সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
বৃহস্পতিবার কিন্তু রাজ্য রাজনীতির গরমাগরম ময়দানে কিছু প্রশ্ন উস্কে দেওয়া হল তৃণমূলের তরফে। বিতর্কের সৌজন্যে এলেবেলে কিন্তু কেউ নন। শ্রীরামপুরের টিএমসি সাংসদ তথা দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুডবুকে থাকা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতেও ঘাসফুল বিগ্রেডের অন্যতম পরিচিত মুখ। আড়ে বহরে বেশ ওজনদার। এহেন কল্যাণ সাহাব বলেছেন কারও নাম না নিয়ে, "চলে যা বিজেপিতে চলে যা। যাবি কংগ্রেসে যাবি সিপিএমে চলে যা।" এসব কথা প্রত্যাশিত ভাবেই রাজনৈতিক। তবে তুই করে বলাটা কতটা সৌজন্যের তা নিয়ে চায়ের ঠেকে আলোচনা চলতেই পারে। আরে ছোড় দো দোস্ত এসব ঠুনকো সন্বোধন। কল্যাণজীকে যারা চেনেন তারা এসব নিয়ে নিপাতনে সিদ্ধেই উদাসীন থাকবেন। বক্তব্যের এখানেই শেষ নয়। মন্তব্যের তোড়ে তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে গাছের তলায় বড় হয়েছিস। এত মন্ত্রীত্ব পেয়েছি। চারখানা চেয়ারে আছিস। কত পেট্রোল পাম্প করেছিস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে মিউনিসিপ্যালিটিতে আলু বিক্রি করতিস রে। আলু বিক্রি করতিস।"
এই মন্তব্যের পর ২৪ ঘন্টা কেটে গেলেও কালিঘাট লেন থেকে এই বচনকে কোনরকম খন্ডন করা হয়নি। বরং স্পিকটি নট্ দিদি থেকে তথাকথিত জো হুজুরেরা। তাই এই মন্তব্য দলের অনুমোদনের বাইরে তা ভাবার মতো কোনও শিষ্ঠাচারগত পরিস্থিতি এখনও দেখা যাচ্ছে না।
সুতরাং এই অসৌজন্যকর মন্তব্য, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন একটি সুতোর নানা পরিকল্পিত গ্রন্থি বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
কল্যাণজীর শালীনতার দৃষ্টান্ত মানুষ আগেও দেখেছেন। কখনও তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বলেছেন ইঁদুরের বাচ্চা আবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে সম্মান জানিয়ে সম্ভাষণ করেছেন কালনাগিনী বলে। এহেন তৃণমূল সাংসদ যে এমন কথা বলার যোগ্যতম ব্যক্তি এতে কি আর সন্দেহ থাকতে পারে।
বাংলার সাম্প্রতিক রাজনীতির নাগরদোলায় কিন্তু এই মন্তব্য বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে। উনি কারও নাম না করে বললেও বাংলার মানুষ কল্যাণজীর মতো আশালীন ধূর্ত নয় এটা ঠিক। কিন্তু বঙ্গের আম জনতা মহা মূর্খ এটা ভাবাটা খুব একটা বিচক্ষণের কাজ হবে না। আট থেকে আশি সিংহ ভাগ বাংলার আবালবৃদ্ধবনিতা আমজনতা তাই বুঝে গেছেন কল্যাণবাবুর নিশানার তীর কিন্তু ছোড়া হয়েছে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে লক্ষ্য করেই।
শুভেন্দুবাবু তৃণমূলের সবচেয়ে জনপ্রিয় তরুণ তুর্কি এটা এক বাক্যে আজও সবাই মানে। নাতো তাকে শেষমেশ ম্যানেজ করতে ভাড়াটে ভোটগুরু প্রশান্ত কুমার দে ছুট দেবেন কেন পরিবহণ মন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশ্যে। আসলে বিগত পাঁচ ছয় মাস যাবৎ রাজনৈতিক চোরা জল যে বইছে উল্টো স্রোতে। নন্দীগ্রামে তারই সুনামীর প্রবল ধাক্কায় খানিকটা এলোমেলো হয়ে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাসবাগান। শুভেন্দুবাবু সেদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দেখা হবে ভোটের ময়দানে। একেবারে ওপেন চ্যালেঞ্জ। তবে এই তরুণ তুর্কি রাজনৈতিক তর্জমায় ঘুরিয়ে তৃণমূল বিরোধিতার কথা বললেও পরিভাষায় তা শালিনতার সীমারেখা যে অতিক্রম করেনি এটা নিশ্চিত।
কিন্তু পাল্টা আক্রমণে অংশ নিয়ে তৃণমূল আইনজীবী একি বিস্ফোরক কথা বলে ফেললেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে পুরসভায় আলু বিক্রি করতিস মানে? শুভেন্দুবাবু কি আলু চক্রের ফঁড়ে নাকি আলু দালাল? আর পুরসভাই বা বিনা টেন্ডারে তার কাছ থেকে আলু কিনবে কেন? আপনি এত নিশ্চিত হলেন কি করে? কল্যাণবাবু আপনি কি খুব ভেবেচিন্তে এসব বলেছেন তো? নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কত কাছের প্রিয়পাত্র তা দেখানোর জন্য অতি বিপ্লবী ভাষণ দেগেছেন? কোনটা? আচ্ছা যদি ধরেই নেওয়া যায় আপনি সত্য ভাষণ দিয়েছেন। তাহলে এহেন ফঁড়েকে কোন যুক্তিতে রাজ্যের চারটি মন্ত্রকের মন্ত্রী করা হয়েছে এমন প্রশ্ন কি আপনি কখনও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে করেছেন? এ কথা আজ কেন বলছেন প্রকাশ্যে এবং কার অনুমোদনে? কেন নন্দীগ্রামে শুভেন্দুবাবুর সভার আগে এসব কিছু আপনি বলেননি? আপনার সৎ সত্ত্বা এখন হঠাৎ জাগ্রত হলো কোন উদ্দেশ্যে রাজ্যবাসী তা কিন্তু জানতে চায়।
দাঁড়ান কল্যাণজী একটু অনুগ্রহ করে। প্রশ্নপর্ব এখনও শেষ হয়নি। যে মানুষ গাছের তলায় বড় হয় সেই কিনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ পেয়েছে আর তার উদ্দেশ্য আপনি বলছেন কিনা, কত পেট্রোল পাম্প করেছিস। অর্থাৎ? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে একাধিক পেট্রোল পাম্পের দখলদার স্বয়ং রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী? আচ্ছা, মুখ্যমন্ত্রী এইসব গুরুতর অভিযোগ সম্পর্কে কি আদৌ অভিহিত? আপনি কি কখনও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে এরকম স্বজনপোষণের কথা? যদি না বলে থাকেন তবে রাজ্যের হিতের কথা চিন্তা করে আগে কেন এসব প্রকাশ করেননি? আর যদি বলেও থাকেন তবে এই অভিযোগের পরে কেন মুখ্যমন্ত্রী তাকে মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে দিলেন না? আপনার জাগ্রত বিবেক কি এতদিন শীতঘুম দিচ্ছিল? নাকি সুবিধাবাদী রাজনীতির আপনিও এক সক্রিয় হস্তি? যখন কেউ আপনার দলে অনুপ্রাণিত থাকে ততক্ষণ তিনি অভিযোগে পা থেকে মাথা ডুবিয়ে রাখলেও আপনাদের নীতিতে 'দোস্তি হাম নেহি তোরেঙ্গে'। আর যেই উল্টো স্রোতে কেউ সাঁতরাবে তখনই আপনারা কর্দয ব্যক্তি আক্রমণ করতেও দ্বিধা বোধ করেন। আপনারা না শিক্ষিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি? বাংলার রাজনীতিকে আর কত হেয় করবেন? কল্যাণ সাহাব একটা স্পষ্ট দেওয়াল লিখন শুনে নিন। ক্ষমতা বড্ড পিচ্ছিল। ক্ষমতা কারও ব্যক্তিগত সম্পদ হয়নি চিরদিনের জন্য। এখনও সময় আছে, শালীনতার চৌখাটে অবস্থান করে এবার অন্তত সচেতন হোন। নচেৎ এমন দিন না আসে, আপনি কেমন আছেন তা জিজ্ঞেস করার জন্য একটি মানুষকেও কাছে পাবেন না। একবার পিছনের দিকে তাকান। ৩৪ বছরের দোর্দন্ড প্রতাপ কেষ্ট বিষ্টুদের বর্তমান করুণ অবস্থাটা একবার দেখুন দয়া করে। আর নিজের ভবিষ্যতের কথা একটু ভাবুন। দীপাবলির শুভেচ্ছা রইল।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours