সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

আজকের রাজ্যে রাজনৈতিক আঙ্গিকে সবচেয়ে হেভিওয়েট ব্যক্তিত্ব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন আলোচিত ও সমালোচিত নারী স্বাধীনত্তোর এই বাংলা এযাবৎ দ্বিতীয়টি দেখেনি। বিরোধী নেত্রী হিসেবে আপনি জায়গা করে নিয়েছিলেন রাজ্যবাসীর হৃদয়ের অন্ধ মনিকোঠায়। আপনারই ডাকে পরিবর্তনে সামিল হয়েছিলেন বঙ্গের আবালবৃদ্ধবণিতা। আজও স্পষ্ট মনে আছে। রাজ্য প্রশাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে আপনি হাঁটছে। রাইটার্স বিল্ডিং নামক লাল বাড়িটার দিকে। আর কিলবিল করছে শুধু মানুষ আর শুধু মানুষ। সে জনসমুদ্রের ঢেউ ছিল না শুধু। মানুষের যেন সুনামীর পদছন্দ সেদিন পা মিলিয়ে ছিল তাঁদের জননেত্রীর জন্য। আপনার জনপ্রিয়তাকে তখন সৃষ্টিকর্তারও উপায় ছিল না উপেক্ষা করার।

সেদিনের দশ বছর ক্যালেন্ডারের নিয়মে অবশেষে প্রায় এসেই গেল। তাই না?

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীজী! মেরুদন্ডহীন মিডিয়ার কথা বাদ দিন। ওরা কারও হয় না চিরস্থায়ী ভাবে। ওরা আজ আপনার ছড়ানো উচ্ছিষ্ট বিজ্ঞাপন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে। কাল দেখবেন অন্যের উঠোনে ওরা কীর্তন গাইছে। আবার আপনার অধীনস্থ গোমস্তারূপী মন্ত্রী সান্ত্রীর দলের কেউ কেউ তো এমন তৈলমর্দনে ব্যস্ত যে সাধারণ মানুষ আবডালে তা শুনে কেউ কেউ টিপ্পনি কাটেন। আর কেন জানি না এতেই আপনি বেজায় তুষ্ট। এইতো সেদিন একজন আপনারই অনুগত কয়েক ধাপ এগিয়ে বললেন, সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজী সুভাষচন্দ্র আর প্রশাসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হল বাংলার দৃষ্টান্ত। আচ্ছা শুনেছি আপনি তো রুচিবান। তাহলে এইসব অতি তেলসিক্ত কথা শুনে আপনার এতটুকু বিব্রত বোধ হয় না? রবীন্দ্রনাথ নেতাজী সঙ্গে আপনাকে এক সারিতে বসাছে আপনারই অনুগতরা। এত ধৃষ্টতা এরা পায় কি করে? আর এসব শোনার পর আপনিই বা চুপ থাকেন কি করে? বাঙালীর অন্তরাত্মায় রয়ে গিয়েছে রবীন্দ্র নেতাজী। এই বং স্বভিমানটা কি আপনি এত তারাতারি ভুলে গেলেন মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসে? এটা কিন্তু আমাদের মোটেও প্রত্যাশিত ছিল না আপনার কাছে। 

রাজনীতির অভিজ্ঞতায় আপনি তো বটবৃক্ষ। এটা একবাক্যে আমরা মানি। তাই অনুরোধ করছি, একটিবার চোখ খুলুন স্যোসাল সাইটে। কান পাতুন পাড়ার চায়ের ঠেক থেকে রকের রাফ টাফ আড্ডার অভিমুখে। কি কিছু দেখতে বা শুনতে পাচ্ছেন? দিদি, পিসি, পিমি, ম্যাডাম, বেগম-এরকম কত বক্রোক্তি অনুধাবন করতে পারছেন, যা কিন্তু আপনার বিরুদ্ধেই পরোক্ষে তোলা হচ্ছে? স্যোসাল মিডিয়াতে তো ঝড় উঠেছে। ঝড়ের শন শন আওয়াজে উচ্চারিত হচ্ছে আপনি নাকি রাজ্যের সবচেয়ে সমালোচিত মুখ্যমন্ত্রী। আবার চায়ের ঠেকে ভয় ভয়ে ফিসফাস, আপনি নাকি উদ্ধত, মিথ্যাচারী, বাঙালি-অবাঙালি বিভেদ নাকি আপনার আমলেই এই রাজ্যে সৃষ্টি। এমনও কেউ কেউ হুয়িসপারিং করেন, আপনি মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে 'শা^লা' বলতেও কুন্ঠা বোধ করেন না। কত নাকি ভুলভাল বকেন। অথচ আজ আপনিই নাকি রবীন্দ্রনাথ সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে সম তুলনীয়া। তা হয়তো হতেই পারেন। কারণ রাজ্যের ক্ষমতায়নের কেন্দ্রে তো আপনিই আসীন। আপনাকে তৈলসিক্ত না করলে তাঁরা হয়তো আপনার কোঠারি থেকে বাদ পড়তেই পারেন। বা পুলিশি কেস খেয়ে যেতে পারেন।

ছাড়ুন এসব কুটকাচালির আলোচনা সমালোচনা। রাজনীতিতে এসব চলেই কম বেশি। আজ আপনার পরম শুভাকাঙ্ক্ষী ও একজন সাংবাদিক হিসেবে একটা দেওয়াল লিখনের কথা মনে করাই। বুঝতে পারছি আপনি সব জেনেও সব মানতে পারছেন না। কিন্তু বাস্তব অনুধাবন করাটাই কিন্তু বিচক্ষণতা। এটা আমার আপনার ও সবার মানা উচিৎ। ঠিক কিনা?

তাহলে আলোচনার ফোকাস লাইটটা ঘোরাই আপনার পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর মুখে। উনি তো আবার সাম্প্রতিক কালের লেটেস্ট মীরজাফর ও পেট্রোল পাম্পওয়ালা। আবার আলু বিক্রেতাও বটে। তা বেশ বেশ। আপনার কুশীলবের এই বিশ্লেষণগুলো তো শুনতে কিন্তু দারুণ দারুণ লাগে যাই বলুন। হিহিহি। হোহোহো। কি অদ্ভুত তাই না। দলের অনুগত হলে এই পেট্রোল পাম্পওয়ালাদের কেউ কিন্তু কখনও মীরজাফর বলে না। অবাক কালচার কিন্তু আপনার দলের এই অভিনব অনুপ্রেরণায়।

ঘড়িতে আটচল্লিশ ঘন্টা এখনও অতিক্রম করেনি। আপনি তখন বাঁকুড়াতে অবস্থান করছেন। আপনারই দলের উল্লেখযোগ্য নেতা। আপনারই মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ওই যে তরুণ তুর্কি শুভেন্দু অধিকারী। এই বাঁকুড়ার উপর দিয়ে পুরুলিয়া থেকে বাঁকুড়া হয়ে দুর্গাপুর এসেছিলেন। কারণ কিন্তু আহামরি কিছু না। হাহাহা। পুজো উদ্বোধন। কি পলকা কারণ বলুন তো। অথচ উনি যে রাস্তা দিয়ে গেছেন মনে করলে মাত্র চল্লিশ মিনিটে অনায়াসে আপনার কাছে পৌঁছে যেতেই পারতেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার থেকে তাঁর কাছে পুজো উদ্বোধন কত বড় হল তাই না। ইচ্ছে থাকলে আপনার কাছে গিয়ে না হয় ক্ষাণিক পড়ে অনায়াসে পুজো উদ্বোধনে যেতেই পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বা ইচ্ছে করেই দেখা করলেন না। জিইয়ে রাখলেন তৃণমূল দূরত্ব। স্পষ্ট কথায় বলতে হয়, "দেখ আমি শুভেন্দু অধিকারী। এত কাছে এসেও আমি তোমার সঙ্গে দেখা করলাম না সৌজন্যতা বা প্রোটোকলকে পাত্তা না দিয়ে। আমি থোরাই তোমায় তোয়াক্কা করি। আই ডোন্ট কেয়ার ইউ।" মুখ্যমন্ত্রীজী সেদিনের সান্ধ্য অন্ধকারে শুভেন্দুর এহেন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কি আপনি দেখতে পেয়েছেন কি? শুভেন্দুর এই আচরণের দেওয়াল লিখন কি আপনি পড়তে পেড়েছেন? তবুও আটচল্লিশ ঘন্টার পার হওয়া প্রান্তে দাঁড়িয়ে আপনি আজ বড্ড অচেনা রকমের স্থবির। কি অসহায় আজ আপনি। সামনে নির্বাচন। ভোট ব্যাংকের কথা চিন্তা করে কত কিই না আজ আপনি হজম করতে বাধ্য হচ্ছেন। শুভেন্দুর এই অবজ্ঞার পরেও আপনি প্রবীণ সাংসদকে ফিলার হিসেবে পাঠাচ্ছেন তাঁরই কাছে। ম্যানেজের চেষ্টায়। ম্যানেজ হবেন কি হবেন না তা অন্য বিষয়। 

হায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে ভদ্রমহিলা মহাকরণে একদিন গিয়েছেন মানুষ সুনামীর অনন্ত ঢেউকে সাক্ষী করে। আজ তাকেই কিনা এক মন্ত্রীর ডোন্ট কেয়ার অবজ্ঞায় কি নিঝুম অন্ধকার কাটাতে হল কংসাবতীর তিরের সার্কিট হাউসে। সান্তনার স্রেফ সঙ্গ ছিলেন "আলু বিক্রেতা"র কুবক্তা। মানুষের দরবারে আপনার ডাকে যেখানে একদিন সাধারণ মানুষ ছুটে যেত ভয় পেয়ে নয়, অন্তরের মিলনে, আর আজ আপনি নিজেই উপেক্ষিত আপনার মন্ত্রীর বুড়ো আঙুল দেখানোর আচরণে। মীরজাফর তকমা দিলেই সমস্যা মিটবে না। উল্টে রাজ্যবাসী হাসাহাসি করবে। দেওয়াল থেকে একটার পর একটা ইঁট কিন্তু খসে যাবে ও যাচ্ছে। বাস্তিল দুর্গের কথাটা একটু স্মরণে আনবেন দয়া করে অন্তত এই সময়ে। শ্রদ্ধেয়া দিদি আমার আবার বলছি, সময় থাকতে দেওয়াল লিখনটা পড়ে বাস্তবটা অনুধাবন করুন প্লিজ। নচেৎ একদিন শেষ সম্বল সম বসন্তের কোকিল কুবক্তাও পাশে থাকবে না। সেই সময়টা মেনে নিতে পারবেন তো?

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours