শামা আরজু, লেখক, বাংলাদেশ:

বাবার সংসারে  সচ্ছলতা মনে আসে খুব কম, যতদূর মনে পড়ে অভাব আর অভাব কেবল ! মা ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষকের মেয়ে। বাবা পুরোটাই নাস্তিক। বাবার কাছের মানুষেরা জানতেন এটা। সামাজিকতার ভয়ে প্রকাশ্যে বলতেন না। তার প্রভাব পড়েছিলো বোধ করি। অন্য কোনো শখ ছিল না মায়ের। কেবল বাংলা সিনেমা দেখা ছাড়া । অবশ্য ইংরেজি সিনেমাও দেখতেন। তখন মর্নিং শো চলতো রৌশনবাণী সিনেমা হলে। সেখানে বিদেশি ছবিও দেখাতো। এখন রৌশনবাণী সিনেমা হল দাঁড়িয়ে থাকে, একা। ঐ আঙ্গিনায় এখন আর মানুষ নেই।কোনো কাজে যদি আমাদের মাইজদী যাওয়া লাগতো সিনেমা হলের দিকে তাকিয়ে একবার সিনেমার নামটা দেখতে পেলেও কি যে আনন্দ লাগতো! মা ইংরেজি ছবির মানে বুঝতেন কিনা, কখনো জানা হলো না।

মাকে নিয়ে কতো প্রশ্ন আজকাল কাজ করে, যা জীবিতো থাকতে কখোনো মনে আসেনি। ভাবতেও পারিনি। বাবার প্রভাবই পড়েছিলো আমার ওপর অনেক বেশি । যাই হোক, আজ মায়ের কথাই লিখতে বসেছি। বাংলা সিনেমা দেখতে পছন্দ করতেন মা। সিনেমার টাকা যোগাড় করতে না পারলে বাবার কেনা ভাতের চাল বিক্রি করে মা সিনেমা দেখতে যেতেন। বেশিরভাগ সময় আমিই মায়ের সঙ্গে থাকতাম। হয়তো বড় সন্তান ছিলাম  বলেই আমি ছিলাম প্রথম  সঙ্গী মায়ের বিবাহিত জীবনে। সিনেমায় যখন মারপিট মারপিট শুরু হতো আমি খুব ভয় পেতাম। অথচ মানুষ তখন আনন্দে উত্তেজিত হয়ে শিস দিতো,সিটের সাথে দাবড়াদাবড়ি করতো। মাকে বলতাম - মা, মারপিট শুরু  হলে আমাকে বলবেন। আমি চোখ বন্ধ করে রাখবো। যথারীতি তাই করতাম। আজকাল চাইলেও যা পারি না। আমাকে কেউ বলে দেয়ার মতো নেই, এরপর বীভৎস দৃশ্য আসবে।  বাংলা সিনেমা দেখিনা অনেক কাল কিন্তু টেলিভিশন, খবর, ফেসবুক সবকিছু  জুড়েই  মারপিট ! বিভৎসতা ! আমি একা ঘরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকি। বের হওয়ার শক্তি পাইনা না।না শরীরে, না মনে ।  কারো সাথে মিশতে পারি না। সবাইকে অবিশ্বাস করি অথবা সবাইকে  অসহায় মনে হয়। মাগো আমার সেই শৈশবে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে খুব। আমার চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না আর। মা কেন মরে গেলো আমার! 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours