সুব্রত দাম, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

অরোরা মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা বা অরোরা অস্ট্রালিস (অরোরা উষা) হলো আকাশে একধরনের প্রাকৃতিক আলোর প্রদর্শনী। যা প্রধানত উঁচু অক্ষাংশের এলাকাগুলোতেই দেখা মেলে। এই অরোরা দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। তবে অরোরাকে নিয়ে প্রাচীনকালে অনেক উপকথা চালু ছিল। যেমন নর্জ উপকথা অনুসারে অরোরা হলো ঈশ্বরের সৃষ্টি সেতু। আবার কিছু কিছু  কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ আছেন যারা মনে করেন তাদের পূর্বপুরুষেরা আকাশে নাচানাচি করে তাই নাকি আকাশের রঙ বদলে যায়।

আমরা সকলে জানি যে সূর্য আমাদের থেকে প্রায় ৯৩ মিলিয়ন মাইল বা প্রায় ১৫০ মিলিয়ন কি.মি. দূরে অবস্থিত। কিন্তু তার প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। সৌরমণ্ডলে সৌরঝড়ের সময় সূর্যের চার্জিত কণা (প্লাজমা) মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই চার্জিত কণাগুলো যখন পৃথিবীতে পৌঁছায় তখন সেগুলো  পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং বায়ুমন্ডলের সাথে তার প্রতিক্রিয়া ঘটায় এবং পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের অণু-পরমাণুকে আঘাত করে। ফলে  সেই চার্জিত কণাগুলো বায়ুমন্ডলের অণু-পরমাণুগুলোকে তখন আন্দোলিত করে উজ্জ্বল করে তোলে।পরমাণু আন্দোলিত হওয়ার অর্থ হল এই যে, যেহেতু পরমাণু নিউক্লিয়াস এবং নিউক্লিয়াসকে আবর্তনকৃত ইলেক্ট্রন দ্বারা গঠিত তাই যখন সূর্য থেকে আগত চার্জিত কণা বায়ুমন্ডলের পরমাণুকে আঘাত করে তখন ইলেক্ট্রনগুলো উচ্চ শক্তিস্তরে (নিউক্লিয়াস থেকে আপেক্ষিকভাবে অনেকদূরে) ঘুরতে শুরু করে। তারপর যখন আবার কোনো ইলেক্ট্রন নিম্ন শক্তিস্তরে চলে আসে তখন সেটি ফোটন বা আলোতে পরিণত হয়।

অরোরসগুলি কেবল পৃথিবীতেই নয়,আমাদের সৌরজগতে যেমন বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুনেও দেখা যায়। এদের প্রত্যেকের ঘন বায়ুমণ্ডল এবং শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্র রয়েছে এবং প্রত্যেকটির অরোর রয়েছে - যদিও এই অরোরগুলি পৃথক অবস্থার অধীনে গঠিত হয়, যদিও তারা পৃথিবীর থেকে কিছুটা আলাদা।

অরোরাতে যা ঘটে তেমনটি ঘটে নিয়নের বাতিতেও। নিয়ন টিউবের মধ্যে নিয়ন গ্যাসের পরমাণুগুলোকে আন্দোলিত করবার জন্য ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ। তাই নিয়নের বাতিগুলো এরকম উচ্চ মানের রঙ্গিন আলো দেয়। অরোরাও ঠিক এভাবে কাজ করে-তবে এটি আরো বড় মাত্রায় হয়। অরোরাগুলো মাঝে মাঝে আলোর পর্দার মতো দেখায়। তবে এরা গোলাকার অথবা সর্পিল বা বাঁকানোও হতে পারে। বেশিরভাগ অরোরাতে সবুজ রঙ এবং গোলাপী রঙ দেখা যায়। তবে অনেকসময় সেগুলি লাল রঙ বা বেগুনী রঙেরও হতে পারে।

এই অরোরা সাধারণত আমরা দেখতে পাই দক্ষিণ ও উত্তরের দেশগুলোতে যেমন কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, গ্রীনল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে অরোরার দেখা মেলে। মানব ইতিহাস জুড়ে অরোরার রঙ গুলো রহস্যময়। বিভিন্ন মাইথোলোজিতে বিভিন্ন কুসংস্কার 

উল্লেখ করা হয়েছে এই নিয়ে। তবে বিজ্ঞান বলে আমাদের বায়ুমন্ডলের গ্যাসগুলোই হলো অরোরার বিভিন্ন রঙের কারণ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে অরোরার সবুজ রঙের কারণ হলো অক্সিজেন আবার অরোরার লাল এবং নীল রঙের জন্য দায়ী হলো নাইট্রোজেন গ্যাস।

১৬১৬ সালের প্রথমদিকে জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও গ্যালিলি পৌরাণিক রোমীয় দেবী অরোরার নাম ও উত্তর বায়ুর গ্রীক নাম বোরিয়াস নাম ধরে এগুলি বর্ণনা করার জন্য অরোরা বোরিয়ালিস নামটি ব্যবহার করেছিলেন।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours