রমা চক্রবর্তী, শিক্ষিকা, আবৃত্তিকার ও ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

দেখতে দেখতে দুর্গাপুজো তো চলছে পাঁজি মতে। আজ মহাঅষ্টমী। এবছর খুব নিরানন্দের মধ্যেই" মা" এলেন। একে তো করোণা আবহে পৃথিবী ওলট পালট হয়ে গেলো, বহু মানুষ কর্ম হারিয়েছে, অনেকেই অর্ধবেতনে কাজ করে চলেছে শুধু পরিবারের মুখে একটুখানি অন্ন দেবার আশায়। তবু পুজো হচ্ছে হয়ে চলেছে। 

এবছর তো আমরা ভেবেই নিয়েছিলাম হয়তো অনেক পুজোই ঘট স্থাপনে হবে, আবার নাও হতে পারে। সকলেরই ধারণা ছিল যে বড় পুজো কমিটিগুলো সামান্য ভাবে পুজো করবে এবং তার পাশাপাশি মানুষের সেবায় তারা সাহায্য করবে। 

সবথেকে বড় প্রশ্ন ছিল পুষ্পাজ্ঞলী এবং সিঁদুর খেলা প্রসঙ্গে। কি করে এই গুলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সম্ভব?

ইতিমধ্যেই আমাদের পশ্চিমবঙ্গের দয়ালু মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন পুজো কমিটি গুলোকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। 

প্রথমদিকে আমরা সাধারণ মানুষেরা ভেবেছিলাম যে, যাক তাহলে মুখ্যমন্ত্রী মানুষের কথা ভেবেই এটা করেছেন। কারণ অনেক মানুষই কর্মহীন হয়ে গেছেন,তারা পুজোর চাঁদা দিতে পারবেন না। কিন্তু কিছুদিন পর বিষয়টা অন্যরকম লাগলো। 

কারণ ঐ পুজো কমিটি গুলো তাদের নির্দিষ্ট তালিকা অনুযায়ী পুজোর চাঁদা সংগ্রহ করছে তাদের স্বভাবগত অভ্যাসেই। 

তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মনে কি প্রশ্ন জাগবে না?----এই চাঁদা তুলেই যদি পুজো সম্ভব ছিলো তাহলে পঞ্চাশ হাজার টাকার অনুদানের কী প্রয়োজনীয়তা ছিল?

যদি এই টাকার অনুদান মুখ্যমন্ত্রী তাঁর তহবিল থেকে দিতে পারছেন তাহলে করোনা আবহে লকডাউনের সময় সমস্ত মানুষের কাছ থেকে মুখ্যমন্ত্রী তহবিলে অনুদান দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন কেন? কীসের প্রয়োজনে?যে টাকা মুখ্যমন্ত্রী তহবিলে অনুদান দেওয়া হয়েছে সে তো জনসাধারণের টাকা, সে টাকা দেওয়া হয়েছে গরীব মানুষের অন্ন-বস্ত্রের জন্য, পুজো কমিটি গুলোকে দেওয়ার জন্য নয়। 

এরপর আসি পুষ্পাজ্ঞলী ও সিঁদূর খেলায় সামাজিক দূরত্বের কথায়। দিন কয়েক আগে কলকাতা হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন যে পুষ্পাজ্ঞলী ও সিঁদূর খেলা হবে না। এ বিষয়ে অন্য কথা বলা মানে তো রাজনীতি এবং ধর্ম বিদ্বেষের কথা চলে আসবে। তাই সে বিষয়ে নাই বা গেলাম। 

কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রায় সমস্ত পুজো কমিটি গুলো তাদের সুবিধামতো প্রয়োজনমতো পুষ্পাজ্ঞলী অনুষ্ঠিত করলো অষ্টমী সকালে। আবার সিঁদুর খেলার ঘুর পথ ব্যবস্থাও অনেকটা পাকা। কিন্তু এসব দেখভাল করবার জন্য প্রশাসনে দায়িত্বে লোকের অভাব আছে নাকি উদ্যোগের অভাব আছে, কে জানে। নিন্দুকের ফিসফাস, প্রশাসন আসলে এক চোখে দেখেও অন্য চোখ বন্ধ রেখেছে। জিও পুজো। জিও প্রশাসন। জিও সিংহভাগ আমজনতা। তবে সাবধান। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ হাঁক দিল বলে ম্যাও ম্যাও। কোভিড বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে তো পুজো প্রেমিক থেকে প্রশাসন?

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours