমলা।"

তাই জীবন ধারাপাতে কমলা আজ একটা মাত্র প্রান্তিক প্রতীক নয়, সে যে প্রতিবন্ধকতা জয়ের একমুঠো পুবালী রোদ্দুর। 

(www.theoffnews.com - Voice Of World Kamala Mistri)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours