রমা চক্রবর্তী, শিক্ষিকা, আবৃত্তিকার ও ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

কী ভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না-- জলের জলজ্যান্ত অপচয় নাকি কবি সব্যসাচী দেব'এর "চন্ডালিকা"র মত বলবো যে জল চাই, জল দাও---কোনটা?

বিগত 2017 সালে 1 নং গেটের পর আবার 30/10/2020 তারিখে দুর্গাপুর ব্যারেজের 31 নং লকগেট ভেঙ্গে গেল। শুরু হয়ে গেল জলের জন্য চরমতম নারকীয় হাহাকার। আজ 7 দিন হয়ে গেল অর্থাৎ শুক্রবার বিকেলেও সমগ্র দুর্গাপুর এলাকা জলশূন্য। DMC র জল সরবরাহ বন্ধ এবং জলের অভাবে DPL এর বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় বন্ধের মুখে। সংবাদ মাধ্যম, টেলিভিশনের খবর অনুযায়ী দ্রুততার সঙ্গে মেরামতির কাজ শেষ। এবার পানীয় জল মেলার অপেক্ষা। বিভিন্ন প্রতিকূলতার জন্য কাজ শুরু হতে দেরী হয়েছিল, আজকের খবর অনুসারে এদিন সন্ধ্যার পর থেকে যে কোনও মূহুর্ত থেকে জল পেতে পারি হয়তো।

এতো গেলো দুর্যোগ এবং দুর্ভোগ এর কথা। গত শুক্রবার রাত্রে এই ঘটনা ঘটার পর শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদে দেখলাম ও শুনলাম দুর্গাপুর পৌরনিগমের মেয়র, জেলাশাসক, সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা ঐ স্থানে উপস্থিত হয়েছেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এরপর মেয়র সংবাদ মাধ্যমকে জানালেন সুখের আশ্বাস---"জলের সরবরাহের কোনো অসুবিধা হবে না, দুর্গাপুর বাসীর সময়মতো জল পাবেন"। সময়মতো? হাহাহা। হাসি পাচ্ছে এখন। 

আসলে রবিবার থেকে দেখলাম পুরোপুরি উল্টানো চিত্র। যাদের নিজস্ব পাতকুয়া, টিউবয়েল এবং বোরিং ব্যবস্থা আছে তাদের কথা আলাদা। তাদের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো যারা সরকারী আবাসনে বিশেষত বন্ধ কারখানার আবাসনে বসবাস করে। যাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ADDA এর কাছে গচ্ছিত এবং DMC সেখানে জল সরবরাহ করে।

লকগেট ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনার পর প্রথমদিকে কোনো পৌরপিতা বা পৌরমাতাকে দেখলাম না একটু উদ্যোগ নিতে সবাই যাতে জল পেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে। গুটিকয়েকজন করেছেন তাও সেটা নিজের সুবিধা মতো। দিন যতো গড়িয়েছে জল সংকট ততই বেড়েছে। মানুষ টাকার বিনিময়ে জল কিনতে বাধ্য হয়েছে বেশী দাম দিয়ে সুযোগ সন্ধানী কালোয়ারদের থেকে। ফলে শেষের দিকে যখন DMC থেকে জলের গাড়ী এসেছে তখন মানুষের জল নিতে যাওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। 

সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলাম প্রশাসনিক তরফ থেকে কয়েক লক্ষ জলের পাউচ দেওয়া হচ্ছে। খুব দুঃখের বিষয় তাকে তো চোখে দেখতেই পেলাম না হাতে পাওয়া তো অনেক দূরের কথা। এ যেন ফস্কা গেড়োর ডঙ্কা নিনাদ।

এ তো গেল বর্তমান পরিস্থিতি। এমনিতেই আমরা যারা বন্ধ হওয়া কারখানার আবাসনে বসবাস করি তাদের জলের অনেক সমস্যা। প্রতিদিন যে জল সরবরাহ করা হয় তাতে উপর তলার বাসিন্দারা 10 মিনিট জল পায়। কারণ যে গতিতে জল আসে তাতে তিনতলার উপরের জলের ট্যাঙ্কে জল ওঠে না কিন্তু নীচের তলার বাসিন্দারা এত সময় ধরে জল পায় যে তারা বাগানের চাষ, মাঠের চাষ, গরু-মোষের খাটাল সবকিছু করেও তাদের জন্য যেন জল শেষ হতেই চায় না। 

কিন্তু এ বিষয়ে পৌরপিতা বা পৌরমাতা এবং ওয়ার্ড কমিটির মেম্বারদের গা জোয়ারি ভাব (কারণ তারা সবাই নীচের তলার বাসিন্দা ফলে ওনাদের সমস্যা নেই), তারা সবকিছু জেনেও চুপচাপ। উপর তলার বাসিন্দারা অনেকেই নিজের খরচে নীচের বাগানে জলাধার বা ট্যাঙ্ক বসাতে চাইলে তাতেও বাধাপ্রাপ্ত হয় ব্যাক্তিস্বার্থে। কারণ নীচের তলার বাসিন্দারা মনে করেন আবাসনের সামনের জায়গাটা তাদের অনেকটা পৈতৃক সম্পত্তি। আমি যেটুকু জানি সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সরকারি খাতায়  Quarter এর Build up এবং Carpet এলাকাটাই শুধু আমার নিজস্ব, সামনের জায়গাটা সবাই ব্যবহার করতে পারবে। 

কিন্তু ADDA'এর নজর এড়িয়ে অনেকেই পাকাপোক্ত Constructon করে নিয়েছে সামনে, পিছনে (যা ADDA এর নিয়ম মতো বেআইনি), পাশে Constuction করে বাগান ঘিরে নিয়েছে নিজের খুশি মতো। ফলে উপর তলার বাসিন্দারা জলাধার বা ট্যাঙ্ক বসাতে পারে না (যদিও কেউ কেউ করতে পেরেছে)। এ নিয়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে জোড় যার মুলুক তার। যার অর্থবল, লোকবল (রাজনৈতিক শক্তি) থাকবে সেই স্বেচাছাচারী সুখে বসবাস করবে তাছাড়া অন্যদের মুখ বুজে থাকতে হবে। এ বিষয়ে আমি নিজেই একাধিক অভিজ্ঞতার সাক্ষী।

তাই এটুকু বলতেই পারি, পৌরপিতা বা পৌরমাতার কাছে প্রশ্ন করার পরিবেশ নেই। আমি পৌরপ্রধান বা মেয়র এবং মেয়র পরিষদের কাছে প্রশ্ন করছি যেখানে কলোনী, বস্তি এলাকায় জলের জলজ্যান্ত অপচয় ঘটে সেখান আমাদেরকে টাকার বিনিময়ে জল কিনতে হয় বিশেষত বন্ধ কারখানার আবাসনগুলিতে উপর তলার বাসিন্দাদের। কেন বলতে পারেন? তাদের জন্য কি একটা কিছু ব্যবস্থা করা যায় না? আমরা কি Tax pay করি না? নাকি আমাদেরকে মানুষ বলে মনে করা হয় না, কোনটা?

আপনাদের কাছে আবেদন করছি, আমাদেরকেও জলাধার বা ট্যাঙ্ক বসানোর মতো একটা সম্মানজনক ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। কি পৌর ঈশ্বরেরা, আমার আবেদনটা কি কানে গেল? আমরা কি মানসিক প্রসাদ একটুও পেতে পারি না?

(ছবি সৌজন্যে: প্রতিবেদক) 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours