রিঙ্কি সামন্ত, লেখিকা, কলকাতা:

অবশেষে বহু চর্চিত এবারের মতো দুর্গাপুজো পাঁজি মতে সমাপ্ত। তাই এই সমাগত লগ্নে শুভ বিজয়া দশমীর আবহে 'THE OFFNEWS' এর পক্ষ থেকে সকলকে জানাই বিজয়ার প্রীতি, শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে শ্বশুরবাড়ি কৈলাসে পাড়ি দেন দেবী দুর্গা। এই দিনই প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। পুরাণে মহিষাসুর বধের কাহিনী অনুযায়ী, মহিষাসুরের সঙ্গে টানা ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করেন দেবী দুর্গা। শ্রীচণ্ডীর কাহিনী অনুযায়ী সেই এক টানা যুদ্ধের পর শুক্লা দশমীতে দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন। সেই যুদ্ধে জয়লাভকেই চিহ্নিত করে বিজয়া দশমী। 

তবে, বিজয়া দশমীর দিন উত্তর ও মধ্য ভারতে আরেকটি উৎসব পালিত হয়, যার নাম দশেরা। দশেরা শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ দশহর থেকে। এই দশহর রাবণের মৃত্যুকে চিহ্নিত করে। রামায়ণ অনুসারে আশ্বিন মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে রাবণ বধ করেছিলেন রাম।  

অন্য দিকে এই দিনের কথা উল্লেখিত রয়েছে মহাভারতেও। ১২ বছর অজ্ঞাতবাসের শেষে আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে পাণ্ডবরা শমীবৃক্ষে তাঁদের লুকানো অস্ত্র পুনরুদ্ধার করেন এবং ছদ্মবেশ ছেড়ে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় ঘোষণা করেন।

"যাও উড়ে নীলকণ্ঠ পাখি, যাও সেই কৈলাসে,

দাও গো সংবাদ তুমি, উমা বুঝি ওই আসে।'--

আজও নীলকণ্ঠ পাখির ওড়ানোর প্রথা চালু রয়েছে।

লঙ্কাজয়ের পর রামের ওপর ব্রহ্মহত্যার পাপ লাগে। এরপর লক্ষ্মণের সঙ্গে মিলে রাম শিবের আরাধনা করেন ও ব্রাহ্মণ হত্যার পাপ থেকে মুক্ত হন। সে সময় শিব নীলকণ্ঠ পাখির রূপ ধারণ করে মর্ত্যে এসেছিলেন।

নীলকণ্ঠ অর্থাৎ, যার গলা নীল। সমুদ্র মন্থনের সময় নির্গত হলাহল পান করেছিলেন শিব। সেই বিষকে নিজের কণ্ঠে ধারণ করার ফলে, জ্বালায় মহাদেবের কণ্ঠ নীল বর্ণ হয়ে যায়। তাই শিবের আর এক নাম নীলকণ্ঠ। নীলকণ্ঠকে পৃথিবীতে শিবের প্রতিনিধি ও স্বরূপ, দুই-ই মনে করা হয়। জনশ্রুতি অনুযায়ী, নীলকণ্ঠ রূপ ধারণ করেই শিব মর্ত্যে বিচরণ করেন।

নীলকণ্ঠ পাখিকে কৃষকমিত্রও বলা হয়। খেত-খামারে ফসলে লেগে থাকা কীট খেয়ে কৃষকদের সহায়তা করে নীলকণ্ঠ পাখি।

বর্তমানে পাখি ধরা নিষিদ্ধ হওয়ায়, পাখী ওড়ানোর রীতি পালন সম্ভব হয় না।  অনেকেই নীলকণ্ঠ পাখি আঁকা ফানুস উড়িয়ে থাকেন।

দেবীর মৃন্ময়ী মুর্তি আজ জলে বিসর্জন করে  নিরাকার স্বরূপে ফিরে যেতে বলা হয়। তাই এ বিসর্জন নয়, আবাহন। মন-মন্দিরে হিংসা, ক্রোধ, গর্ব, নিন্দার অসুরের নিধন হয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠা, জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আপন করে ভাবার আকুতি, আত্ম-উত্তরণ ঘটুক।

"ওঁ গচ্ছ দেবী পরং স্হানং যত্র দেব নিরঞ্জনঃ"। অর্থ্যৎ প্রতিমা থেকে ঘটে, ঘট থেকে ভক্তের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উমা মা আমাদের চেতনা ও শুভবুদ্ধির বিকাশ করুন। অশুভ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবজাতির প্রচেষ্টা ও শুভশক্তির জয় হোক।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours